ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাদের জমির ধান কেটে নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের জমির ধান কেটে নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহার কিছুটা আশার আলো দেখালেও পাশাপাশি শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের রোপণ করা ধান কেটে নেয়ার কাজটিও। সরকারের নির্দেশে এই ফসল তুলে নিচ্ছে দেশটির কৃষি অধিদফতর। এতে দেখা দিয়েছে এক ধরনের সংশয়। কেননা, রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন কেড়ে নেয়া এবং তাদের ফেরানোর কাজটি একসঙ্গে হতে পারে না। দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যেন ফিরতে নিরুৎসাহিত হয় সেই পরিস্থিতি বজায় রাখার কাজটিও চলছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। রাখাইন থেকে পাওয়া তথ্যে এটুকু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, সেখানে নির্যাতন এখন বন্ধ। উত্তর রাখাইনের মংডু থেকে কিছুসংখ্যক সেনা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আংশিক এ প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকার বিশ্বের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আশার আলো দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কতটা আন্তরিক তা প্রশ্নবিদ্ধ তাদের বিপরীতমুখী কর্মকান্ডে। সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী ২শ’ সৈন্যকে রাখাইনের রাজধানী সিটওয়েতে (আকিয়াব) ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে কমপক্ষে ১শ’ সৈন্য মংডুতে মোতায়েন থাকবে। মিয়ানমারের সুচি সরকার ইতিবাচক কিছু বক্তব্য রাখলেও ক্ষমতার কলকাঠি সে দেশের সেনাবাহিনীর হাতেই বলে প্রতীয়মান। দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান তার ফেসবুক পেজে যে বক্তব্য রেখে থাকেন তা খুবই গুরুত্ব বহন করে। সেনা প্রধানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, মংডু শহরে সংঘাত থেমে যাওয়ায় উত্তর রাখাইনে ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সামরিক অভিযান সংকুচিত করা হয়েছে। প্রত্যাহার করে নেয়া সৈন্যরা এখন থেকে অতিরিক্ত বাহিনী হিসেবে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটওয়েতে মোতায়েন থাকবে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ধান কেটে নিচ্ছে সরকার ॥ রাখাইন প্রদেশ থেকে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে ৭১ হাজার একর জমিতে আবাদ করা ধান ফেলে। সে ধান পেকে কাটার উপযুক্ত হয়েছে। কিন্তু ফসলের মালিক নেই। এ অবস্থায় সরকারী আদেশে সে দেশের কৃষি অধিদফতর পাকা ধান কাটা শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পর তাদের ক্ষেতের ফসলও কেটে নেয়ায় মিয়ানমার সরকার এ জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনে কতটুকু আন্তরিক সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সরকারী আদেশে রবিবারই শুরু হয়েছে মংডু এলাকার মিউ থুজি গ্রামে ধান কাটা। এর জন্য বাইরে থেকে শ্রমিক আনা হয়েছে। একটি দেশের সরকার কিভাবে সাধারণ মানুষের রোপিত ফসল কেটে নিতে পারে সে প্রশ্ন রাখা হয়েছে সে দেশের কৃষি দফতরের কাছে। রোহিঙ্গাদের উৎপাদিত এ ফসল কি করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মংডু কৃষি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা থেইন ওয়েই কোন জবাব দিতে পারেননি বলে জানিয়েছে এএফপি। এদিকে, রোহিঙ্গাদের ফসল কেটে নেয়ায় গভীর উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচ। সংস্থাটির কর্মকর্তা ফিল রবার্টসন বলেন, সরকারী উদ্যোগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ফসল কাটার ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক। এর মাধ্যমে সম্ভবত মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের একটি বার্তা দিতে চাচ্ছে যে, এদেশে তোমাদের আর কিছুই নেই। সবকিছুই সরকারের। তোমাদের আর ফিরিয়েও নেয়া হবে না। রাখাইনে ত্রাণ বিতরণের ফটোসেশন ॥ জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় হয়েছে দেশটির সরকার। সরকারী উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে উত্তর রাখাইনের মংডুসহ কয়েকটি এলাকায়। তবে সে তৎপরতা ফটোসেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা জানাচ্ছেন, ত্রাণ দেয়া হবে এমন ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গাদের আসতে বলা হয় নির্দিষ্ট একটি জায়গায়। ত্রাণের জন্য তারা দাঁড়াচ্ছে দীর্ঘ লাইনে। এই লাইনের ছবি নেয়া হচ্ছে, ত্রাণ বিতরণের ছবিও গৃহীত হচ্ছে। ফটোসেশন শেষে সেই ত্রাণ আবার কেড়েও নেয়া হচ্ছে। এরপর রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে খুবই অল্প পরিমাণ সামগ্রী, যা দিয়ে একবেলা খাওয়াও দুষ্কর। