ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১৯৭১ : গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের সম্মাননা ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুদান প্রদান

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৩ মে ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের  সম্মাননা ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের  অনুদান প্রদান

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা শহরে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া তথা বাংলাদেশের একমাত্র গণহত্যা-নির্যাতন বিষয়ক জাদুঘর ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আগামী ১৭ মে প্রতিষ্ঠা দিবস হলেও এবার ওই সময়ে রমজান মাস শুরু হওয়ায় কারণে কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টায় নগরীর বিএমএ ভবনে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করা হয় গবেষক বন্ধন বা লেখক সম্মেলন। এত বড় কলেবরে মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের মিলনমেলা খুলনায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সব জেলা থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় অগ্রগণ্য গবেষকবৃন্দ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর পক্ষ থেকে খুলনা অঞ্চলের ২৮ মুক্তিযুদ্ধ গবেষককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মিলনী গবেষক বন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। গবেষকবৃন্দর মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, বিশিষ্ট গবেষক মামুন সিদ্দিকী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন পালিত, জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী কাজল আব্দুল্লাহ প্রমুখ। বক্তব্য শেষে অতিথিবৃন্দ গবেষকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাঃ শেখ বাহারুল আলম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন চৌধুরী শহীদ কাদের। এ অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক বক্ততায় বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নতুন জাগরণ প্রয়োজন। এখানে কোন নিরপেক্ষতার সুযোগ নেই। নতুন প্রজন্মের স্থানীয় পর্যায়ের গবেষকগণ গবেষণার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের অজানা তথ্য উন্মোচন করবেন। সেখানে সম্মিলনী গবেষক বন্ধন একটি মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে।’ অনুষ্ঠানে আহম্মেদ শরীফ সম্পাদিত ‘সম্মিলনী গবেষক বন্ধন’ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা লাভের পর প্রতিবছর শহীদ স্মৃতি স্মারক বক্তৃতা আয়োজন করা হয়। বিকেলে অনুষ্ঠিত ৪র্থ স্মারক বক্তৃতায় স্মারক বক্তা ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। এবারের বিষয় বাংলায় পাকিস্তান আন্দোলন, বাঙালীর রাষ্ট্রভাবনা ও বঙ্গবন্ধু। স্মারক বক্তৃতাটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে কিছু অংশ তিনি পাঠ করে শোনান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। স্মারক বক্তৃতা শেষে মুনতাসীর মামুন-ফাতেমা ট্রাস্ট কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের অনুদান প্রদান করেন ড. মুনতাসীর মামুন ও উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মিনি বেগম, নূরজাহান বেগম ও মোঃ কলম শেখকে অনুদানের টাকায় ভ্যান প্রদান করা হয়। তারা তিনজনেই মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে কুখ্যাত খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। মিনি বেগম ও নূরজাহান বেগম দুজনেই বীরঙ্গনা। এছাড়া জাদুঘর সুহৃদ সভা কর্তৃক আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার ক বিভাগ (৬ষ্ঠ-৮ম) ও খ বিভাগ (৯ম-১০) অংশগ্রহণকারী ও বিজীয়দের মধ্যে সনদপত্র ও পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানের এ পর্বে মুক্তিযুদ্ধের কিছু অমূল্য স্মারক জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন হেরিটেজ আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা ড. মোঃ মাহবুবর রহমান। এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনামা, বিভিন্ন জেলার শাস্তি কমিটির মিটিংয়ের মিনিটস, শান্তিসেনার হলফনামা, জেনারেল নিয়াজি কর্তৃক বাঙালীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের এক অমূল্য দলিল, রংপুরের কুখ্যাত পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী জেনারেল খটকের দুষ্কর্মে দলিল। এছাড়া রয়েছে বাগেরহাট জেলার কুখ্যাত রাজাকার রজব অলী ফকিরের হাতে লেখা চিঠি যেখানে শান্তি কমিটি বা রাজাকার বাহিনী যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দুর্লভ একটি আসল রেকর্ডিং ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সংগ্রহের জন্য আর্কাইভ ৭১ এর নির্বাহী প্রণব সাহা উপহার হিসেবে জাদুঘরকে প্রদান করেন। নড়াইল জেলার শহীদ মক্তিযোদ্ধা মোঃ মতিয়ার রহমানের রক্তমাখা বস্ত্র, স্কুল আইডি কার্ড জাদুঘরকে প্রদান করেন তার ছোট বোন শাহানাজ পারভীন। ভারতের ৫নং ইয়ুথ ক্যাম্পের আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র ক্যাম্পের ডাক্তার বিএম মতিউর রহমানের কাছে সঞ্চিত ছিল। অনুষ্ঠানে সেই মূল্যবান দলিল নথিপত্র জাদুঘরকে প্রদান করেন তার পুত্র মুক্তিযোদ্ধা রছিকউর রহমান। তারা সকলের নির্দশগুলো জাদুঘর ট্রাস্টেও সভাপতি ড. মুনতাসীর মামুনের হাতে তুলে দেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র প্রযোজনায় প্রণব সাহা বঙ্গবন্ধুর প্রিয় গানগুলো সংগ্রহ করে একটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছেন।
×