ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দৌলতপুরে জলাবদ্ধতায় স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত

প্রকাশিত: ০২:১৭, ৩০ জুলাই ২০১৭

দৌলতপুরে জলাবদ্ধতায় স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া ॥ ক্লাস সিক্সের ছাত্রী বর্ষা। পিঠে বইয়ের ব্যাগ আর হাতে স্যান্ডেল। হাটুর উপরে জড়ানো পায়জামা। স্কুলে যাবে তাই তার এ প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতি কেন? প্রশ্ন করলে সে জানায়, স্কুলের চত্বরের পুরো এলাকা পানিতে ডুবে থাকায় প্রতিদিনই তাকে এভাবে স্কুলে যেতে হয়। যেন যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি। একই অবস্থা অন্য শিক্ষার্থীদের। এ দৃশ্য কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হোসেনাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শাহ আজিজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয় তিনটিতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। বছরের প্রায় নয় মাস বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ আশেপাশের পুরো এলাকা হাটু পানিতে ডুবে থাকে। ফলে একদিকে এই তিন বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষার্থী এসব পঁচা পানিতে হাটা চলা ফেরা করার করাণে নানা ঘা-পচড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় তিনটি পাশাপাশি প্রায় একই চত্বরে অবস্থিত। স্কুলে যাওয়ার রাস্তা থেকে শুরু করে স্কুলের ভবনের চতুর্দিকে হাটু পানি জমে রয়েছে। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকার কারনে সাপ, ব্যাঙ, বিভিন্ন ময়লা পঁচে তা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এর মধ্যে দিয়েই শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা করছে। এই এক যুগ ধরে বছরের প্রায় পুরো সময় জুড়ে এ অবস্থা চলে আসছে। এদিকে স্কুলের পানি নিস্কাষণ করে লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরানোর দাবীতে রবিবার সকাল ১১ টায় ওই তিনটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মানববন্ধন করেছে। স্কুলের সামনে কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অভিভবক ও স্থানীয় সচেতন মহল অংশ নেন। বেলা ১২ টা এ মানববন্ধন পর্যন্ত চলে। হোসেনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সজিব জানায়, পানির মধ্যে সাপ সহ অন্যান্য পোকামাকড় থাকায় তারা স্কুলে আসতে ভয় পায়। এতে পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলের খেলার মাঠ ব্যবহার করা যায় না। শ্রেণীকক্ষের বাইরে তারা বের হতে পারে না। প্রতিদিন এই পচা পানির মধ্যে দিয়ে আসা যাওয়ার ফলে শরীরে ঘা পচড়াসহ নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। তারা এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ চায়। হোসেনাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোতাছিম বিললাহ জানান, স্কুলগুলোর এ সমস্যা প্রায় এক যুগ হতে চললও এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ হয়নি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধার করে এই এক হাজার শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। হোসেনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করীম জানান, একটি ড্রেন তৈরী করে পানি নিস্কাষণের ব্যবস্থা করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু ড্রেন তৈরী করতে যে পরিমান অর্থ লাগবে তা স্কুল কর্তৃপক্ষের নাই। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান বলেন, এটি এক দিনে তৈরী হয়নি, দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধান করতে ইতিমধ্যে একটি ড্রেন তৈরীর করে পানি নিস্কাষনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কাজ শুরু করা হবে।
×