ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ারসেরা র‌্যাঙ্কিং ১৬ নম্বরে এ ডানহাতি অফস্পিনার

মিরাজের সাফল্যের নেপথ্যে!

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

মিরাজের সাফল্যের নেপথ্যে!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অভিষেকেই চমক দেখিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছেন ‘ডানহাতি অফস্পিনার’ হিসেবে। তবে বরাবরই নিজেকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার দাবি করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এর পেছনের কারণ, যখন অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে খেলেছেন তখন মিডলঅর্ডারে দারুণ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও কিছুটা অবদান রাখতেন। সে কারণে ২০১৬ যুব বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন। তবে জাতীয় দলে প্রবেশের পর হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর বোলার। টিম কম্বিনেশনের কারণে অধিকাংশ সময়ই ৮ নম্বরে ব্যাট করতে হয়েছে, তাই নিজের ব্যাটসম্যান পরিচয়টা সেভাবে তুলে ধরতে পারেননি। কিন্তু বল হাতে নিয়মিতই সাফল্য পেয়েছেন ২১ বছর বয়সী এ তরুণ। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে চার কোয়ালিটি স্পিনার নিয়ে খেললেও দুই টেস্টে মোট ১৫ উইকেট নিয়ে সফলতম ছিলেন মিরাজ। আর সে কারণে ক্যারিয়ারসেরা আইসিসি টেস্ট বোলিং র‌্যাঙ্কিং ১৬ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। দলের অন্যতম অপরিহার্য স্পিন শক্তি, অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও প্রশংসা করেছেন এ তরুণের। আর বোলিং সাফল্যের পেছনে থাকা রহস্যটা নিজেই উন্মোচন করেছেন মিরাজ। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক যখন হয়েছে তখনও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরেননি এবং অন্য কোন ফরমেটেও জাতীয় দলে ডাক পাননি। সেই মিরাজই পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে নাজেহাল করেছেন তার অফস্পিনে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডানহাতি অফস্পিনার হিসেবে সোহাগ গাজীকে পেয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু বোলিং এ্যাকশনের ত্রুটির জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই ছিটকে পড়েছিলেন দারুণ প্রতিভাধর গাজী। এরপর সেই শূন্যতা নিজের অভিষেক সিরিজেই পূরণ করেন মিরাজ। অভিষেক সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। তারপর থেকেই নিয়মিত তিনি টেস্ট দলে। মাঝে অন্য দুই ফরমেট টি২০ ও ওয়ানডেতেও অভিষেক হয়েছে তার। বড় দলগুলো পেলেই যেন বেশি ঝলসে ওঠেন এ অলরাউন্ডার। এবার একসময়ের ক্রিকেট পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেয়ে বল হাতে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৩ উইকেট পেয়েছিলেন। কারণ ফর্মের তুঙ্গে থাকা তাইজুল ইসলাম ও নতুন মুখ নাঈম হাসান ক্যারিশমা দেখানোয় সুযোগটা কম পেয়েছেন। তবে দ্বিতীয় টেস্টে আর কাউকে সুযোগ দেননি। টেস্ট ক্যারিয়ারে ইনিংসসেরা বোলিং করে প্রথম ইনিংসে তুলে নেন ৭ উইকেট। আর দ্বিতীয় ইনিংসে দখল করেন ৫ উইকেট। সবমিলিয়ে ম্যাচে ১১৭ রানে ১২ উইকেট নিয়ে টেস্টে কোন বাংলাদেশীর সেরা বোলিংয়ের যে রেকর্ড ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গড়েছিলেন (১৫৯ রানে ১২ উইকেট) সেটিকে পেছনে ফেলেন। তার এমন নৈপুণ্যে প্রথমবার বাংলাদেশ দল কোন প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর স্বাদ পেয়েছে। এ কারণে অধিনায়ক সাকিব বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় ও যদি ওর মাথাটা সুস্থির করে রাখে, পরিকল্পনাটা সাধারণ রাখে তাহলে ও আরও ভাল বোলিং করতে পারবে। অসাধারণ বোলিং করেছে অবশ্যই। প্রথম ইনিংসের বোলিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা যেহেতু পাঁচ শ’ রান করেছিলাম, একটা বড় এ্যাডভানটেজ ছিল। আমরা কখনই চিন্তা করিনি এত কম রানে ওদের অলআউট করতে পারব। ওই বিশ্বাসটা ওর বোলিংয়ের কারণেই এসেছে। ফার্স্ট ইনিংসে সাত উইকেট, ওখানেই আসলে ম্যাচটা সেট করে দিয়েছে।’ কিছুদিন আগে মুশফিকুর রহীমও ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন মিরাজের। সে সময় বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের বড় তারকা মিরাজ!’ অনেকেই তাকে ক্যারিয়ারের শুরুতে ‘সাকিবের’ উপযুক্ত উত্তরসূরি হিসেবে বলাবলি করছিলেন। তবে ব্যাট হাতে সুযোগটা কমই পেয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। ৩৪ ইনিংসের টেস্ট ক্যারিয়ারে একবার ৫ ও ৬ নম্বরে, দুইবার ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। এছাড়া অধিকাংশ সময়ই ৮ নম্বরে এবং কখনও কখনও ৯ নম্বরেও ব্যাট করতে হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে ওপেনিং করে চমকে দিয়েছিলেন দারুণ ব্যাটিং করে। এ কারণেই অফস্পিনার পরিচয়টাতেই এগিয়ে মিরাজ এবং একের পর এক বিস্ময়ের জন্মও দিয়ে চলেছেন ঘূর্ণি বলে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সফল হলেও বাংলাদেশী বোলারদের অনেক ভুগিয়েছেন শিমরন হেটমায়ার। ৪ ইনিংসে ২২২ রান করা এ মিডলঅর্ডার একাই লড়েছেন দুই টেস্টের সিরিজে। তবে চারবারই তার উইকেট তুলে নিয়েছেন মিরাজ। এর রহস্য নিয়ে তরুণ এ অফস্পিনার বলেন, ‘ওর সঙ্গে আমি অনেক খেলেছি। দুইটা যুব বিশ্বকাপ খেলেছি, তারপর জাতীয় দলে ঢুকেও খেললাম। ওর সম্পর্কে অনেক কিছুই আমি জানি। কাজেই ওর সময় পরিকল্পনা করা সহজ হয়েছে। এজন্য সাফল্যও এসেছে।’ এই টেস্টেও মিরাজের পাশাপাশি ছিলেন তিন ভয়াল স্পিনারÑ তাইজুল, সাকিব ও নাঈম। কিন্তু মিরাজ সবাইকে ম্লান করে দিয়েছেন। এর রহস্যভেদ করতে গিয়ে মিরাজ বলেন, ‘ভাল জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করেছি। এইজন্য উইকেট পেয়েছি। যদি ভাল জায়গায় বল না করতাম তাহলে উইকেট পেতাম না, রানও হয়ে যেত। এখন অভিজ্ঞতা বেড়েছে, ভাইদের সঙ্গে কথা বলে শিখেছিও অনেক- কোন উইকেটে কিভাবে কি করলে ভাল হবে।’ সিরিজ শুরুর আগে ২৮তম র‌্যাঙ্কিং নিয়ে শুরুর পর চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে ৩০ নম্বরে নেমে গিয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের ১২ উইকেট শিকার তার উন্নতি ঘটিয়েছে ১৪ ধাপ। তাই ক্যারিয়ারসেরা ১৬ নম্বর বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি।
×