ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাড়ির চাকায় নিহত হেলেনাকে হত্যার দায় স্বীকার দুই ছিনতাইকারীর

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

গাড়ির চাকায় নিহত হেলেনাকে হত্যার দায় স্বীকার দুই ছিনতাইকারীর

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ধানম-িতে ছিনতাইকারীদের প্রাইভেটকারের চাকায় পিষ্ট হয়ে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের আয়া হেলেনা বেগমের আলোচিত মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুই ছিনতাইকারী হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের সহযোগী আরও দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গ্রেফতারকৃত দুই ছিনতাইকারীর মধ্যে জাকির হোসেনের খামখেয়ালির কারণে হেলেনার মৃত্যু হয়। ওই মহিলাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অন্য তিন ছিনতাইকারী জাকিরকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু ভ্যানিটি ব্যাগে অনেক টাকা ও দামী স্বর্ণালঙ্কার থাকতে পারে- এ আশায় জাকির হেলেনাকে ছাড়ছিল না। কারণ হেলেনা বেগমও ব্যাগ ছাড়ছিল না। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ধানম-ির ৭ নম্বর সড়কে ছিনতাইকারীরা প্রাইভেটকারযোগে দ্রুতগতিতে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হেলেনা বেগমের (৩৮) ভ্যানিটি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। হেলেনা বেগম শক্ত করে ব্যাগটি ধরে রাখেন। এতে করে ব্যাগের সঙ্গে ছেঁছড়ে যেতে থাকেন হেলেনা বেগম। বেশ দূর যাওয়ার পর এক পর্যায়ে হেলেনা বেগম ব্যাগ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ব্যাগ ছেড়ে দেয়ার পর হেলেনা বেগম ধাক্কা খেয়ে ছিনতাইকারীদের প্রাইভেটকারের নিচে পড়ে যান। ছিনতাইকারীরা তার মাথার ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এতে সঙ্গে সঙ্গে মাথা থেঁতলে মৃত্যু হয় হেলেনা বেগমের। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়া থেকে হত্যাকা-ে জড়িত আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) নামে এক ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়। তার তথ্যমতে ২৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে হত্যাকা-ে জড়িত আরেক ছিনতাইকারী জাকির হোসেন (৩৫) গ্রেফতার হয়। উদ্ধার হয় হেলেনা হত্যায় ব্যবহৃত ঘাতক প্রাইভেটকারটি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আমিরুল হায়দার চৌধুরীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় জাকারিয়া হাওলাদার। সে জানায়, আব্দুল্লাহ, মিজান ও শিমুল ঘটনার দিন গত ২৬ জানুয়ারি সকালে গাড়িটি নিয়ে বের হয় ছিনতাইয়ের জন্য। গাড়িটি আব্দুল্লাহর। তারা ছিনতাইয়ের জন্য উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মতিঝিল ও ফকিরাপুল হয়ে গুলিস্তান যায়। সেখানে শিমুল এক নারীর ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর তারা ধানম-ির দিকে যায়। সেখানে এক পুরুষ ও এক নারী রাস্তা পার হচ্ছিল। ওই মহিলা রাস্তার ডিভাইডারের ওপরে ছিল। তার হাতে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ সে টান দেয়। হ্যাঁচকা টানের কারণে মহিলা রাস্তায় পড়ে গাড়ির নিচে চলে যায়। এরপর তার ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা। তারা পান্থপথ হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভারে ওঠে। ব্যাগে থাকা তিন শ’ টাকা নিয়ে সেটি ফেলে দেয়। শিমুলকে খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের নিচে নামিয়ে ওখান থেকে উত্তরা হয়ে আশুলিয়া-বাইপাইল চলে যায়। পর দিন আব্দুল্লাহ তাকে ফোনে টেলিভিশনে ধানম-ির সেই ছিনতাইয়ের ঘটনায় গাড়ির নিচে পড়ে ওই মহিলা মারা গেছে বলে দেখাচ্ছে বলে জানায়। এর আগে গ্রেফতার হয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি খুনী প্রাইভেটকারটির চালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলমের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। সে জানায়, সে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৪৪৫২ নম্বর গাড়িটির চালক। তবে গাড়িটির মালিক আব্দুল জলিল। গাড়িটি সে ভাড়ায় চালাত। আশুলিয়ার বাইপাইল রেন্ট-এ কারে জাকিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। জাকিরের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুরে। গত ২৫ জানুয়ারি কাজের কথা বলে জাকির তাকে ফোনে ডেকে নেয়। সে জাকিরের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ছিনতাই করত। ওইদিন একটা বিয়ের ট্রিপ ছিল। সেখানে ছিনতাইয়ের কথা ছিল। কিন্তু শিমুল ওরফে শ্যামল রাতে না আসায় আর বিয়ের ট্রিপে যাওয়া হয়নি। আর এজন্য ছিনতাইও করা হয়নি। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জনকণ্ঠকে বলেন, হেলেনা বেগম হত্যায় জড়িত আরও দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ওই দুইজন গ্রেফতার হলেই এ মামলার চার্জশীট দাখিল করা হবে।
×