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং দেশের কাছে মিয়ানমার সরকারের মানবিক তৎপরতা তুলে ধরার জন্য এ ধরনের জঘন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে সেনাবাহিনী। বাহিনীর পক্ষ থেকে এখন নির্যাতন আগের মতো না থাকলেও নানা কৌশলে কঠিন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। কুতুপালংয়ে আরও ৫ পুলিশ ক্যাম্প ॥ আশ্রিত রোহিঙ্গারা মারামারি এবং নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন সরকার। এ অবস্থায় তাদের নজরদারিতে রাখতে কুতুপালংয়ে নতুন করে আরও ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে এ নির্দেশনা কার্যকর করবে কক্সবাজার পুলিশ প্রশাসন। শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যেন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়াতে না পারে সে জন্য কাজ করবে পুলিশ। রবিবার ঢাকায় সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পুলিশকে এ ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। বৈঠকে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রসঙ্গত, নতুন করে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটায় আগের জনবল দিয়ে শৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে কক্সবাজার পুলিশ প্রশাসন। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ক্যাম্প থেকে পালানো ৩ রোহিঙ্গা আটক ॥ সহিংসতার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ও বালুখালি ক্যাম্পে সীমাবদ্ধ রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই রয়েছে চাকরি এবং ব্যবসার খোঁজে। কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্নস্থানে এখন রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে। রবিবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর শান্তিপাড়া থেকে ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলো উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পের নছিউল্লাহর পুত্র আনিস উল্লাহ (১৭), এরশাদ উল্লাহর পুত্র এনায়েত উল্লাহ (১৬) এবং কুতুপালং ক্যাম্পের মুসা আলীর পুত্র আজিম উল্লাহ (৪০)। হালিশহর থানার এসআই সোহেল রানা জানান, এরা চাকরির খোঁজে উখিয়ার দুই ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসেছিল। এরমধ্যে একজনের কাছে ক্যাম্পের দেয়া বায়োমেট্রিক কার্ডও রয়েছে। ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে নানা ধরনের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও অনেক রোহিঙ্গাই বাড়তি আয়ের জন্য চাকরির খোঁজে রয়েছে। রোহিঙ্গা হামলায় বাংলাদেশী নাগরিকের মৃত্যুর তদন্তে পুলিশ ॥ কক্সবাজারের রামুতে রোহিঙ্গা হামলায় এক বাংলাদেশী নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় ইতোমধ্যেই ২ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান অপরাধমূলক তৎপরতায় উদ্বিগ্ন পুলিশ ক্যাম্প এলাকায় তৎপরতাও বাড়িয়েছে। রামুতে হামলার ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী এর সঙ্গে আর কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তা উদঘাটনে তদন্ত করছে পুলিশ। এছাড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সরকার নির্ধারিত ক্যাম্প এলাকায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চলছে। উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে রামুর খনিয়াপালংয়ে রোহিঙ্গা যুবকের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত হয়েছে আবদুল জব্বার নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। পালিয়ে যাবার সময় রোহিঙ্গা যুবক জিয়াবুলকে আটক করে রামু থানায় সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। পরে আরও একজনকে আটক করা হয়। ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা নারী আটক ॥ রাখাইন থেকে পালিয়ে আসার সময় অনেকেই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ও নিষিদ্ধ পণ্য। এখন তারা সেগুলো বিক্রির চেষ্টায়। