ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওআইসি সম্মেলনে মিথ্যা পরিচয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ॥ তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১০ মে ২০১৮

ওআইসি সম্মেলনে মিথ্যা পরিচয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ॥ তোলপাড়

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া মিথ্যা পরিচয়ে ইসলামী সহযোগিতা সম্মেলনের (ওআইসি) ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ‘পররাষ্ট্র সচিব’ হলেও নিজেকে ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী’ পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এ নিয়ে ঢাকায় এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত ৫-৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রিদের ৪৫তম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া। তবে এই সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগে গত ৪ মে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাকিস্তান একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক পত্র পাঠিয়েছিল। পাকিস্তানের সেই পত্রে বলা হয়, দেশটির প্রতিমন্ত্রী তেহমিনা জানজুয়া ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু গত ৭ মে বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪৫তম পররাষ্ট্র মন্ত্রিদের সম্মেলন ৬ মে ঢাকায় সমাপ্ত হয়েছে। পাকিস্তান দলের নেতৃত্ব দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া। এ বিষয়ে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তাই মুখ খোলেননি। কেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব নিজেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন, সে বিষয়েও কেউ কিছুই জানেন না। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অনেক সময়ে বৈদেশিক সম্পর্কে একজন ব্যক্তিকে ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। সে ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র সচিবকে প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়ে থাকে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে এই অনুষ্ঠানের জন্য বা এই মেয়াদের জন্য ‘প্রতিমন্ত্রীর প্রটোকল’ দেয়া হলো। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের ওই নোট ভার্বালে এ ধরনের কোন কিছুই বলা ছিল না। ঢাকায় ওআইসির পররাষ্ট্র মন্ত্রিদের ৪৫তম সম্মেলনের শেষ দিনে দেয়া হয় ৩৯ দফা ঢাকা ঘোষণা। তবে ঘোষণার বিষয়ে পাকিস্তান হাইকমিশন বলেছে, সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়ার নেতৃত্বে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। তবে এই সম্মেলন সমাপ্তির কিছুক্ষণ আগে ঢাকা ঘোষণা সরবরাহ করা হয়। পাকিস্তানের অভিযোগ, অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে পরামর্শ না করেই এই ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘোষণায় বাংলাদেশের নিজস্ব মতামতই তুলে ধরা হয়েছে বলেও অভিযোগ করে একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত দেশটি। পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলে, ঢাকা ঘোষণার মূল খসড়া ওআইসির সচিবালয় থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে। পরবর্তীতে কিছু সদস্য, ওআইসির সঙ্গে সম্পর্কিত সংস্থা ও স্বাগতিক দেশ এর কয়েকটি বাড়তি ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করে। নতুন প্রস্তাবগুলো কাউন্সিলে খসড়া গৃহীত হওয়ার আগেই সংযোজন করা হয়। কিন্তু মূল খসড়ায় পাকিস্তানের আপত্তি যে ১৮ নম্বর ধারা নিয়ে তার কোন পরিবর্তন করা হয়নি। ওআইসি সম্মেলনে অংশ নেয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশন থেকে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের কথা উল্লেখ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবহিত হয়, তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের মিথ্যা পরিচয়ে ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিয়ে ঢাকায় এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে।
×