ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রজন্মের ব্যাংকার

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

নতুন প্রজন্মের ব্যাংকার

পড়ালেখার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ভাল একটি ক্যারিয়ার গড়ে তোলা। অনেকেই তাই ভবিষ্যত পেশাকে মাথায় রেখে শিক্ষা জীবনে সংশ্লিষ্ট বিষয় বেছে নেন। পেশাগত জীবনে সাফল্যের জন্য চাই দক্ষতা। সেটা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কোর্স করার মাধ্যমেও হতে পারে। মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে দেশে বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠছে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংক-ব্যবস্থা। আজকাল ব্যাংকিং পেশা হিসেবে অনেকটাই বিশেষায়িত হয়ে উঠেছে। সার্বিক মূল্যায়নে পেশা হিসেবে ব্যাংকিং চমৎকার । এসব কারণে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার এখন অনেক মেধাবীর স্বপ্ন। তেমনি এক স্বপ্নবাজ তরুণী সানজানা ফরিদ। মাস্টার্স পাশ করেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে। স্বপ্নের ক্যারিয়ার শুরু করেন আমেরিকার একটি ব্যাংক দিয়ে। তারপর পিছু ফেরা নয়, এগিয়ে চলা। বর্তমানে সানজানা ফরিদ কান্ট্রি হেড, বাংলাদেশ ব্র্যাক সাজন এক্সচেঞ্জ লিমিটেড। সাক্ষাতকার নিয়েছেন- রুহুল আমিন ভূঁইয়া ডিপ্রজন্ম : ক্যারিয়ার শুরুর দিকটা জানতে চাই? সানজানা ফরিদ : আমার ক্যারিয়ার শুরু ২০০৯ সালে আমেরিকার একটি ব্যাংক দিয়ে। আমি মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই সম্পর্ক তৈরি করতে, মিশতে পারতাম। সেটা যে ভাষার লোক হোক না কেন। আর নতুন কিছুর প্রতি আমার ঝোঁক ছিল সবসময়। তাই ভাবলাম আমার এমন কিছু নিয়ে কাজ করা দরকার যাতে করে মানুষের কাছে আরো সহজে যেতে পারা যায়। এবং সেই প্রবণতা থেকেই পেশা বেছে নেয়া।‘ ট্রান্স ফাস্ট’ এ আসা সেই ভাবনা থেকেই । কাজ শুরু করি কাস্টমার ডিপার্টমেন্ট। তারপর প্রতিটি স্তরে কাজ করার জায়গা তৈরি করে নেই। একটা সময় আইটির দিকেও ঝুঁকে পড়ি। আস্তে আস্তে কাজের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পরিচিতি হতে লাগলাম। এভাবেই পথচলা শুরু। পরবর্তীতে ওখান থেকেই অন্য একটি রেমিটেন্স কোম্পানি ডেকে নিয়ে যায় আমাকে তাদের ব্যাংকিং রিলেশনশিপ দেখাশোনার জন্য। সেখান কাজ করাকালীন বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংকের সাথে আমার একটি নেটওয়ার্ক হয়ে গেছে। ইউএই তে থাকা অবস্থায়ই ডাক আসলো বাসেদ কোম্পানি ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ থেকে। তারা বাংলাদেশে আসতে চাইলো এবং তারা জানতে পারল অলরেডি আমি দুইটি কোম্পানি নিয়ে কাজ করি। সেই জন্য তারা আমাকে ডাকল এবং আমাকে জানায় তারা বাংলাদেশে তাদের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ওভাবেই ইনস্ট্যান্ট ক্যাশের সঙ্গে কাজ শুরু করলাম ২০১৬ থেকে। ডিপ্রজন্ম : দেশে কাজ করার উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা কিভাবে পেলেন? সানজানা ফরিদ : ব্র্যাক সাজানে শুরু ২০১৭ সালের শুরুর দিকে। আমি আসলে এতদিন কাজ করছিলাম বিশ্বজনীন পণ্যর সঙ্গে। একটা সময় চিন্তা করলাম এই সুযোগটি লোকাল কোম্পানিকেও দিতে পারি। সেই কারণেই ব্র্যাক সাজানের সঙ্গে কাজ করা। ব্র্যাক থেকে যখন অফার পেলাম না করিনি। অনেকেই প্রশ্ন করেছিল কেন বিশ্বজনীন ব্যাংক ছেড়ে এসেছি। আমার ইচ্ছা ছিল লোকাল এরিয়াতেও আমাকে উপস্থাপন করব। তার জন্যই সাজানের সঙ্গে কাজ করা। এই সেক্টরে কাজ করছি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যখন কাজ করি বিষয়টা কেবল কাজ করায় সীমাবদ্ধ থাকে না মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় মানুষের সেবা। মানুষের কাছে আসার একটি মাধ্যম। প্রতিদিনই এগুলো নিয়ে পড়াশোনা করতাম। তো সাজান আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। একেবাড়ে ভিন্ন ধরার একটি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠাতা আবদুস সালাম ভাই। তার নামের সঙ্গে পরিচয় ছিল, ইচ্ছে ছিল তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিছু করার। দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। সাজান আমার জন্য একটা স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ডিপ্রজন্ম : তরুণদের জন্য কোন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন? সানজানা ফরিদ : আমরা চাকরির ক্ষেত্রে তরুণদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আমি যেমন একজন তরুণ উদ্যোক্তা তেমনি আমাদের অফিসের প্রচুর তরুণ-তরুণী কর্মরত আছেন। ডিপ্রজন্ম : তরুণরা যদি চাকরির আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে? সানজানা ফরিদ : প্রথমে আমি তাদের জন্য বলতে চাই ইতিবাচক চিন্তাধারা নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনার্স-মাস্টার্স থাকতে হবে। পার্টটাইমেরও সুযোগ আছে। অনেকেই পার্টটাইম কাজ করছে। ডিপ্রজন্ম- তরুণ প্রজন্ম কিভাবে ক্যারিয়ার নির্বাচন করবে? সানজানা ফরিদ : ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে অনেকেই খুব চিন্তিত থাকেন। কেউ কেউ ভাবছে আমার ক্যারিয়ারটা কেমন হবে, আমি কোথা থেকে শুরু করবো? প্রায় সবাই এর সমাধান চান। অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাও বুঝতে পারেন না ছেলে মেয়েকে কী নিয়ে লেখাপড়া করাতে হবে। সিদ্ধান্থহীনতার ফলাফল যেমন পিতামাতাকে নিতে হয়, তেমনি শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে যেতে পারে না। যে কোন মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে কিছু বিষয় আপনাকে মেনে চলতে হবে। নিজের প্রতিভা ও দক্ষতাকে চিহ্নিত করা। ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার আগে নিজের প্রতিভা এবং দক্ষতা সম্পর্কে জানতে হবে। যা নয় তা নিয়ে ভাবনা পরিহার করার মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। অন্যের সফলতা না দেখে নিজের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
×