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের আমগাছতল থেকে শনিবার রাতে র‌্যাবের এক অভিযানে আটক হয়েছে ফাতেমা খাতুন (৪০) নামের এক রোহিঙ্গা নারী। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৯ হাজার ৮শ’ ইয়াবা ট্যাবলেট, যার মূল্য প্রায় ৪৯ লাখ টাকা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি টিম সেখানে অভিযান চালায়। জিজ্ঞাসাবাদে এই নারী স্বীকার করে যে, বিভিন্ন মাদক চক্রের সহযোগিতায় সে ইয়াবার ব্যবসা করে থাকে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্ধার করা ইয়াবা ও ওই নারীকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শিশুর শরীরে এইডস শনাক্ত ॥ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এইচআইভি পজেটিভ পাওয়া গেছে আও এক শিশুর শরীরে। এ নিয়ে এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। এরমধ্যে ১৮ নারী, ১০ পুরুষ এবং ৫ শিশু। এইডস আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এক নারীর মৃত্যুও হয়েছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহীন আবদুর রহমান জানান, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের শরীরে কী কী রোগ থাকতে পারে তার পরীক্ষা চলছে। তাদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এইডস রোগীও। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া রোগীদের পরীক্ষায় এইচআইভি পজেটিভ নিশ্চিত হওয়া গেলে সরকারীভাবে বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। আক্রান্ত ৩৩ রোগীর মধ্যে ২২ মিয়ানমার থেকে এই ভাইরাস শনাক্ত করে আসেন। মানবিক সহায়তা দান কার্যক্রম অব্যাহত ॥ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় সরকার এবং দেশী-বিদেশী সংস্থার উদ্যোগে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে ক্যাম্পে কাজ করছে ৩৬ মেডিক্যাল টিম। এ পর্যন্ত ৪ লাখ রোহিঙ্গাকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার অস্থায়ী ঘর নির্মাণের বিপরীতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২২ হাজার ৪১৮ ঘর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নতুন ক্যাম্প এলাকায় নির্মিত হয়েছে ২০ প্রশাসনিক ব্লক। অগ্নি নির্বাপণ কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে উখিয়ার রাবার বাগান এলাকায় একটি এবং টেকনাফের উনচিপ্রাংয়ে একটি অস্থায়ী ফায়ার সার্ভিস ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশ বিষাক্ত ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ভারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সেখানকার জনজীবন। হাজার হাজার একর বনভূমি ও পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, জ্বালানি হিসেবে সামাজিক বনায়ন ধ্বংস, যততত্র পয়ঃনিষ্কাশনের ফলে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। টেকনাফজুড়ে যানজট ছাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবহন ভাড়া। কোন কোন ক্ষেত্রে ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। যানজট সমস্যা এবং অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে কষ্টকর হয়ে পড়েছে উখিয়া-টেকনাফের স্থায়ী বাসিন্দার জীবনযাত্রা। ব্যয়বহুল জীবনে তাদের কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের ওপর। সেখানে এক ধরনের অসম এবং ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আমাদের চেয়ে রোহিঙ্গারা অনেক বেশি ভাল আছে। তাদের জন্য সরকারী-বেসরকারী নানা ধরনের সহায়তা রয়েছে। একসঙ্গে এত রোহিঙ্গার চাপ পড়ায় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। ভোগ্যপণ্যের দুর্মূল্য রোহিঙ্গাদের ওপর না পড়লেও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে স্থানীয় অধিবাসী। এদিকে, পরিবেশের ওপরও প্রভাব পড়েছে মারাত্মক। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দুপাশে অধিকাংশ জায়গাজুড়ে ছিল সবুজ বনানী। কিন্তু এখন সেখানে গাছ নেই, রয়েছে কালো পলিথিনের তৈরি সারি সারি ঝুপড়ি ঘর। যতই দিন যাচ্ছে, বাড়ছে ঝুপড়ি ঘরের সংখ্যা। রোহিঙ্গাদের কোন ধারণাই নেই পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র সম্পর্কে। যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ এবং আবর্জনা ফেলায় নষ্ট হচ্ছে টেকনাফ এবং উখিয়ার পরিবেশ। অনেক পাহাড় এরই মধ্যেই বিরান হয়েছে। পরিবেশ ক্রমশ বিপর্যয়ের মুখে ধাবিত হওয়ায় উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদীরা।
×