ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আফ্রিকা শৃঙ্গ নিয়ে টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আফ্রিকা শৃঙ্গ নিয়ে টানাপোড়েন

আফ্রিকা মহাদেশটার একটা সমস্যা সেখানে বন্দর যথেষ্ট সংখ্যায় নেই। বিশেষ করে আফ্রিকা শৃঙ্গে তো আরও অভাব। সেখানে যুদ্ধবিগ্রহের কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। ১৯৯১ সালে ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ইথিওপিয়ার উপকূল রেখা বলে কিছুই থাকে না। অথচ দেশটা পুনর্দখল এবং অর্থনীতি দ্রুত বর্ধিষ্ণু। এর সাড়ে ১০ কোটি লোক তাদের ৯৫ শতাংশ বাণিজ্যের জন্য জিবুতির ওপর নির্ভর করে। আরও ভেতরের দিকে দেশগুলো যেমন দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা ও রুয়ান্ডা বাজারে পৌঁছার জন্য আপ্রাণ চেষ্টায় নিয়োজিত। সুদান থেকে সোমালিয়া পর্যন্ত অঞ্চলের ১০ থেকে ১২টা বন্দর প্রয়োজন। আছে তার ঠিক অর্ধেক। গোটা আফ্রিকা শৃঙ্গে বন্দরের অভাব। ১৯৯০ এর দশকে জিবুতিতের ডোরালেহতে নতুন কন্টেনার টার্মিনাল চালু হলে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ গুটিকয়েক দেশের বিনিয়োগকারীরা সে দেশের সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে অর্থায়ন করে। ডোরালেহ এখন দেশের সর্বাধিক কর্মসংস্থানের স্থান এবং সেটাই সরকারের আয়ের বৃহত্তম উৎস। এটি পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করে এবং বছরে ৮ লাখ কন্টেনার আনা- নেয়া করে। এগুলোর বেশিরভাগ পণ্য ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে চীনের তৈরি রেলপথ দিয়ে চলাচল করে। এক এগারোয় যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর জিবুতির গুরুত্ব আরও বাড়ে। এ সময় আমেরিকা সেখানে একটা সামরিক ঘাঁটি খোলে। ফ্রান্স ও চীনেরও সেখানে ঘাঁটি আছে। অন্যান্য দেশের নৌবাহিনী সোমালী জলদস্যুদের তাড়িয়ে দেয়ার জন্য জিবুতির উপকূলে টহল দেয়। কিন্তু আমিরাত ওখানে তার নিজস্ব নৌঘাঁটি করতে চাইলে তা দেয়া হয়নি। এর আংশিক কারণ জিবুতির প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু ইরিত্রিয়ার সঙ্গে আমিরাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ২০১৫ সালে আমিরাত দক্ষিণ ইরিত্রিয়ায় আসাবে নৌঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে। ঘাঁটিটি ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর পরিচালিত পুঁথি বিদ্রোহী দমন অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি ইয়েমেনের প্রধান বন্দর এবং বর্তমানে তুমুল লড়াইয়ের কেন্দ্র হোদেইদার ওপর উভচর আক্রমণ চালানোর মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আমিরাত গত ৯ জুলাই ইথিওপিয়ার সঙ্গে ইরিত্রিয়ার স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তি সম্পাদনে মধ্যস্থতাও করে এবং এর মধ্য দিয়ে কয়েক দশক ধরে দেশ দুটির মধ্যে শীতল ও উষ্ণ যুদ্ধের অবসান হয়। চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত টিকে গেলে ইরিত্রিয়ায় বিদেশী বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত হবে। আসাব ও আরেকটি বন্দর সাসাওয়া সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। সোমালিল্যান্ড ১৯৯১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে যদিও কোন রাষ্ট্র একে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০১৬ সালে একটি কোম্পানি এই দেশটির চনরয়েনা বন্দর পরিচালনার ঠিকদারি পায়। এই সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছে তাতে সোমালিয়ার ভাঙ্গন ত্বরান্বিত হবে। এই চুক্তির কারণে জিবুতিও আবার ক্ষুব্ধ হয়েছে। কেননা বেররেকা বন্দরের সাড়ে ১২ লাখ কন্টেনার আনা-নেয়ার ক্ষমতা থাকবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে। তা হলে ইথিওপিয়ার কার্গোর ওপর জিবুতির একাধিপত্য ক্ষুণœœ হবে। ইথিওপিয়া এই বন্দরটির ১৯ শতাংশ শেয়ার এ বছর কিনে নিয়েছে। এতে করে ট্রানজিট মি. ধব্ববদ জিবুতির বছরে শত শত কোটি ডলার লোকসান হবে। বলাবাহুল্য যে কোম্পানিটি বেয়বেরা বন্দর পরিচালনার ঠিকাদারি পেয়েছে সেটির সিংহভাগ শেয়ারের মালিক আমিরাতের অংশ দুবাই। কোম্পানির নাম ডিপি ওয়ার্ল্ড। বেরবেরার ঠিকাদারি পাওয়ায় এই স্ট্র্যাটেজিক অঞ্চলে আমিরাতের অবস্থান সুসংহত হবে। আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মীভাবে আমিরাত নিজের সামরিক শক্তিকে তার সীমান্তের বাইরে বহু দূরে তুলে ধরতে চাইছে। আফ্রিকা শৃঙ্গের বন্দরগুলো সব বার্ব আল মানদের প্রণালীর কাছে। লোহিত সাগরের ঠিক মুখে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এর অবস্থান। ২০১৬ সালে লোহিত সাগরের এই মুখ দিয়ে প্রতিদিন ৪৮ লাখ ব্যারেল তেল পার হয়েছে। তাই এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য প্রতিযোগিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। কাতার ও তার মিত্র তুরস্ক সুদানে বন্দর নির্মাণ করছে। সৌদি আরব জিবুতিতে নৌঘাঁটি স্থাপনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছে। এই তিন উপসাগরীয় দেশই তাদের ওপর দেশগুলোর জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার বৃহত্তর চেষ্টার অংশ হিসেবে আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের কৃষি জমি বাগানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। উপসাগরীয় দেশগুলো আফ্রিকা শৃঙ্গে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিজেদের বিরোধকেও নিয়ে এসেছে। ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে কিশোরকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবসহ ৪ উপসাগরীয় দেশ কাতারের ওপর অবরোধ দেয়। জিবুতি ও ইরিত্রিয়া অবরোধকারী দেশগুলোর পক্ষ নেয়। কাতার তার সৈন্য সরিয়ে নেয়। এই সুযোগে ইরিত্রিয়া জিবুতির কাছ থেকে বিরোধীয় ভূখ- দখল করে নেয়। জিবুতিতে চীনেরও নৌঘাঁটি থাকায় উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এখন চীনেরও খোঁটাখুঁটি লাগবে। ইতোমধ্যে লেগেও গেছে। আফ্রিকা শৃঙ্গে রীতিমতো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×