ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুষ্টিগুণে ভরপুর আমলকী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

পুষ্টিগুণে ভরপুর আমলকী

দেশের সর্বত্র আমলকী পাওয়া যায়। ছোট ফল দামে সস্তা কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমলকীর ফল থেকে শুরু করে পাতা এবং ছাল ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার জন্য উপকারী। শরীরে ভিটামিন ‘সি’ এর অভাব মেটাতে আমলকীর জুড়ি নেই। ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে যেসব রোগ হয় যেমন- স্কার্ভি, মেয়েদের লিউকরিয়া, অর্শ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমলকী খেলে উপকার পাওয়া যায়। আমলকী খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ভাল থাকে। এছাড়া লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে দাঁত ও নখ ভাল রাখে। হার্টের রোগীর জন্য নিয়মিত আমলকী খাওয়া খুবই উপকারী। হার্টের রোগীরা আমলকী খেলে ধরফরানি কমবে। টাটকা আমলকী খেলে তৃষ্ণা মেটে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বন্ধ করে, পেট পরিষ্কার করে। আমলকী খেলে মুখে রুচি বাড়ে। এছাড়া আমলকী ক্ষুধা বাড়ায় ও শরীর ঠাণ্ডা রাখে। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশির জন্যও খুবই উপকারী। পিত্ত সংক্রান্ত যে কোন রোগে সামান্য মধু মিশিয়ে আমলকী খেলে উপকার পাওয়া যায়। বার বার বমি হলে শুকনো আমলকী এককাপ পানিতে ভিজিয়ে ঘণ্টা দুই পর সেই পানিতে একটু শ্বেত চন্দন ও চিনি মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়। আমলকী ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত আমলকী খেলে ব্রণের দাগ দূর করে সেইসঙ্গে দেয় সতেজ ও মসৃণ ত্বক। কাঁচা আমলকী বেটে চুলে লাগালে চুলের গোড়া শক্ত হয় সেইসঙ্গে অকাল পক্বতা দূর হয়। এছাড়া চুল ঝরঝরে থাকে এবং চুলের রং কালো হয়। আমলকী বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রাতে ভাল ঘুম হয় ও মাথা ঠাণ্ডা থাকে। রাতে আমলকীর সঙ্গে বহেরা ও হরতকী মিশিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরেরদিন সকালে খালি পেটে খেলে কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তিন থেকে চার গ্রাম শুকনো আমলকীর গুঁড়া এক চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে এক সপ্তাহ খেলে বহুমূত্র রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমলকী বেটে তার সঙ্গে সাদা চন্দন ভালভাবে মিশিয়ে কপালে ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫ গ্রাম আমলকী পাতার রসের সঙ্গে পরিমাণ মতো চিনি মিশিয়ে এক মাস খেলে চিরতরে অম্ল রোগ ভাল হয়ে যায়। আমলকীতে রয়েছে সুস্বাস্থ্যের নানা উপাদান। কিন্তু কষটে স্বাদের কারণে উপকারী এই ফলটি কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন না অনেকেই। আমলকীতে রয়েছে আশ্চর্য সব ভেষজগুণ। ত্বক, চুল ও চোখের যতœ থেকে ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধেও ক্ষুদ্র আকৃতির এই ফল রাখতে পারে বিরাট ভূমিকা। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকীতে রয়েছে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের ক্ষমতা। আমলকীর ফাইটো-কেমিক্যাল চোখের জন্য উপকারী। হজম ও দেহের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে আমলকী। শারীরিক সুস্থতায় তাই প্রতিদিন অন্তত একটি আমলকী খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। আমলকী সাধারণত কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া হয়। টক ও কষটে স্বাদের কারণে অনেকের কাছে আমলকী খেতে ভাললাগে না। তারা চাইলে উপকারী এই ফল খেতে পারেন ভিন্ন উপায়েও। অন্য অনেক ফলের মতো আমলকীও ব্লেন্ডার দিয়ে জুস বানিয়ে খাওয়া যায়। কুচি করে কেটে সামান্য পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে সহজেই বানানো যায় আমলকীর জুস। কষটে স্বাদ দূর করার জন্য মেশাতে পারেন চিনি বা মধু। লবণ আর লবণের রস মেখে রোদে শুকিয়েও খাওয়া যায় আমলকী। হজমের ঝামেলা পরিত্রাণের জন্য ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন আচার বা চাটনি বানিয়ে। যদিও এখন বছরজুড়েই আমলকী কিনতে পাওয়া যায়। তবে বছরজুড়ে ঘরেও সংরক্ষণ করে রাখা যায় ভেষজ এই ফল। মাঝারি আকারে কেটে মিনিট তিনেক পানিতে ফুটিয়ে নেয়ার পর লবণ, আদা কুচি, লেবুর রস ও সরিষার তেল মেখে রোদে শুকিয়ে সারা বছর সংরক্ষণ করা যায় আমলকী। আমলকী খাওয়া যায় গুঁড়া করেও। সেজন্য আমলকী টুকরো করে শুকিয়ে নিতে হবে। পরে শুকনো টুকরা গুঁড়া করে বয়ামে রেখে খেতে পারবেন সারা বছর। এর সঙ্গে যুক্ত করে নিতে পারেন মধু ও মাখন। পানিতে চিনির সঙ্গে আমলকীর গুঁড়া মিশিয়ে খেতেও মন্দ লাগবে না। যাপিত ডেস্ক
×