ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শৈল্পিক প্রতিবাদে ভাষা শহীদদের স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শৈল্পিক প্রতিবাদে ভাষা শহীদদের স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালী জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ের বাহন বাংলাভাষা। বাঙালী রক্ত দিয়ে এ ভাষার বিরুদ্ধে তীব্র ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছিল বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি। দিনটি এদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজধানীজুড়ে বুধবার ছিল নানা আয়োজন। ছায়ানট ॥ নাটক আর সম্মেলক কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে ছায়ানট। বুধবার সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শুরুতে মঞ্চায়ন হয় মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘লাল জমিন’। এতে একক অভিনয় করেন মোমেনা চৌধুরী। মান্নান হীরার রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে নাটকের কাহিনী। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন জুলফিকার চঞ্চল ও রামিজ রাজু। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বারী সিদ্দিকী, রামিজ ও নীলা। এরপর বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। পরে সম্মেলক দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। কাজী নজরুল ইসলোমের ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা। শিল্পীরা পরে গেয়ে শোনান মোহিনী চৌধুরীর রচনা ও কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র সুরে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গানটি। সবশেষে পরিবেশিত হয় জাতীয় সঙ্গীত। এর আগে সকালে আজিমপুর সেনাক্যাম্পের সামনে প্রভাতফেরি করে ছায়ানট। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ॥ রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত মঞ্চে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালার শেষ দিন ছিল বুধবার। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় একুশের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ো মর্মবাণীকে সামনে রেখে ১৪ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে সংগঠনটি। এদিন সন্ধ্যায় গান, আবৃত্তি, নৃত্য আর পথনাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ॥ ভাষা শহীদদের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠান। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, মাহমুদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। আলোচনা পর্ব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে দলীয় পরিবেশনা উপস্থাপন করে সংগঠনের মিরপুর শাখার শিল্পীরা। এছাড়াও পরিবেশিত হয় একক গান ও আবৃত্তি। আজ থেকে শুরু হচ্ছে উদীচীর ভাষা অভিযাত্রা। শিল্পকলা একাডেমি ॥ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। এদিন দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতে বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দূতাবাসের সদস্যবৃন্দ। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে ফিলিপাইন, ডেনমার্ক, নেপাল, ফ্রান্স, ইরান কালচারাল সেন্টার, ইন্দোনেশিয়া, স্পেইন, কোরিয়া, ইন্ডিয়া ও জাপান এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পী ও সংগঠন। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিদেশী শিল্পীরা। বাংলাদেশী ভাষায় সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্য দল, ইরান কালচারাল সেন্টার ও ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। জাতীয় জাদুঘর ॥ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ কবিতা পাঠের আসর বসে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায়। কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা ॥ আলোচনাসভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা। সংগঠনের নিজস্ব মিলনায়তনে বুধবার সকালে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সহ-সভাপতি ড. রওশন আরা ফিরোজ, সদস্য আনিস রহমান এবং শিশু বক্তা আরিয়ান চৌধুরী ওম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেলার শিশু সদস্য ধ্রুব বণিক। অনুষ্ঠানে হাতের লেখা ও বানান প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা। সবশেষে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×