ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বিরোধী দলের সমালোচনায় আমরা কোন বাধা দেব না

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

সংসদে বিরোধী দলের সমালোচনায় আমরা কোন বাধা দেব না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গণতান্ত্রিক ধারায় সমালোচনা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি এইটুকু আশ্বাস দিতে পারি যে, এই সমালোচনা আমাদের বিরোধী দলে যারা আছেন, তারা যথাযথভাবে করতে পারবেন। এখানে আমরা কোন বাধা সৃষ্টি করব না। কোনদিন বাধা আমরা দেইনি, দেব না। বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে পুনর্নির্বাচিত স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং পরে সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত অনেক চড়াই-উৎড়াই পার হয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। কারণ এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ, মা-বোনেরা, প্রথম যারা ভোটার তারা, তরুণ ভোটাররা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। একটি সফল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি বলেন, সংসদ নেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব সংসদের সকল সদস্যের অধিকার যেমন দেখা এবং সেই সঙ্গে আপনি স্পীকার হিসেবে সকল সদস্য যাতে সমানভাবে সুযোগ পায়, এখানে সরকারী দল, বিরোধী দল সকলেই যেন পায় অবশ্যই আপনি সেটা দেখবেন। এ ব্যাপারে আমরা আপনাকে সব রকমের সহযোগিতা করব। সংসদ নেতা বলেন, গণতন্ত্রই একটি দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় আর তা আজ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রমাণিত সত্য। আজ আমরা আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে গিয়ে আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশের জনগণকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন, যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, সেই ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা আমরা ইনশাল্লাহ গড়ে তুলব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যেহেতু ভোট দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচিত করে এবং আমরা যারা প্রতিনিধিরা বসেছি সকলেই কিন্তু আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এখানে আমরা আমাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আমাদের ভোটাররা, যারা নির্বাচিত করে এখানে পাঠিয়েছে তাদের সার্বিক উন্নয়ন, তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দেশে যেন একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে। বাংলাদেশ জঙ্গীমুক্ত, মাদকমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ও একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ যেন গড়ে ওঠে এবং দেশের মানুষের জীবনে যেন শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় সেটাই আমাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে একটা চমৎকার পরিবেশে সংসদ পরিচালিত হয়েছিল বলেই আমরা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলাম। আবার আমরা যেহেতু সংসদে নির্বাচিত হয়ে এসেছি অবশ্যই জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর এ ব্যাপারে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে। তিনি বলেন, এই সংসদে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আজকে সেই সংসদ আপনাকে স্পীকার হিসেবে নির্বাচিত করেছে এবং ডেপুটি স্পীকার হিসেবে আমাদের ফজলে রাব্বী সাহেবকে নির্বাচিত করেছে। আমি আপনাকে এবং ডেপুটি স্পীকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। স্পীকারকে অভিনন্দন জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু ও বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের স্পীকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশবাসী প্রত্যাশা করে সংসদ কার্যকর হবে। বিরোধী দলের আমাদের আসন সংখ্যা কম। তবে এটা সংসদকে কার্যকর করতে কোন বাধা হবে বলে মনে করি না। এজন্য আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, জনগণের পক্ষ থেকে যেসব কথা আমরা সংসদে বলতে চাই তা বলতে দিতে হবে। এতে জনগণ সংসদের দিকে আগ্রহী হবে ও সংসদ কার্যকর হবে। বিরোধী দলের যৌক্তিক কথা যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে সংসদ প্রাণবন্ত ও কার্যকর হবে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ স্পীকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি তিনবার স্পীকার হয়েছেন। দক্ষতার সঙ্গে দেশে-বিদেশে স্পীকার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। আপনি বাংলাদেশের সকল মানুষের কাছে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। অতীতে যেভাবে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে সংসদ পরিচালনা করেছেন, আগামীতেও করবেন বলে প্রতাশা করি। শুভেচ্ছা জানিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, সংসদে আসার প্রথম দিন হিসেবে আমরা আনন্দিত আবার কিছুটা বিব্রতও। প্রতিনিয়ত আমাদের শুনতে হচ্ছে এই সংসদে আপনাদের ভূমিকা কি হবে। আগে বলেছি সরকারের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসা করব আর জনহিতবিরোধী কাজের বিরোধিতা করব। আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার যে অঙ্গীকার করেছে তা পালন করতে গিয়ে আমরা যদি কোন বক্তব্য দিতে চাই স্পীকার হিসেবে আপনি সে সুযোগ দেবেন বলে আশা করি। জাসদের হাসানুল হক ইনু স্পীকারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা রাজনৈতিক শান্তি আনতে সক্ষম হয়েছি। গত ১০ বছরে আগুন সন্ত্রাসের মতো অনেক জঞ্জাল পরিষ্কার হয়েছে। তবে আরও কিছু বাকি রয়েছে। এজন্য আপনার নেতৃত্ব দরকার। যে দক্ষতা, নেতৃত্ব ও দৃঢ়তার সঙ্গে অতীতে সংসদ পরিচালনা করেছেন ভবিষ্যতে সে ধরনের সংসদ প্রতিষ্ঠায় আপনাকে নেতৃত্ব দিতে হবে। শোক প্রস্তাবের ওপর অলোচনায় শেখ হাসিনা ॥ শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, সৈয়দ আশরাফকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখতাম। সৈয়দ আশরাফ অত্যন্ত সৎ ও মেধাবী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। সে আমার পরিবারের সদস্যেদের মতো ছিল, আমাকে বড় বোনের মতো শ্রদ্ধা করত। প্রতিটি ক্ষেত্রে সে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। রাজনৈতিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ মেধাসম্পন্ন নেতা ছিল সৈয়দ আশরাফ। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল সৈয়দ আশরাফ। আজ আমরা যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি সেক্ষেত্রে সৈয়দ আশরাফেরও বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। অসম্ভব সোজা সরল ছিল সে। ভাইদের হারিয়ে যে ক’জনকে ভাইয়ের মতো পেয়েছিলাম, সৈয়দ আশরাফ তাঁদের একজন। তাঁর বাবা দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সৈয়দ আশরাফও দীর্ঘদিন মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু সবসময় অসম্ভব সৎ জীবন-যাপন করেছে। ওর টাকা নেই, পয়সা নেই। কষ্ট করে চলতে হতো। তাঁর চিকিৎসার জন্য যা যা করার আমি তা করেছি। তাঁর মতো একজন প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানী রাজনীতিককের চলে যাওয়ার ক্ষতি কোনদিন পূরণ হবার নয়। তাঁর মৃত্যৃ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের এবং দেশের জন্য সৈয়দ আশরাফের চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি হলো। ময়মনসিংহবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সৈয়দ আশরাফের সততা ও নিষ্ঠার কারণে অসুস্থতা সত্ত্বেও তাঁকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে ময়মনসিংহবাসী। তার বোন ডাঃ লিপিকে উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছি। আমরা আশা করি, সৈয়দ আশরাফের স্মৃতি ধরে রাখতে ডাঃ লিপিকে ভোট দিয়ে ময়মনসিংহবাসী নির্বাচিত করবেন। শোক প্রস্তাবের ওপর আরও আলোচনা করেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এবং সাবেক বিরোধী দলের নেতা জাতীয় পার্টির বেগম রওশন এরশাদ।
×