ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘উন্নয়ন মেলা ২০১৭’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুহিত

আওয়ামী লীগ যতক্ষণ ক্ষমতায় ততক্ষণ উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

আওয়ামী লীগ যতক্ষণ ক্ষমতায় ততক্ষণ উন্নয়ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততক্ষণ দেশের উন্নয়ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি আরও বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণভাবে জনগণের সেবায় নিয়োজিত। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একমাত্র লক্ষ্যমাত্রা হলো দারিদ্র্য দূর করা। সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য আমরা সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। আগামী ২০২৪ সালের পর দেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না। রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘উন্নয়ন মেলা-২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ছয় দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফের এমডি আব্দুল করিম। এবারের মেলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে গবেষণা, আইটি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে ৯০ টি প্রতিষ্ঠানের ১৩৩টি স্টল মেলায় স্থান পেয়েছে। উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার ও আব্দুল হাসিব খানকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়া এবারের মেলায় প্রান্তিক পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্যের সমাহার বসেছে। সুলভমূল্যে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সবই পাওয়া যাচ্ছে উন্নয়ন মেলায়। সবাই গুণগত মান নিয়েও বেশ সতর্ক রয়েছেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে এখনও ২২ শতাংশ দারিদ্র্য জনসংখ্যা রয়েছে। সে হিসেবে তিন লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এটা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এ হার আরও কমিয়ে এনে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ এলাকা এখন উন্নত। গ্রাম ও শহরের মধ্যে এখন কোন পার্থক্য নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত ও যোগাযোগসহ সবক্ষেত্রে মানুষ সমান সুফল ভোগ করছে। দারিদ্র্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে জাতিসংঘ ২০৩০ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, বাংলাদেশ তার বেশিরভাগই ২০২৪ সালের মধ্যে অর্জন করতে পারবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। মুহিত বলেন, সরকার দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পিকেএসএফ সরকারের সেই পদক্ষেপকে তাদের উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে আরও বেগবান করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, এ সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এটা সরকারের নিজস্ব তহবিলের টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়। বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। পরে অবশ্য বৈদেশিক সহায়তা নেয়া হয়। তবে বিদেশী সহায়তায় শুরু থেকে যে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় তারাও দেশের উন্নয়নে কাজ করে। পিকেএসএফের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, পিকেএসফ ২৭ বছর হয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাদের ২৭৭টি সহোযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পিকেএসএফের এ উন্নয়ন মেলাকে স্বাগত জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, আগামীতে এই কর্মকান্ড একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে বলে আশা করছি। সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পিকেএসএফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। টেকসই উন্নয়নে পিকেএসএফ সরকারের সহায়ক ভূমিকায় কাজ করছে। তিনি বলেন, উন্নয়ন সাধনে সরকারকে গণমুখী হতে হবে। সরকার গণমুখী না হলে কোন সংস্থার একার পক্ষে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। আর বর্তমান সরকার সেটিই করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক রেখায় আনতে পিকেএসএফকে কাজ করার আহ্বান জানান মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে কথা বলেছে, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এসময় তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা এমডিজি অর্জন করেছি। এখন শেখ হাসিনার সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করছে। উন্নয়নের ইতিহাস ঘাটলে জনগণ দেখতে পাবে কারা উন্নয়ন করেছে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, অধিকার ও উন্নয়নে একযোগে কাজ করছে পিকেএসএফ। অধিকার নাকি উন্নয়ন আগে, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আমরা অধিকার ও উন্নয়নে একযোগে কাজ করি। তিনি বলেন, উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। রাজনীতি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফলে আমরা উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, আমরা দেশের প্রতিটি উপজেলায় কাজ করছি। আমরা প্রশিক্ষণ, বাজার সহায়তা, প্রযুক্তি, উপযুক্ত ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি। তিনি আরও বলেন, ২৩টি সহযোগী সংস্থা নিয়ে ১৯৯০ সালে ১০ হাজার ১২ উদ্যোক্তার সহযোগিতায় পিকেএসএফ কাজ শুরু করে। বর্তমানে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা উন্নীত ২৭৭টি। এসব সংস্থার ৮ হাজার ৬২৮টি শাখার মাধ্যমে ১ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার সদস্য প্রান্তিক মানুষ ও যারা একটু স্বাবলম্বী তাদের আরও উন্নত করতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পিকেএসএফ তাদের ঋণ দেয় ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং নিবিড়ভাবে তদারকি করে। কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, সারা দেশে ইতোমধ্যে ৫২ হাজার নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এক হাজার ভিক্ষুককে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর মধ্যে একজন টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলেছে, আমি ভিক্ষা ছাড়তে পারব না। আর ১৯ জন উন্নয়ন করতে পারেনি। বাকিরা এখন স্বাবলম্বী। তিনি বলেন, পিকেএসএফ এখন প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে কাজ করছে। আগে পিকেএসএফ ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করত না। আর এখন ১৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হয় না। আমার গবেষণায়ও এ বিষয়টি উঠে এসেছে। এ কারণেই আমরা মানুষের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঋণ নিল, আবার ঋণ আদায় হলো-এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা ঋণ নেয়া লোকটির কী হলো, তার দিকে নজর দিচ্ছি। তাই এখন আমরা টাকা দিয়েই ক্ষান্ত থাকি না, বরং ঋণ গ্রহীতাকে আগে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
×