ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বসল পঞ্চম স্প্যান, পদ্মা সেতুর পৌনে এক কিমি দৃশ্যমান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩০ জুন ২০১৮

 বসল পঞ্চম স্প্যান, পদ্মা সেতুর পৌনে এক কিমি দৃশ্যমান

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, জাজিরা থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসেছে; ফলে সেতুর মূল কাঠামোর ৭৫০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হলো। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা জানান, শুক্রবার বেলা ১টায় ‘৭ এফ’ নম্বরের স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয়। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের তীর স্পর্শ করল। আর সেতুটির ৭৫০ মিটার বা পৌনে এক কিলোমিটার অংশ দৃশ্যমান হলো। আরেক ধাপ এগিয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার অর্জন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এখন সাদা চোখেই সেতুর অবয়ব দেখে মন জুড়ায়। এছাড়াও পুরো সেতু এলাকার নয় কিলোমিটার এলাকা জুড়েই চলছে সেতুর খুঁটি তৈরিসহ অন্যান্য কর্মযঞ্জ। আকাশ ছোঁয়া ক্রেন ও ভারি ভারি যন্ত্রপাতির সমাবেশ আর দেশী-বিদেশী শ্রমিকদের অনবরত কর্মব্যস্ততায় আষাঢ়ের পদ্মায় বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে ঢেউ আর স্রোতের শব্দ। আরেক দিকে সেতু বুননের শব্দ। সব মিলে যেন একাকার। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দিনরাত চলছে এই কাজ। সেতুর দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, এখন সব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা হয়েছে। এখন আর সময় ক্ষেপণ হচ্ছে না, তাই তর তর করে খুঁটি উঠে যাচ্ছে, পাইল বসে যাচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সাড়ে ৮টার দিকে কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপ জেটি থেকে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ স্প্যানটি তুলে নিয়ে যায়। বিকেলে স্প্যানটি নিয়ে যাওয়া হয় ৪১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারের কাছে। জাজিরা প্রান্তের ৩৭ নম্বর খুঁটি থেকে ৪১ নম্বর পিয়ারে সেতুর চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে এর আগে। প্রতিটি ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মোট ৪১টি স্প্যান ৪২টি পিয়ারের ওপর বসিয়ে তৈরি হবে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো। সেতুর স্প্যােনের বিভিন্ন অংশ চীনে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয়েছে বাংলাদেশে। তারপর মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সেগুলো সংযোজন করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারে দ্বিতীয় এবং ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারের ওপর তৃতীয় স্প্যান স্থাপন করা হয়। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে এই মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুতে থাকবে রেল চলাচলের ব্যবস্থাও। সঙ্গে দু’পাড়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতু মিলে সেতুর দৈর্ঘ নয় কিলোমিটারের বেশি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনলে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর ২০১৩ সালে সরকার বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়। তারপর ২৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বহু প্রতীক্ষিত এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় নিজস্ব অর্থায়নে। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সম্প্রতি ২৭৬ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছে বাংলাদেশ। সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করলেও এ পর্যন্ত সেতুর ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল ৭টা থেকেই স্প্যানটি স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্তুতির গড়িও যেন বেড়ে যায়। ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজের নির্মাণ সংশ্লিষ্ট একটি শক্তিশালী ইউনিট এই বিশাল স্প্যান খুঁটির ওপর বসিয়ে দেয়ার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করে অতি সূক্ষ্মভাবে। পদ্মা নদীতে ৪১ নম্বর খুঁটিই হচ্ছে সেতুর শেষ খুঁটি। এর পর ৪২ নম্বর খুঁটি তীরে, অর্থাৎ জাজিরার নাওডোবায় নদীর পাড়ে। সেজন্য নির্বিঘ্নে স্প্যান বসানোর জন্য ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির মাঝে অর্থাৎ তীরের কিছু অংশ খনন করা হয়। যাতে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি যথাস্থানে যেতে পারে। এরপর এই জাহাজের সঙ্গে লোহার বিশাল রশি বিপরীত দিকের কয়েনটি ভেকুর সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয়। যখন জাহাজটি যথাস্থানে নেয়া শুরু হয় তখন ভেকুও এই রশি সমান তালে টেনে ধরে। দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটের দিকে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা প্রান্তের ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর এই সুপার স্ট্রাকচার নিয়ে আসা হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির কাছাকাছি ক্রেনটি নেয়া হয়। পরে ক্রেন দিয়ে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ওপরে স্প্যানটি তোলার কাজ শুরু হয়। দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে স্প্যানটি পুরোপুরি খুঁটির ওপর বরাবর নিয়ে আসে। তাতে সঠিক স্থানে বসিয়ে দেয়া হয় দুপুর ঠিক ১টায়। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসিয়ে দেয়ার মুহূর্তটি ছিল বিস্ময়কর। খুব নিরবে আস্তে আস্তে যথাস্থানে নিয়ে আসা হলো। সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন, এই ক্ষণটি যে কত বিস্ময়কর ছিল শুধু তারাই বোঝাতে পারবেন। আর এরই মধ্য দিয়ে আশাজাগানিয়া সেতুর পৌনে এক কিলোমিটার অর্থাৎ সেতুর অবয়ব আরও স্পষ্ট হলো। এরপরই এটি স্থায়ীভাবে বসানোর প্রক্রিয়ায় ওয়েল্ডিংসহ অন্যান্য কাজ এখন চলমান রয়েছে। সকালে স্প্যানটি যখন খুঁটিতে বসানো হচ্ছিল তখন পদ্মা নদীতে বড় ঢেউ ও তীব্র স্রোত বইছিল। ঢেউ আর স্রোত উপেক্ষা করে মানুষ ফেরি, লঞ্চ ও স্পীডবোটে পদ্মা পার হচ্ছিল। তাঁদের অনেকে নৌযান থেকে এই মাহেন্দ্রক্ষণটি প্রত্যক্ষ করতে দেখা গেছে। ৪২ নম্বর খুঁটিই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পিয়ার। এটির সাইড ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন সাতক্ষীরার মোঃ শামীমুজ্জামান, তিনি প্রক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এই সেতু সারা বাংলার জন্যই অনেক বড় প্রাপ্তি আর আমরা যারা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ, তাদের কাছে যে এই সেতু কত বেশি প্রাপ্তি তা বোঝাতে পারব না। আজকের ভাল লাগাটি আলাদা। দীর্ঘদিন ধরে যে খুঁটিটি তৈরি করতে পেরেছি। সেই খুঁটিতে প্রতীক্ষিত স্প্যান উঠে গেল। এই ক্ষণটি ধারণ করার জন্য অনেক দেশী মিডিয়া কর্মীদের পাশাপাশি চীনের একদল টিভি সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। তার এই দৃশ্যটি ধারণ করেন। চীনের প্রকৌশলী মি. জো বলেন, বাংলাদেশীদের মত, চীনও গর্বিত। যেমন এমনটি কাজে অংশ নিতে পারছি।” স্প্যানটি স্থাপনের পর বেলা ২টায় পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম প্রকল্প এলাকায় জনকণ্ঠকে বলেন, “আজকে আমাদের পঞ্চম স্প্যান পিলারের ওপর সফলভাবে স্থাপন করছি। এটা একটি ধারাবাহিক কাজ। এর আগে আরও চারটি পিয়ার সফলভাবে স্থাপন হয়েছে। বাকি স্প্যানগুলো সফলভাবে স্থাপনের কাজ চলান রয়েছে। এটা আলাদা কিছু নয়। তবে দৃশ্যমান হবার পথে পদ্মা সেতু। আস্তে আস্তে মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হতে চলছে। আমরা চেষ্টা করছি, যথাসময়ে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য একই