ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পৌনে দুই কোটি টাকার চাল কালোবাজারে বিক্রি

জামালপুরে কাজ না করেই বরাদ্দ আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

জামালপুরে কাজ না করেই  বরাদ্দ আত্মসাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ২৭ এপ্রিল ॥ সদর উপজেলার লক্ষ্মীচর গুচ্ছগ্রাম ও চর হামিদপুর গুচ্ছগ্রামের মাটি ভরাটের কাজ না করেই প্রকল্পের বরাদ্দের ২৬৯ টন চাল উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। যার সরকারী মূল্য প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। বাস্তুহারা দুস্থ মানুষের বাসস্থানের জন্য ক্লাইমেট ভিকটিম রিহেবিলিটি প্রজেক্টের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর (কাবিখা) আওতায় সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের লক্ষ্মীচর গুচ্ছগ্রাম ও শরিফপুর ইউনিয়নের চরহামিদপুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় (কাবিখা) লক্ষ্মীচর গুচ্ছগ্রামের জন্য ২০৪ দশমিক ৫৮৮ মেট্রিক টন ও চরহামিদপুর গুচ্ছগ্রামের জন্য ১৫৪ দশমিক ৬৩২ মেট্রিক টন চাল অনুমোদন করা হয়। অনুমোদনকৃত চালের মধ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ৭৫ ভাগ চাল বরাদ্দ দেয় গুচ্ছগ্রাম দুটির মাটি ভরাট কাজের জন্য। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কোন প্রকার কাজ না করেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ ডিওর মাধ্যমে সিংহজানী এলএসডি খাদ্য গুদাম থেকে লক্ষ্মীচর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম বরাদ্দকৃত ১৫৩ দশমিক ৪৪১ টন চাল উত্তোলন করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে তা কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। একই উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের চরহামিদপুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের জন্য ১৫৪ দশমিক ৬৩২ টন চাল অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী ১১৫ দশমিক ৬৩২ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এই প্রকল্পের সভাপতি ও শরিফপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শিউলী বেগম দুটি ডিওর মাধ্যমে সিংহজানী এলএসডি খাদ্য গুদাম থেকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৬০ মেট্রিক টন এবং ১ মার্চ ৫৫ দশমিক ৬৩ টন চাল প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে বরাদ্দকৃত পুরো চাল উত্তোলন করে তা কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত দুইদিন সরেজমিনে লক্ষ্মীচর গুচ্ছগ্রাম ও চরহামিদপুর গুচ্ছগ্রামের নির্ধারিত ভূমিতে গিয়ে মাটি ভরাট কাজের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে সাংবাদিকেরা চরহামিদপুর গুচ্ছগ্রাম থেকে ঘুরে আসার পর পরই কালোবাজারে বিক্রি করা চাল জায়েজ করার জন্য গত মঙ্গলবার ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজার বসিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। অথচ কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় এই প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শ্রমিক দিয়ে করার জন্য প্রকল্পের নীতিমালার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও তা মানছে না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। চরহামিদপুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের সভাপতি ও শরিফপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শিউলী বেগম মাটি না কেটে চাল উত্তোলন ও কালোবাজারের বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চাল উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, চালগুলো ডিলারের কাছে রয়েছে। শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম এবং লক্ষ্মীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বিদ্যুতের সঙ্গে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের চাল উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি। লক্ষ্মীরচর ও শরিফপুর ইউনিয়নের আলোচিত দুটি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের বরাদ্দের চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডাঃ মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই বলব না।’
×