ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরের মুড়ি গ্রাম ॥ এক নামে যার পরিচয়

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১৮ মে ২০১৯

 নাটোরের মুড়ি গ্রাম ॥ এক নামে যার পরিচয়

নাটোর সদর উপজেলার গোয়ালদিঘি কৃষ্ণপুর গ্রাম এখন মুড়ি গ্রাম নামে পরিচিত। এখানকার বাসিন্দারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রাকৃতিকভাবে মুড়ি ভেজে বিক্রি করতে তাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। কোন রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে এবং ঐতিহ্যগতভাবে তৈরি এই মুড়ি সুখ্যাতি এনে দিয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের। বর্তমানে মুড়ি ভেজে বিক্রি কাজের সঙ্গে জড়িত এই গ্রামের প্রায় ৩৫০টি পরিবার। পবিত্র রমজানে মাসে মুড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় পুরো মাসই তারা এই কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। নারী পুরুষ উভয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুড়ি ভাজার কাজে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এখানকার ঐতিহ্যবাহী মুড়ির চাহিদা বেড়েই চলেছে। এর আগে এই গ্রামের অনেকেরই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। তবে এই পেশায় এসে অনেকের দুঃখ ঘুচেছে। এখানকার মুড়ি রাসায়নিক মিশ্রণের তৈরি মুড়ি অপেক্ষা অনেক বেশি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। প্রতিটি পরিবার প্রতিদিন দুই মণ মুড়ি ভাজতে পারেন। এতে খরচ হয় ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা। অন্যদিকে পাইকারি বিক্রেতার কাছে প্রতি মণ মুড়ি বিক্রি করেন ৪ হাজার থেকে ৪২শ’ টাকায়। মুড়ি উৎপাদনকারী এখানকার অনেকেই স্থানীয় এনজিও কিংবা সুদ কারবারীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে এ ব্যবসা করছেন। রাসায়নিক মিশ্রণে তৈরি মুড়ির চাইতে স্বাস্থ্য সচেতনরা প্রাকৃতিকভাবে সিদ্ধ চালের ভাজা মুড়ি খেতে পরামর্শ দেন। সারা বছরই এখানে মুড়ি উৎপাদন করা হলেও পবিত্র রমজান মাসে এর উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন কৃষ্ণপুর ডালসড়ক বাজারে ২শ’ মণ মুড়ি ক্রয়-বিক্রয় হয়। ঢাকা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে নিয়মিত মুড়ি ক্রয় করছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেশিনে তৈরী রাসায়নিক মুড়ি আকর্ষণীয় মোড়কে ও সিষ্টেমে খুব দ্রুত বাজারে জায়গা করে নেয়। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে হাতে তৈরি মুড়ির বাজারজাতকরণে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এই ঐতিহ্যবাহী মুড়ি ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারী সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন এখানকার অধিকাংশ মুড়ি উৎপাদনকারীরা। ৩৪ বছর বয়সী সালমা বেগম জানান, তার সংসারে নারী-পুরুষ এক সঙ্গে মুড়ি তৈরির কাজ করে উপার্জনের চাকা সচল রেখেছেন। মুড়ি ভাজাটা কঠিন কাজ হলেও মুনাফা পেয়ে তারা খুশি। আগে আমাদের অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হতো। কিন্তু এখন প্রাকৃতিকভাবে মুড়ি ভেজে তা বিক্রি করে যথেষ্ট স্বাবলম্বী বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের উপ-পরিচালক দিলরুবা দীপ্তি জানান, ভবিষ্যতে এখানকার মুড়ি শিল্পকে এগিয়ে নিতে উৎপাদনকারীদের জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। -কালিদাস রায়, নাটোর থেকে
×