ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিছু ব্যক্তি নেতা সেজে শ্রমিকদের ওপর খবরদারি করেন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ মে ২০১৮

কিছু ব্যক্তি নেতা সেজে শ্রমিকদের ওপর খবরদারি করেন ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক নেতা সেজে যারা বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করেন তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দেশের কিছু ব্যক্তি নেতা সেজে বসে আছেন, শ্রমিকদের ওপর খবরদারি করেন। একটি টিকেটের জন্য কোন কিছু হলেই তারা বিদেশীদের কাছে নালিশ করেন। দেশের বদনামটা তুলে ধরেন। আর এই বদনাম করতে গিয়ে হয়তো একখানা টিকেট বিনা পয়সায় পান। বিদেশে থাকার একটু সুযোগ পান। একটু যেতে পারেন। সামান্য সুযোগের জন্য দেশের বদনামটা বাইরে গিয়ে করাটা নিজের দেশের জন্য যে কত ক্ষতিকর, সেটা তাদের অনেকেই বুঝতে পারেন না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। তবে তাদের বলছি, আমি যতদিন ক্ষমতায় আছি, বাইরে নালিশ করে বেশি সুবিধা হবে না। তাই কারও উস্কানিতে কারখানায় বিশৃঙ্খলা মহান মে দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শ্রমিক নেতাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই দেশটা আমাদের। আমাদেরই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। দেশটি যতই উন্নত হবে, ততই আমাদের কল্যাণ হবে। এই কথাটি বুঝতে হবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশকে গড়ে তুলতে চাই। দেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আমাদের সরকারের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু দেশের সব শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার রাজনীতি হলো, এদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য। আমি তেলে মাথায় তেল দিতে আসিনি। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। শিল্প প্রতিষ্ঠানের শান্তি রক্ষার জন্য আমরা কাজ করছি। শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়নে কাজ করছি। তাদের জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছে। বন্ধ কলকারখানা আমরা চালু করছি। মালিক-শ্রমিকদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক চাপ আছে। বাইরে থেকে কেউ উস্কানি দিল, অমনি সেখানে শুরু হয়ে গেল তা-ব, এই ঘটনা যেন কখনও না ঘটে। সেই ব্যাপারে আমি সবাইকে সতর্ক করে দিচ্ছি। আমি বলব, নিজের চাকরি ও কাজের ক্ষেত্র যেন কোনমতেই ধ্বংস না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। শ্রমিক ও মলিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি শ্রমজীবীদের বলব, যে কারখানা আপনার রোজগারের ব্যবস্থা করে। আপনার ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে। সেই কারখানা যেন ঠিকমতো চলে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সেখানে যেন কোন অশান্তি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে অনুরোধ করব। একটা ভরসা রাখবেন, আপনাদের কোন অসুবিধা হলে আমি তো আছি। আমি নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। আপনাদের ভাগ্য গড়তে এসেছি। আপনাদের কোন সমস্যা হলে আমি দেখব। আর মালিকদের প্রতি আমার অনুরোধ, যে শ্রমিকরা শ্রম দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আপনার জন্য উৎপাদন করেন। আপনি ব্যবসা করেন। আপনি ও আপনার পরিবার ভাল থাকে সেই শ্রমজীবী মানুষের প্রতিও আপনাদের আন্তরিক হতে হবে। তাদের প্রতি কর্তব্যে কোন ত্রুটি না হয় তা দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। দেশের কোন্ এলাকায় মানুষ গৃহহারা, তার হিসাব আমার কাছে রয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী আমি গৃহনির্মাণ করে যাচ্ছি। আমরা শিল্পায়ন যেমনটি করব। কৃষি যেন নষ্ট না হয়, সেই লক্ষ্য রেখেই কাজ করছি। আওয়ামী লীগ নিজের সেবা নয়, দেশের মানুষের সেবার জন্য ক্ষমতায় আছে। তিনি বলেন, যারা বিদেশে যান তাদের বলব, দালালের খপ্পরে পড়ে সোনার হরিণ ধরার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাবেন না । সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ বিদেশে গিয়ে যে কষ্টটা তারা পান, যে মানবেতর জীবন-যাপন করেন তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। দেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কবিতার একটি অংশ পাঠ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ মানুষই। মানুষের অধিকার সবার ওপরে। মানুষের কল্যাণ করা সবার দায়িত্ব। কাউকে ছোট করে দেখা নয়। সবার সম্মান দিতে হবে। এটাই মানুষের ধর্ম। মেহনতি শ্রমিক-কৃষক-মজুরের জন্যই আমাদের রাজনীতি। তাদের ভাগ্য পর্বিতনের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে। সব শ্রমিক-মজুরের কাছে দেশ গড়ার কাজে সহযোগিতা চাই।’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিহত শ্রমিকদের পরিবার, আহত শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের মাঝে চেক বিতরণ করেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানও বক্তব্য রাখেন।
×