ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জুনিয়র টেনিসে, বালিকা এককের শিরোপা জেতা চীনের ঝ্যাং ওয়ানের অভিব্যক্তি

‘জন্মদিনে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ক্যারিয়ারে এই প্রথম’

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১২ নভেম্বর ২০১৭

‘জন্মদিনে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ক্যারিয়ারে এই প্রথম’

রুমেল খান ॥ মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে কিছু মধুর মুহূর্ত আসে। যেমন জন্মদিন। ঢাকায় ‘বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জুনিয়র টেনিস প্রতিযোগিতা’ খেলতে আসা সুদর্শনা চীনের ঝ্যাং ওয়ান য়ির চতুর্দশ জন্মদিন ছিল শনিবার। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও জন্মদিন উদযাপন করতে পারেনি সে। কারণ ওইদিন রাতেই তাকে রাজশাহী চলে যেতে হয় আরেকটি টুর্নামেন্ট খেলার জন্য। তবে জন্মদিন পালন করতে না পারলেও কোন আক্ষেপ নেই তার। কারণটা অবশ্যই চমকপ্রদ। শনিবারই সে বালিকা এককের শিরোপা জিতেছে। এই প্রতিবেদককে সে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানায়, ‘জন্মদিনের পার্টি করতে না পারায় মোটেও কোন দুঃখ নেই। কেননা জন্মদিনেই সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা পেয়ে গেছি শিরোপা জিতে।’ ২০০৩ সালের ১১ নবেম্বর চীনের বেজিংয়ের হাই দিয়ান প্রদেশে মা ঝুই হুইয়ের (বর্তমানে বেজিংয়ের ফিলিপস কোম্পানিতে কর্মরত) গর্ভে জন্ম নিয়ে পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখা ঝ্যাংয়ের (ডাকনাম ওয়েন্ডি) ক্যারিয়ারে মোট শিরোপা সংখ্যা ২০টি (সবগুলোই একক)। আগের ১৯টির কোনটিই জন্মদিনে জেতা হয়নি। ২০তম ট্রফিটি জেতা হলো বাংলাদেশে এবং জন্মদিনে! কাজেই বাংলাদেশ তো ওয়েন্ডির কাছে স্পেশাল হবেই, ‘জন্মদিনে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ক্যারিয়ারে এই প্রথম এবং ঘটনাটা ঘটেছে বাংলাদেশে। তাই এই দেশকে জীবনেও ভুলব না। ওহ্ হো, আরেকটা কথা বলা হয়নি। আমার এই শিরোপাটি কিন্তু আইটিএফ পর্যায়ে প্রথম। ফলে বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশ কেন আমার হৃদয়ে আজীবন গেঁথে থাকবে।’ ওয়েন্ডি তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। যখন তাকে প্রশ্ন করা হলো তার আর কোন ভাই-বোন আছে কি না এবং তারাও খেলোয়াড় কি না, তখন খিলখিল করে হেসে উঠলো ওয়েন্ডি। জাতিগতভাবেই চীনাদের চোখ ছোট বা কুতকুতে। যখন তারা হাসে, তখন চোখ দুটো আরও ছোট হয়ে যায়। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাসছেÑ এমন ভ্রম হতেই পারে! যাহোক, হাসি থামিয়ে ওয়েন্ডি জানালো, ‘আমাদের চীনে তো এক সন্তান নীতি। কাজেই আমার আর কোন ভাই-বোন নেই।’ কাজেই বোকা বনে যাওয়া আর কোন উপায় রইলো আর এ কথা শুনে (চীনের এই নিয়মের কথা অবশ্য আগেই জানা ছিল, কিন্তু মনে ছিল না)। ওয়েন্ডির বয়স যখন মাত্র পাঁচ, তখনই হাতে টেনিস র‌্যাকেট তুলে নেয় সে। এর পেছনে একটা ছোট গল্প আছে তার, ‘আমার বাবা ঝ্যাং জু দংয়ের বয়স ৫০। তিনি গত ৩৫ বছর ধরে টেনিস কোচ হিসেবে কাজ করছেন। অথচ তাকে দেখেও আমি টেনিস খেলতে আগ্রহী হইনি। কিন্তু টিভিতে যখন মারিয়া শারাপোভার খেলা দেখলাম, তখন তার সবকিছু এতটাই ভাল লেগে গেল যে, সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে টেনিস খেলোয়াড় হতেই হবে। বাবাকে ইচ্ছের কথা জানালাম। তিনি মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে অনুমতি দিলেন। এভাবেই শুরু।’ রুশকন্যা শারাপোভায় অনুপ্রাণিত হলেও ওয়েন্ডির আদর্শ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামস! ‘কারণ আমি যেভাবে পাওয়ার টেনিস খেলি, সেরেনাও সেভাবেই খেলে।’ নিজ দেশের গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ী মহিলা টেনিস তারকা লি না আদর্শ নয় কেন? ওয়েন্ডির ব্যাখ্যা, ‘লি না যখন গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতেন, তখন আমি খুবই ছোট। কিছুই বুঝি না। কিন্তু বড় হয়ে সেরেনাকে দেখেছি, দেখছি। তাই সেরেনাই আমার আদর্শ। তবে লি না-ও গ্রেট খেলোয়াড়। তার সঙ্গে আমার দু’বার দেখা ও কথা হয়েছে। তবে হাই-হ্যালো ছাড়া আর কিছু বলার সুযোগ পাইনি।’ দু’হাতে ব্যাকহ্যান্ড খেলা ওয়েন্ডির শক্তিশালী দিক হচ্ছে ফোরহ্যান্ড। ২০১৫ সালে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইতুসা টেনিস একাডেমিতে ভর্তি হয়েছিল সে। তবে শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত ওয়েন্ডির কোচ হিসেবে আছেন তার বাবাই। দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ওয়েন্ডি এই প্রথম এলো বাংলাদেশে। সবকিছু কেমন লাগছে? ‘দারুণ। এখনকার মানুষজন খুব ভালমনের, সহযোগিতাপরায়ণ এবং হাসিখুশি। এখানকার খাবার খেয়েও খুব মজা পেয়েছি। সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছি রিক্সা চড়ে। কয়েকবারই চড়েছি। এক রিক্সাওয়ালাকে পেয়েছি মোটামুটি ইংরেজীতে কথা বলতে পারে! তার সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি ইংরেজীতে। এখানকার আবহাওয়া বেশ সহনীয়ই। যুক্তরাষ্ট্রে তো ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খেলেছিলাম।’ গত অক্টোবরে চীনে একটি টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে স্বদেশী কু ইয়াংকে ৩-৬, ৬-৪, ৬-২ গেমে হারায় ওয়েন্ডি। ওই ম্যাচটি তার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় ম্যাচ, ‘প্রথম সেটে হেরে যাই। দ্বিতীয় সেটে ৪-৪ অবস্থায় একবার সে এ্যাডভান্টেজ পায়, আবার আমি পয়েন্ট পেয়ে সমতা আনি। এভাবে অনেকক্ষণ চলেছিল। পরে ওই সেটটা আমিই জিতি। তৃতীয় সেটে জিতে ম্যাচ উইন করি।’ বেজিংয়ের হাই দিয়ান ওয়াই গুই ইউ স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া ওয়েন্ডির স্বপ্ন বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় হওয়া এবং গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতা। শখ হচ্ছে ইতিহাস এবং উপন্যাস পড়া, ইংরেজী মুভি দেখা। ব্রুস লি-জ্যাকি চান পছন্দ না? ‘অবশ্যই। খানিকটা কুংফু-কারাতেও জানি। তবে আমার পছন্দ বক্সিং।’ এখন দেখার বিষয়, রাজশাহীতে ১৩ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া আরেকটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে এখানেও বাজিমাত করতে পারে কি না ওয়েন্ডি।
×