ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিনদিনের টানা বর্ষণ শেষে নিম্নচাপ দুর্বল, রবিবারের সকাল শুরু ঝলমলে রোদে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

তিনদিনের টানা বর্ষণ শেষে নিম্নচাপ দুর্বল, রবিবারের সকাল শুরু ঝলমলে রোদে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে ব্যাপক বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে পড়েছে। দু’দিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে গিয়ে রবিবার থেকে অন্যরকম দিনের সূচনা হয়েছে। এদিন সারাদিন আবহাওয়ার পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আকাশে ছিল না কোন মেঘ। বৃষ্টির দেখা মেলেনি। সকালটা শুরু হয় সূর্যের রৌদ্রদীপ্ত উজ্জ্বল আলোয়। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে গেলেও বাতাসে শীতলভাব লক্ষ্য করা গেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়লে শীতল ভাব কেটে যাবে। তবে তারা উল্লেখ করেন সামনে শীত ঋতু। তাই প্রকৃতিতে এখন ঠান্ড ভাব থাকবেই। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, স্থল নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় দেশের উপকূলে আর কোন ধরনের ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে এর প্রভাবে দেশে বিভিন্ন স্থানে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপতের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে দুদিনের অবিরাম বর্ষণে দেশে আমণসহ, শীতের শাকসবজি এবং উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল এখনও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। আমনের ক্ষতিতে কৃষকের স্বপ্ন ধূলিস্যাত হয়ে গেছে। এদিকে দুর্যোপূর্ণ আবহাওয় কেটে যাওয়ার পর সারাদেশে নৌচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আবহাওয়াবিদ মুহম্মদ আরিফ হোসেন কিশোরগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও পরবর্তীতে লঘুচাপে পরিণত হয়ে রবিবার সকাল নয়টায় সিলেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থন করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। তিনি জানান চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে সতর্ক সঙ্কেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্তও সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়। সাগরে সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে দেশের ওপর দিয়ে শুরু হয় অবিরাম বর্ষণ। দুদিনের সুর্যোগের মুখ পর্যন্ত দেখা যায় যায়নি। আবহাওয় অফিস জানিয়েছে রবিবার সকাল ৬টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ফেনীতে ২৭২ মিলিমিটার। এছাড়া নিকলিতে ১৯০, কুমিল্লায় ১৩২, সন্দ্বীপে ১২০, হাতিয়ায় ১৫১, টাঙ্গাইল ১০১, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায় ৯১ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তবে রবিবার সকাল শুরু হতে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। দেশের কোথাও দুর্যোগপূর্ণ কেটে গিয়ে অন্যরকম একটি দিনের সূচনা হয়। সকাল থেকেই আকাশে মেঘ কেটে গিয়ে রোদ ঝলমলে একটি দিনের সূচনা হয়। সারাদিন ছিল সূর্যের নরম রোদ আর নীল আকাশের মিশেল। রবিবার দিনের পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় ছিল না একদিন আগেই দেশে বৈরী আবহাওয়ায় দেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে ছিল। তবে দেশের ওপর থেকে বৈরী আবহাওয় কেটে গেলেও শীতল বাতাস অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে অধিক বৃষ্টিপাতে তাপমাত্রা কমে গিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুদিন পর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে শীতলভাব কেটে যবে। এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় দেশে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাও স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি এবং লঞ্চ চলাচল সচল হয়েছে। পদ্মার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথও এদিন সচল হয়েছে। এ রুটে ফেরি, স্পীডবোট ও লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান স্বাভাবিক হয়েছে। দুই দিন পর আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় সারাদেশে নৌ চলাচলে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ। গত দুদিন রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার নৌচলাচলের ওপর বিধিনিষেধ জারি করে বিআইডব্লিউটিএ। রবিবার সকালে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় পৌনে ৭টা থেকে সব ধরনের নৌ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ ॥ সচল হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাট। দুই দিন পর রবিবার ভোর ৬টা থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি এই রুটের ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে স্বাভাবিক অবস্থায় পারাপার চলছে। তবে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় এখনও আটকা আছে ৬ শতাধিক যান। এসব তথ্য দিয়ে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শাহ নেওয়াজ খালিদ জানান, ভোর ৬টা থেকে এই শিমুুলিয়ার ২ ও ৩ নং ফেরিঘাট দিয়ে সার্ভিস সচল করা হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১ নং ও ভিঅইপি ফেরি ঘাটের কাজ চলছে। মৌলভীবাজার ॥ গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে মনু নদীর দুটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে বাড়িঘর, ধানসহ সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এ সব এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু স্থানে। লক্ষ্মীপুর ॥ কমলগনগরের মেঘনা নদীতে জলোচ্ছ্বাসে তিনজন রাখাল নিখোঁজ রয়েছেন। এ সময় তীব্র জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ৬শ’ মহিষ ও ১শ’ গরু। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গরু-মহিষ রাখার কেল্লা। নদীতে ভাসতে দেখা গেছে মৃত গরু ও মহিষের বাচ্চা। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কমলনগর উপজেলার চর কালকিনি ইউনিয়নের মেঘনা নদীতে জেগে উঠা কাঁকরার চরে ফিরোজ বাঘার মহিষের কেল্লা থেকে রাখাল ও গরু-মহিষ ভেসে যায়। এতে নিখোঁজ হয় তিন রাখাল। নিখোঁজ রাখালরা হচ্ছেন, পাটারিরহাট ইউনিয়নের মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে আবদুর জাহের (৫০), চর ফলকন গ্রামের কালু ফলোয়ানের ছেলে হান্নান (৩৫) একই গ্রামের দুলালের ছেলে মোঃ বাহার (২৫)। ফেনী ॥ পরশুরামে মুহুরী নদীর পানি সকাল ৯টায় বিপদসীমার দুই মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরশুরামে কহুয়া নদীর বাঁধের ৪ স্থানে ভাঙ্গনে ৮টি গ্রাম এবং ফুলগাজীর মুহুরী নদীর বাঁধের ২ স্থনে ভাঙ্গনে কারণে ২টি গ্রাম এবং সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ২টি স্থানে ভাঙ্গনের কারণে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে ভারতের পাহাড়ী পানি নিচের দিকে নামতে থাকায় এই ২ উপজেলার গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ ডুবে গেছে ক্ষেতের ফসল। মির্জাপুর ॥ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দিনভর যানজটে আটকা পড়ে হাজার হাজার যাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুক্রবার থেকে টানা দুইদিনের বর্ষণে মহাসড়ক খানাখন্দক ও দেবে কর্দমাক্ত হয়ে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। অবিরাম বৃষ্টির কারণে চাকা দেবে যানবাহন বিকল হয়ে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। গাজীপুর জেলার চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়। পানছড়ি ॥ গত দু’দিনের প্রবল বর্ষণে চেংগী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে পানছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় গ্রামের লোকজন সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ধান ক্ষেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, গৃহপালিত পশু। পানছড়ি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চেংগী ইউনিয়নের ১২টি, বড়কলক ধন্য চন্দ্র পাড়ার ৮টি, পূজগাং চন্দ্র কার্বারী পাড়ার ৯টি পরিবার, পানছড়ি ইউনিয়নের তালুকদার পাড়া, কলেজ গেট পাড়ার নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত গ্রামগুলোর অনেক পরিবার প্লাবিত হয়েছে।
×