ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামালপুরের বকশীগঞ্জের আড়াই বছরের শিশুকে আসামি

প্রকাশিত: ০০:০৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জামালপুরের বকশীগঞ্জের আড়াই বছরের শিশুকে আসামি

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার জমির দলিল সংক্রান্ত বিরোধের এক মামলায় আড়াই বছরের শিশু আরিফকে আসামি করায় জামালপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ওই মামলাটির বাদী মো. আবুল হানিফকে তাৎক্ষণিক আটকাদেশ দিয়েছেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে। জামালপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওয়াহিদুজ্জামান সোমবার দুপুরে এ আদেশ দেন। ওই মামলার বাকি ছয়জন আসামি জামিন পেয়েছেন। আর শিশু আরিফকে তার মায়ের হেফাজতে থাকার আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জামালপুর জেলা জজ আদালতে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। মামলা সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেপারিপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল হানিফ ১ লাখ ১২ হাজার টাকায় প্রতিবেশী মো. ছোহরাব আলী ও তার স্বজনদের কাছ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ জমি ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বকশীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দানপত্র দলিল করে নেন। পরবর্তীতে ওই জমির দখল বুঝে না পেয়ে মো. আব্দুল হানিফ বাদী হয়ে মো. ছোহরাব আলীসহ সাতজনকে আসামি করে জামালপুর জেলা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আদালত থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। মামলাটির আসামিরা তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জামিনের আবেদন জানালে আদালত সোমবার জামিনের শুনানির দিন ধার্য্য করেন। মামলাটির আসামিরা হলেন মো. ছোহরাব আলী, আহাম্মদ আলী, মো. শাহামউদ্দিন, মো. টালী বেপারী, মো. জয়নাল আবেদিন, মো. ফজলুল হক ও মো. আরিফ। মামলার আরজিতে সাত নম্বর আসামি আরিফের নামের পাশে বয়স উল্লেখ নেই। বাকি আসামিদের বয়স উল্লেখ আছে এবং তাদের বয়স ৩০ বছর থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে। ওই মামলায় কোনো নারী আসামিও নেই। আরিফের বর্তমান বয়স মাত্র আড়াই বছর। আদালত সূত্রে জানা যায়, ওই মামলার আসামিদের জামিনের শুনানির ধার্য্য দিন সোমবার দুপুরে শুনানির সময় মামলার সাতজন আসামির মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক ছয়জন এবং শিশু বয়সের আসামি আরিফকে কোলে নিয়ে তার মা বিধবা রবিরন এজলাসে হাজির হন। এ সময় আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওয়াহিদুজ্জামান ছয়জন আসামি দেখে আরেকজন আসামি কোথায় জানতে চান। ওই মামলার কোনো নারী আসামিও নেই। এজলাসে হাজির বিধবা রবিরন আড়াই বছরের তার ছেলে শিশু আরিফকে দেখিয়ে আদালতকে জানান তার এই কোলের শিশুটিই মামলার সাত নম্বর আসামি। আসামি পক্ষের আইনজীবীরাও আদালতকে বিষয়টি অবহিত করেন। কোলের শিশুকে মামলার আসামি করায় এ সময় আদালতের বিচারক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং সাথে সাথে মামলার বাদী মো. আব্দুল হানিফের বিরুদ্ধে আটকাদেশ জারি করেন। এ সময় আদালতের পুলিশ মামলাটির বাদী মো. আব্দুল হানিফকে গ্রেপ্তার করেন। তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে বিচারক মো. ওয়াহিদুজ্জামন ওই মামলার বাকি ছয়জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। শিশুটির মা রবিরন তার কোলের সান্তানকে মামলার আসামি করার দায়ে মামলাটির বাদী মো. আব্দুর হানিফকে গ্রেপ্তার করায় খুব খুশিও হয়েছেন, আবার এতটুকু শিশুকে নিয়ে আদালতের মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। রবিরন আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, পাঁচ মাস আগে আমার স্বামী মো. আলী বেপারি মারা গেছেন। আমি ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করি। আমারে কি একটা বিপদে ফালাইছে। আপনেরাই কন এই এইটুক বাচ্চা জমিজমার কি বুঝে। মামলাটির বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. সুলতান উদ্দিন বলেন, বাদীর ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনা ঘটেছে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। অপরদিকে মামলাটির আসামি পক্ষের আইনজীবী টিটু কুমার সাহা এ বলেছেন, মামলাটি দায়ের হয় ২৬ জানুয়ারি। আজকে আসামিদের জামিনের আবেদন জানানোর সময় ওই মামলায় আরিফ নামের এক শিশুকে মামলার আসামি করার বিষয়টি নজরে আসে। জামিনের শুনানির সময় শিশু আরিফের মা বিধবা রবিরন কোলে করে আরিফকে সাথে নিয়ে অন্য আসামিদের সাথে এজলাসে দাঁড়ান। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটির ছয়জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেন এবং বাদী মো. আব্দুল হানিফকে আটকের আদেশ দেন। মামলাটির আরজি অনুযায়ী শিশুটি বর্তমানে মামলার আসামি হিসেবেই নথিভুক্ত থাকবে। তবে ওই আইন অনুযায়ী মামলা থেকে শিশুটি অব্যাহতি পাবে। এর জন্য আমরা আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছি।
×