ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজ্ঞান শিক্ষায় ভীতি!

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ১৪ জুন ২০১৯

 বিজ্ঞান শিক্ষায় ভীতি!

দেশে গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে শীর্ষক সংবাদটি উদ্বেগজনক বৈকি। বাস্তবতা হলো আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক অবহিত না হলে আমরা কোনদিনও একটি বিজ্ঞানমনস্ক এবং সংস্কারমুক্ত জাতি হিসেবে গড়ে উঠে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারব না। মনে রাখতে হবে যে, বর্তমানে যখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমণ করছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, তখন আর বিজ্ঞান শিক্ষায় আমাদের পিছিয়ে পড়া বা থাকার আদৌ কোন সুযোগ নেই। এও মনে রাখতে হবে যে, বর্তমান সরকার একটি আধুনিক উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ব্যাপারে সর্বদাই আগ্রহী ও উদ্যোগী। বিজ্ঞান গবেষণার ব্যাপারেও সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে পাশে দাঁড়ায় বিজ্ঞানীদের। চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৭ লাখ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে মানবিক শাখার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪০, যা মোট শিক্ষার্থীর ৪৫ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর হার ৩১ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং বাণিজ্য শাখায় ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত কয়েক বছর ধরেই এই প্রবণতা লক্ষণীয়, যা প্রযোজ্য উচ্চ মাধমিকেও। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে সিলেবাসের মাত্রাতিরিক্ত চাপ, ব্যয়ভার, সব স্কুল-কলেজে ভাল বিজ্ঞানের শিক্ষকসহ গবেষণাগার না থাকা, কোচিংনির্ভরতা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনীহা, তদুপরি সীমিত চাকরির বাজারের কারণে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে না। গ্রাম ও শহরে শিক্ষা বৈষম্যও দৃশ্যমান। শিক্ষামন্ত্রীও প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন বিষয়টি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগে আকৃষ্ট করার জন্য প্রণোদনাসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি সবিশেষ জোর দেয়া প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষার ওপর। এবারে উচ্চ মাধ্যমিকে কোন দৌড়ঝাঁপ ও বিড়ম্বনা ছাড়াই রাজধানীসহ সারাদেশে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্র জমা পড়েছে ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৮২৫। উল্লেখ্য, মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের মধ্যে এবার দুই লাখ ৪২ হাজার ৪২ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে আবেদন করেনি। গত বছর প্রথম ধাপে আবেদনের বাইরে ছিল প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী। সঙ্গত কারণেই যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হলো- মাধ্যমিক পাস করার পর প্রতিবছর এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে কেন? তারা কোথায় যায় বা কি করে? জীবন-জীবিকাইবা নির্বাহ করে কিভাবে? নিঃসন্দেহে ঝরে পড়াদের বিশাল একটা অংশ থেকে যায় বেকার ও কর্মহীন হয়ে। তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাববার অবকাশ আছে বৈকি। এই সমস্যার সমাধানে দেশে বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। গ্রামগঞ্জে আজকাল অধিক মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায় না বললেই চলে। অথচ কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্যচাষ, মৎস ও গবাদিপশুর খামার শিল্পকে মর্যাদাবান পেশা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হলে শিক্ষিত বেকাররাও বাধ্য হবে এ পেশাকে অবলম্বন করতে। এর জন্য আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কৃষিকাজ, চাষাবাদ ও খামার শিল্প সম্পর্কে সবিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সারাদেশে গড়ে তোলার অবকাশ রয়েছে। খাদ্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এদিকে নজর দেবে বলেই প্রত্যাশা।
×