ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চালু হলো পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ॥ ঈদে খুশির বার্তা

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২৬ মে ২০১৯

চালু হলো পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ॥ ঈদে খুশির বার্তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার দেশের দ্বিতীয় নন স্টপ ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস চালু করল বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেনটি ঢাকা থেকে সরাসরি পঞ্চগড়ে ও পঞ্চগড় থেকে সরাসরি ঢাকায় যাতায়াত করবে। এই এক জোড়া ট্রেন চালুর মাধ্যমে এবারের ঈদে পঞ্চগড়বাসীর জন্য এক নতুন খুশির বার্তা নিয়ে এলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ট্রেনটির শুভ উদ্বোধন করেন। অপরপ্রান্ত পঞ্চগড়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি উপস্থিত ছিলেন। কমলাপুর থেকে ছাড়ার পর পথিমধ্যে মাত্র চারটি স্টেশনে এই ট্রেনটি থামবে। কমলাপুরের স্টেশনগুলো হচ্ছে এয়ারপোর্ট স্টেশন, পার্বতীপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এরপর সরাসরি পঞ্চগড় থামবে। আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন নতুন কোচের এই ট্রেনটির ইঞ্জিনও নতুন বলে জানা গেছে। অন্যান্য ট্রেন সপ্তাহে একদিন বিরতি দিলেও বিশেষ এই ট্রেনটি কোনদিন বিরতি ছাড়াই সপ্তাহে সাত দিনই চলাচল করবে। ফলে ঢাকা থেকে সরাসরি পঞ্চগড়ে ও উক্ত এলাকায় যাতায়াতকারীদের জন্য বিশেষ প্রাপ্তি হিসেবে যোগ হয়েছে এই ট্রেনটি। ফলে অনেক কম সময়ে এই ট্রেন দিয়ে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে। রেলসূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ট্রেনটি ছাড়বে রাত ১২টা ১০ মিনিটে। পঞ্চগড়ে পৌঁছানোর সময় ধরা হয়েছে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে। আবার পঞ্চগড় থেকে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে আসবে ঢাকার উদ্দেশে। কমলাপুরে পৌঁছানোর সময় ধরা হয়েছে রাত ১০টা ৩৫ মিনিট। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে বিমানবন্দর স্টেশনে সামান্য বিরতি দেবে। তার পার্বতীপুর পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে। এরপর দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিরতি দিয়ে পঞ্চগড় স্টেশনে পৌঁছাবে। ট্রেনটির ভাড়া আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে। ভাড়া ধরা হয়েছে প্রতিটি শোভন চেয়ার ৫৫০ টাকা, ¯িœগ্ধা ১০৫৩, এসি সিট ১২৬৩ এবং এসি বার্থ ১৮১২ টাকা। রেলসূত্র জানায়, ট্রেনটিতে চলাচলের জন্য প্রাথমিকভাবে আনুপাতিক হারে পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে ৩০ শতাংশ করে এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ২৫ শতাংশ ও পার্বতীপুরে ১৫ শতাংশ আসন বরাদ্দ থাকবে। যাত্রীর চাহিদা বিবেচনায় পরে আসন কমবেশি করা হবে বলে জানা গেছে। রেল কর্তৃপক্ষ এই ট্রেনটি থেকে বছরে ৪০ কোটি টাকা আয়ের আশা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ট্রেনটিতে যাত্রীদের খাবারের জন্য রেলওয়ের নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিস বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং ও ট্যুরিজম সেল কর্তৃক সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে। রেলভবন সূত্র জানায়, যাত্রীদের উন্নতমানের খাবার প্রদানের স্বার্থে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এই ক্যাটারিং সার্ভিসটি দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নতুন করে চালু করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রেলওয়ের উন্নয়নে গত ১০ বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং আরও ৪৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গত দশ বছর সময়ের মধ্যে ৩শ’ ৭১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ২শ’ ৪৮ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইন ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হয়েছে। অপরদিকে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটারের বেশি পুরনো রেলপথ মেরামত বা সংস্কার করা হয়েছে। ৬২টি বন্ধ রেলস্টেশন চালু করা হয়েছে ৯৩টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৩শ’ ২৯টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ, ৬৫৮টি রেলসেতু সংস্কার করা হয়েছে। দশ বছরে ৪৬টি নতুন লোকোমেটিভ কেনা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩শ’ ২০টি যাত্রীবাহী কোচ কেনা হয়েছে এবং আরও ৬শ’ ৫০টি কোচ কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সময়ে মালবাহী ওয়াগন কেনা হয়েছে ৫শ’ ১৬টি। বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে রেলে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এগুলো হলো পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-কক্সবাজার-রামু-ঘুমধুম রেল লাইন স্থাপন প্রকল্প। এ দুটি প্রকল্প অতিদ্রুত কাজ চলমান রয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরপরই পঞ্চগড় থেকে ঢাকা পথে রওনা হয় ৮৯৬ আসনের পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনটি চালুর পর বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেল চালুর পর বিদ্যুত চালিত ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখনও ডিজেলচালিত ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার মেট্রোরেলের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিদ্যুতচালিত ট্রেনের ব্যবহার শুরু হবে। এরপর দূরপাল্লায়ও বিদ্যুতচালিত ট্রেন চালু করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মেট্রোরেল যেমন চালু করতে যাচ্ছি, সেই সঙ্গে আমরা বিদ্যুত চালিত ট্রেন, যা একান্তভাবে পরিবেশবান্ধব, সেই বিদ্যুত চালিত ট্রেনও চালু করব। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। রেলের ডিজিটাইজেশন, দেশের দক্ষিণবঙ্গে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলসংযোগ স্থাপন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু করা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে যমুনার ওপর একটি রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগসহ নানা ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
×