ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেস্টে সর্বাধিক ৮ সেঞ্চুরির মালিক তামিমের রেকর্ড স্পর্শ, চলতি বছর সর্বাধিক ৪ শতকের রেকর্ডে ছুঁয়েছেন কোহলিকে, একই ভেন্যুতে ৬ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে পেছনে ফেলেছেন টেন্ডুলকর, গাভাস্কার, সোবার্সদের

দুর্দান্ত শতকে রেকর্ড মুমিনুলের

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

দুর্দান্ত শতকে রেকর্ড মুমিনুলের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মাঝে মাত্র ১০ দিন, এর মধ্যে ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আরেকটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুমিনুল হক সৌরভ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলেছিলেন ১৬১ রানের ইনিংস। এবার সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথমদিনই খেললেন ১২০ রানের ইনিংস। ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি পেয়ে তিনি দেশের পক্ষে সর্বাধিক ৮ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া তামিম ইকবালকে ছুঁয়ে ফেলেছেন কম ম্যাচ খেলে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই ৬টি শতক পেয়েছেন যা নির্দিষ্ট কোন ভেন্যুতে সেঞ্চুরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের রেকর্ড। এক্ষেত্রে তার পেছনে পড়ে গেছেন কিংবদন্তি স্যার গ্যারি সোবার্স, শচীন টেন্ডুলকর, সুনীল গাভাস্কার ও জ্যাক হবসরা। সাগরিকার এ মাঠে সর্বাধিক রান করার তালিকায়ও তামিমকে হটিয়ে দুই নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। এখন শুধু মুশফিকুর রহীম তার ওপরে। চলতি বছরে টেস্টে বাংলাদেশ দলের অবস্থা বাজে হলেও মুমিনুল ৪টি শতক পেয়েছেন। শুধু ভারতের বিরাট কোহলির এ বছর ৪ সেঞ্চুরি আছে। দারুণ এই ইনিংস ওয়ানডে মেজাজে খেলে দলকেও দিনশেষে ভাল সংগ্রহ পেতে বড় অবদান রেখেছেন ২৭ বছর বয়সী এ বাঁহাতি। সাগরিকার উইকেট সবসময়ই বেশ পয়মন্ত হয়ে এসেছে মুমিনুলের জন্য। এ মাঠেই তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। সে দিনের ১৮১ রানের ইনিংসটি এখন পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারসেরা। বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নামার আগে পর্যন্ত সাগরিকায় ৫টি সেঞ্চুরি ছিল তার। যখন ব্যাটিংয়ে এদিন নেমেছিলেন, বলটা তখনও একেবারে নতুন। ইনিংসের মাত্র ৩ বল হতেই ওপেনার সৌম্য সরকার সাজঘরে ফিরেছেন। তবে এরপরও স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাট চালিয়েছেন মুমিনুল। প্রথম থেকেই ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন চিরাচেনা সাবলীল ভঙ্গিতে। আর তাতে প্রাথমিক ধাক্কাটা আর থাকেনি। ওপেনার ইমরুল কায়েস যখন ৪৪ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন ততক্ষণে উদ্বোধনী জুটিতে ১০৪ রান যোগ হয়েছে। আর মুমিনুল রকেটের গতিতে পেয়ে গেছেন ফিফটি। মাত্র ৬৯ বলে ৭ চারে তিনি অর্ধশতক পেয়ে যান। তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে আরেকটি ৪৮ রানের জুটি। মিঠুনও তাকে ছেড়ে গেছেন উইকেটে। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আরও ৬৯ রান যোগ করে দলের ইনিংসটিকে দারুণ চেহারা দিয়েছেন। এর মধ্যে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরিও আদায় করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে তিন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতদিন এককভাবে সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক ছিলেন ওপেনার তামিম। কিন্তু গত সিরিজের মতো এ সিরিজেও ইনজুরির কারণে খেলছেন না ফর্মের তুঙ্গে থাকা বাঁহাতি এই ওপেনার। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এবার তামিমের টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন মুমিনুল। ২৯ বছর বয়সী তামিম গত ১০ বছরে ৫৬ টেস্ট খেলে করেছেন ৮ সেঞ্চুরি। কিন্তু তার সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাগ বসাতে মুমিনুল মাত্র ৫ বছর ও ৩২ টেস্ট সময় নিয়েছেন। শুধু তাই নয় সাগরিকার ‘লোকাল হিরো’ অনুপস্থিত থাকার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাকে এ মাঠে রান করার দিক থেকেও ছাড়িয়ে গেছেন মুমিনুল। তামিমের এ ভেন্যুতে রান ১৪ টেস্টে ৩৩.১৮ গড়ে ৮৯৬। এবার মুমিনুল ১৩৫ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত যখন ১৬৭ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ১২০ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন ততক্ষণে পেছনে ফেলে গেছেন তামিমকে। মুমিনুলের এখন সাগরিকার উইকেটে রান মাত্র ৮ টেস্টে বিস্ময়কর ৮৯.৯০ গড়ে ৯৮৯। মুশফিক সর্বাধিক ১০৯৬ রান করেছেন ১৫ টেস্টে। এতে করেও হয়তো সাগরিকার উইকেট এ ২৭ বছর বয়সীর জন্য কতটা পয়া সেটা পরিষ্কার হয় না। এ মাঠে ক্যারিয়ারের ৬টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। আর কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের এক ভেন্যুতে এত শতক নেই। এসব কীর্তির জন্যই হয়তো মুমিনুলকে ‘টেস্ট বিশেষজ্ঞ’ তকমা দেয়া হয়েছে। দেশের পক্ষের রেকর্ড গড়েই ক্ষান্ত হননি মুমিনুল। সাগরিকার এই সেঞ্চুরিটি তাকে বিশ্বের বিভিন্ন রেকর্ডেরও অংশীদার করেছে। দেশের ক্রিকেটভক্তরা এখন আশা করতেই পারেন মুমিনুল একদিন এই পথে কিংবদন্তি মাহেলা জয়বর্ধনেকেও ছাপিয়ে যাবেন। টেস্ট ক্রিকেটে এক মাঠে (সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ড) সর্বোচ্চ ১১ সেঞ্চুরির রেকর্ডটি এই সাবেক লঙ্কানের দখলে। জয়বর্ধনে অনেক দূরে থাকলেও মুমিনুল সেই রেকর্ডের পাতায় নিজের নাম খচিত করেছেন চার সাবেকের পাশে। গ্রাহাম গুচ (লর্ডস), রিকি পন্টিং (এ্যাডিলেড ও সিডনি), ম্যাথু হেইডেন (মেলবোর্ন) আর মাইকেল ভন (লর্ডস) নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ৬টি করে সেঞ্চুরি করেছেন তারা। আর তাদের পাশে বসতে গিয়ে মুমিনুল পেছনে ফেলেছেন টেন্ডুলকর, জ্যাক হবস, হাবার্ট সাটক্লিফ, সোবার্স, গাভাস্কারদের মতো কিংবদন্তিদের। নির্দিষ্ট একটি মাঠে তাদের সেঞ্চুরিসংখ্যা ৫টি করে। এরচেয়েও একটি বিস্ময়রক কীর্তি গড়েছেন তিনি। চলতি বছরে বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে খুব বাজে সময় কাটালেও মুমিনুলের ব্যাটে ছিল রানের ফোয়ারা। সারাবিশ্বে যত টেস্ট হয়েছে সেখানে কোহলি ছাড়া সর্বোচ্চ দুটি করে সেঞ্চুরি পেয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু মুমিনুল এ বছর চারটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে কোহলির পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে ইনিংসের হিসেবে কোহলিকেও পেছনে ফেলেছেন তিনি। কোহলি ৪ সেঞ্চুরি করতে খেলেছেন ১৮টি ইনিংস, আর মুমিনুল খেলেছেন ১৩ ইনিংস। ভারতীয় অধিনায়ককে (৫৮.৭৯) স্ট্রাইকরেটেও পেছনে ফেলেছেন মুমিনুল (৬৫.৯৭)।
×