সঙ্গে কোয়ালিটিমূলক কাজ নিশ্চিত করা যাতে শত বছরের বেশি টিকে থাকে, এই প্রস্তুতিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।” এই সময় পদ্মা সেতু শীর্ষ পর্যায়ের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্প এলাকায়ই ছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী দুপুরে সার্ভিস এরিয়া-১ এর মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে। এখান থেকেই যাবতীয় খোঁজখবর করেন। যথাযথভাবে স্প্যানটি স্থাপন হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এলাকায় ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। তিনি সেতুর পঞ্চম স্প্যান স্থাপন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া পদ্মা সেতুর এই কর্মযজ্ঞ বাঙালীর অগ্রযাত্রা তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। ৬ষ্ঠ স্প্যান ৩৬ ও ৩৭ খুঁটিতে ॥ পদ্মা সেতুর ৬ষ্ঠ স্প্যান বসবে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটিতে। ৩৭ নম্বর খুঁটির এক প্রান্তে প্রথম স্প্যানটির একপাশ বসেছিল। এখন অপর পাশে বসবে ৬ষ্ঠ স্প্যানের একপাশ। তবে ৩৬ নম্বর পিয়ার (খুঁটি/পিলার) এখনও প্রস্তুত নয়। তবে পাইলের ওপরে ক্যাপ হয়ে গেছে। এখন খুঁটি ওপরে উঠার পালা। তবে এই খুঁটিটি এখন যেই অবস্থায় রয়েছে, তা থেকে স্প্যান বসার উপযোগী করতে দুই থেকে আড়াই মাস লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এই খুঁটি প্রস্তুতের সঙ্গে সঙ্গেই ৬ষ্ঠ স্প্যান অর্থাৎ ‘৬এফ’ নম্বর স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হবে। তাই ৬ষ্ঠ স্প্যান দৃশ্যমান হতে অপেক্ষা করতে হবে আরও প্রায় আড়াই মাস। মাওয়ায় ৪ খুঁটি দৃশ্যমান ॥ মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর চারটি খুঁটি দৃশ্যমান হয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটি পুরোপুরি স্প্যান বসানোর উপযোগী। আর ২ নম্বর খুঁটিও উপযোগী হওয়ার পথে। কিন্তু স্প্যান এখনই বসছে না। এর কারণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের জন্য সাতটি গ্রুপ করে ডিজাইন করা হয়েছে। প্রথম গ্রুপে রয়েছে- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ খুঁটি। এই সাত খুঁটিতে ছয়টি স্প্যান বসবে। তবে প্রকৌশলীদের মধ্যে যে কোন গ্রুপের স্প্যান বসানো শুরু করতে হবে যে কোন এক প্রান্ত থেকে। তাই সার্বিক চিন্তা করে প্রথম স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা ছিল প্রথম গ্রুপের ৭ নম্বর খুঁটির প্রান্ত থেকে। এর কারণ ছিল প্রথম খুঁটিটি বেশি বড় এবং সময় বেশি প্রয়োজন। আর তাই মাওয়া অর্থাৎ এই গ্রুপের অপর প্রান্ত বেছে নেয়া হয়। সেই অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কাজের উদ্বোধনের দিন ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকেই ৭ নম্বর এবং পরে ৬ নম্বর খুঁটিতে পাইল ড্রাইভ করা হয়। এই দুটি খুঁটিতে ইতোমধ্যেই ৩টি করে পাইলও বসেছে। এমনকি এই দু খুঁটির জন্য ‘১এফ’ নম্বর প্রথম স্প্যানও দেশে সবার আগে আসে। কিন্তু নদীর তলদেশে নরম মাটির কারণে বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তোলে। পরে ডিজাইন পরিবর্তন করে ছয়টির স্থলে ৭টি পাইল দিয়ে এই খুঁটি তৈরির নক্সা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ বিশ্বের সবেচেয় ভাল ও টেকসই সিদ্ধান্তের কারণে এতে সময় লেগে যায়। আর সে কারণেই এখান থেকে সরে গিয়ে জাজিরা প্রান্তের কাজ আগে শুরু করা হয়। ৭ম গ্রুপের স্প্যান সম্পন্ন হলো ॥ শুক্রবার ‘৭এফ’ নম্বর স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৭ম গ্রুপের স্প্যান বসানো সম্পন্ন হলো। পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের যে জন্য ছয়টি গ্রুপ করা তার মধ্যে ৭ম গ্রুপে ছিল ৫টি স্প্যান। এই পাঁচটিই সম্পন্ন হলো। আর বাকি ছয়টি গ্রুপেই ছয়টি করে স্প্যান। এবার ৬ষ্ঠ গ্রুপের পালা। এখন ৬ষ্ঠ গ্রুপের শেষ প্রান্ত অর্থাৎ ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলার থেকে শুরু হচ্ছে স্প্যান বসানোর কাজ। এ দিকে এই গ্রুপের স্প্যানও চলে এসেছে কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে। সেখানে ফিটিংয়ের কাজও সম্পন্ন প্রায়। এখন রং করা বাকি মাত্র। পদ্মাপারে উৎসাহ-উদ্দীপনা ॥ পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্ত স্পর্শ করেছে শুক্রবার। এই নিয়ে পদ্মাপারে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। দেশব্যাপী এই আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে পড়লেও পদ্মাপারে এর মাত্রা অনেক বেশি। দেশ যখন বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মাতামাতির প্রথম পর্ব শেষ করার পরদিনই শুক্রবার এই খবরে ভিন্ন মাত্রা ছিল। আশপাশের অনেকেই নিজ চোখে এই ক্ষণটি দেখতে ছুটে আসে পদ্মা পারে। নিরাপত্তার কারণে খুব কাছাকাছি পৌঁছতে না পারলেও দূর থেকেই তাই অবলোকন করেছেন পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের আরেকটি ধাপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ তরতর করে অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে যাওয়ার বার্তা জানাচ্ছে। জানান দিচ্ছে বাঙালীর অপার সম্ভবনার। তাই ছিল সকলের মুখে মুখে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের অংশগুলো যে কত গর্বের, কত ভালোলাগার তা সাধারণের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা যায়। পদ্মা সেতু বাঙালী গর্বের, অহঙ্কারের এক বীরত্বগাথা। যারা এতদিন ভেবেছিল পদ্মা সেতু আদৌ হবে কিনা, পদ্মা সেতুর একের পর এক স্প্যান বসানোর ফলে বাস্তবে রূপ নেয়ায় তাদের সকল সংশয় কেটে গেছে। এই সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিসহ জাতীয় অর্থনীতি অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। সেতুর কাজ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপন করবে এ সেতু। এতে অর্থনৈতিক চাকা ঘোরার পাশাপাশি অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই চট্টগ্রামের বাসিন্দা পদ্মা সেতুর কাজে কর্মরত একজন প্রকৌশলী বলেন, এই সেতু সুফল শুধু নয়, এই সেতু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশকে একটি বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সেতুটির ৪২ নম্বর খুঁটির ফোরম্যান জাজিরার পূর্ব নাওডোবা গ্রামের শাহিন মোল্লা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যার এই কীর্তি আমাগো জাগাইয়া তুলছে। আমরা এখন অনেক কিছু করবার ক্ষমতা রাখি। পদ্মা সেতু হইবার পর তা বুঝতে পারবেন।’ নাওডোবা গ্রামের মোঃ ইমাম হোসেন, আবুল হোসেন, আল আমিন, শরিফুল ইসলা, আলী আকবর শিকদার ও সোহেল মাদবর স্প্যান উঠানোর দৃশ্যটি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। সকলেই পদ্মা সেতুর এই অগ্রগতিতে গর্ববোধের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা পারি আমরা পারব আর সেখানে উপস্থিত শিবচর থেকে আসা মিডিয়াকর্মী নাসির উদ্দিন বলেন, এখন স্রোতের নদীতে যে এভাবে একে একে পদ্মা সেতু হয়ে যাচ্ছে, খুব কাছে থেকে দেখে অনেক ভাল লাগছে। এটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জাজিরা থানার ওসি এনামূল হক স্প্যানটি স্থাপনের পর উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন সাধারণের সঙ্গে। পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও তিনি নিরাপত্তার পাশাপাশি নিজের মনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘এটা আমাদের অনেক বড় প্রাপ্তি আর এই প্রাপ্তির সঙ্গে যারা কাজ করছেন, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের জাতি ভুলবে না, স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসে নাম উঠবে। শুধু বাংলার ইতিহাসেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও থাকবে এই নাম। কারণ বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন শুধু বিরল ঘটনা নয় এটি একটি স্মরণীয় ইতিহাস।’
×