ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

হাল না ছাড়ার ফল...

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

হাল না ছাড়ার ফল...

অবশেষে স্বপ্নের শিরোপায় চুমো খেলেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। দীর্ঘ প্রতিপক্ষার পর ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। শনিবার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিমোনা হ্যালেপকে পরাজিত করে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের স্বাদ পেলেন ডেনমার্কের এই টেনিস তারকা। ফাইনালে তিনি ৭-৬ (৭/২), ৩-৬ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন রোমানিয়ান তারকাকে। সেইসঙ্গে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও পুনরুদ্ধার করলেন তিনি। ৪৩তম প্রচেষ্টায় এসে জিতলেন ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা। ডেনমার্কেরও প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অবিস্বরণীয় কীর্তি গড়লেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। দুই ঘণ্টা ৪৯ মিনিট কঠিন লড়াইয়ের পর ওজনিয়াকি হাসলে শিরোপার হাসি। তবে এই পথটা সহজ ছিল না মোটেও। ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। এজন্য লড়াই করতে হয়েছে প্রায় এক যুগ। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২৭টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। জায়গা করে নেন টেনিসের শীর্ষস্থানেও। কিন্তু কোন গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পাচ্ছিলেন না ওজনিয়াকি। তবে ব্যর্থতায় কখনোই নুইয়ে পড়েননি তিনি। প্রতিটি টুর্নামেন্টেই নতুন প্রত্যয় নিয়ে কোর্টে নামেন ড্যানিশ টেনিস তারকা। গত বছরেও মেজর কোন শিরোপার স্বাদ না পাওয়া ড্যানিশ টেনিস তারকা বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে মৌসুমের পুরোটা সময়েই ছিলেন আলোচনার তুঙ্গে। তবে নতুন মৌসুমেই নতুন উদ্যমে কোর্টে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। ২০০৫ সালে কয়েকটি জুনিয়র টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সে বছরেই টেনিস কোর্টে আলো ছড়িয়ে প্রাদপ্রদীপের আলোয় ওঠে আসেন ওজনিয়াকি। তবে সিনিয়র পর্যায়ে বিশ্ব টেনিসপ্রেমীদের নজরে আসেন ২০০৯ সালে। নবম বাছাই হিসেবে ইউএস ওপেনে খেলতে নেমে সেবারই ফাইনালে জায়গা করে নেন তিনি। ডেনমার্কের প্রথম প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে কোন গ্র্যান্ডসøামের ফাইনাল খেলার বিস্ময়কর কীর্তি গড়েন ওজনিয়াকি। কিন্তু ফাইনালে বেলজিয়ামের কিম ক্লাইস্টার্সের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তার। তবে পরের বছরই নতুন কীর্তি গড়েন। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটি দখল করে নেন তিনি। টেনিস ইতিহাসের পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে কোন গ্র্যান্ডসøাম না জয়ের পরও র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার বিরল কীর্তি গড়েন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ জানুয়ারির মধ্যে ৬৭ সপ্তাহ ছিলেন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। সেই ড্যানিশ টেনিস তারকা যেন ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকেন। তবে দমে যাননি ২৭ বছরের এই খেলোয়াড়। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পেলেন তারই পুরস্কার। ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপার স্বাদ পেয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত ২৭ বছরের এই টেনিস তারকা। নিজের অভিতম প্রকাশ করতে গিয়ে ওজনিয়াকি বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই এই শিরোপার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমি। আমার কণ্ঠ এখনও কাঁপছে। আমি কখনোই কাঁদিনি। কিন্তু এই মুহূর্তটা সত্যিই আবেগের। না কেঁদে আর থাকতে পারিনি।’ তবে প্রতিপক্ষ সিমোনা হ্যালেপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে মোটেও ভুল করেননি তিনি। এ বিষয়ে ওজনিয়াকি বলেন, ‘সিমোনা হ্যালেপকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। কেননা, এই দিনটা তার জন্য খুব কষ্টের তা আমি খুব ভাল করেই জানি। এই ম্যাচটা আমার জেতার দরকার ছিল। তাই তার কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, ভবিষ্যতে আরও বহুবার একে অপরের মুখোমুখি হতে পারি আমরা।’ এদিকে বীরের মতো লড়াই করে হেরে যাওয়া সিমোনা হ্যালেপ ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কথা বলাটা মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। তারপরও শুরুতেই আমি ওজনিয়াকিকে অভিনন্দন জানাতে চাই। বিষ্ময়কর টেনিস খেলেছে সে। আমার জন্যও এই টুর্নামেন্টটা দারুণ কেটেছে। শিরোপা জিততে না পারার হতাশা ছুঁয়ে গেছে আমাকেও। সেজন্য আমিও খুব কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু ওজনিয়াকি আমার চেয়েও অনেক ভাল পারফর্ম করেছে।’ ক্যারোলিন ওজনিয়াকির জন্য এটা ছিল গ্র্যান্ডস্লামের তৃতীয় ফাইনাল। রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপেরও ঠিক তাই। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয়ী হয়েছেন ওজনিয়াকিই। তবে, রোমানিয়ান তারকার বিশ্বাস এবার না হলেও চতুর্থবারে হবে। এ প্রসঙ্গে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার পারিনি বলে হতাশ হচ্ছি না আমি। বরং লড়াই চালিয়ে যেতে চাই সবসময়ই। এবার যেমনটা খেলেছি আশা করি, এমন চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতে আরও গ্রহণ করতে পারবো। তৃতীয় বারের প্রচেষ্টায় আমি পারিনি বলে দুঃখিত তবে চতুর্থবারে ভাগ্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেই বিশ্বাস করি আমি।’ এদিকে পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রজার ফেদেরার। দুর্দান্ত খেলেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ষষ্ট শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন তিনি। সেইসঙ্গে ২০তম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়ে ফেদেরার ছাড়িয়ে গেলেন নিজেই নিজেকে। রবিবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মারিন চিলিচকে হারিয়ে বিশ্ব টেনিসে নতুন এক অধ্যায় রচনা করলেন তিনি। এই গ্রহের প্রথম এবং একমাত্র পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে ২০টি মেজর টুর্নামেন্ট জেতার নজির গড়লেন। ৩৬ বছর বয়সী ফেদেরার কঠিন লড়াইয়ের পর ৬-২, ৬-৭ (৫-৭), ৬-৩, ৩-৬ এবং ৬-১ গেমে পরাজিত করেন মারিন চিলিচকে। দীর্ঘ তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লড়াই করার পর শিরোপার স্বাদ পেলেন ফেদেরার। আটবার উইম্বলডন জেতার পাশাপাশি এ নিয়ে ছয়বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হলেন। এর আগে এই টুর্নামেন্টে ছয়টি শিরোপা জয়ের নজির আছে কেবল দুজনের। নোভাক জোকোভিচ এবং রয় এমারসনের। নতুন মৌসুমের শুরুতেই ক্যারিয়ারের ২০তম গ্র্যান্ডস্লাম জয়! দারুণ রোমাঞ্চিত ফেদেরার। সুইস তারকা বলেন, ‘অবিশ্বাস্য। আমি সত্যিই খুব খুশি। আরও একটি স্বপ্ন এসে ধরা দিল হাতের মুঠোয়। আমার রূপকথার গল্প যেন চলছেই।’
×