ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট এ্যাপস থেকে চীনা লেখকদের আয় বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৮ জুলাই ২০১৭

ইন্টারনেট এ্যাপস থেকে চীনা লেখকদের আয় বাড়ছে

চীনের স্পষ্টভাষী প্রফেসর কিউয়া মু যখন একটি জনপ্রিয় চাইনিজ বার্তা পাঠানোর এ্যাপে নিজের পদত্যাগপত্র পোস্ট করেন, তখন তার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন পাঠকরা আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। একদিনেই তার এ্যাকাউন্টে বিশ হাজার ইউয়ান জমা পড়ে। একটি গ্রন্থাগারে তর্জমার কাজ করতেন তিনি। কিন্তু প্রতিদিন একঘেঁয়ে অনুবাদের কাজ ভাল লাগেনি। তাই শেষমেশ চাকরি ছেড়ে দেন। এর আগে ২০১৪ সালে চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শিক্ষকতা পেশা থেকে নিষিদ্ধ হন। কিভাবে তিনি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তা নিয়ে এখনও তিনি অন্ধকারে। খবর এএফপির। চীনে ব্যাপক ব্যবহৃত এ্যাপসগুলো কিউয়া মু’র মতো মুক্তমনা লেখকদের নিজেকে প্রকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে। পাশাপাশি তাদের পকেটে পয়সাও আসছে। যদিও লেখককে দেশটির গ্রেট ফায়ারওয়াল বা ইন্টারনেটে নজরদারি করতে সরকারের আইনগত ও প্রযুক্তিগত সীমার মধ্যে থেকে সবকিছু করতে হচ্ছে। চীনে ফেসবুক ও টুইটার বন্ধ। তাই তাদের লিখতে হচ্ছে উইচ্যাট নামের একটি এ্যাপে। ৯০ কোটিরও বেশি লোক এ এ্যাপটি ব্যবহার করছেন। এছাড়া রয়েছে খুদে ব্লগ সিনা ওইবো, এটিও বেশ জনপ্রিয়। দুটি এ্যাপ্লিকেশনই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে। প্রফেসর কিউয়া বলেন, ‘আমি সবকিছু মিলিয়ে একজন চাইনিজ। দেশকে আমি ভালবাসি। আমি এসবের পরিবর্তন চাই। অধিকাংশ চাইনিজের কাছে পৌঁছতে আমাকে গ্রেট ফায়ারওয়ালের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। লিখতেও হচ্ছে চীনা ভাষায়।’ ২০১২ সালে শি জিনপিং দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। এরপরই লেখক ও প-িতদের ওপর খড়গ্ নামতে শুরু করে। সুশীল সমাজকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবকিছুই করা হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিলে বেজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর কিউয়া মু ওই চ্যাটে তার পদত্যাগপত্র পোস্ট করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ থেকে জানলাম, আমি গবেষণার ব্যাপারে নেতিবাচক। আমার নিবন্ধের ব্যাপারে আমি অমনোযোগী।’ এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনি একটি গ্রন্থাগারের ব্যবস্থাপকের চাকরি নেন। সেখান থেকে তিনি বছরে দুই লাখ ইউয়ান পেতেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে নতুন জীবনে অভ্যস্ত হতে হয়েছে। যখন আমি চাকরিকে না বলেছি, এখন আমার লেখালেখিতে কেউ নজরদারি করতে পারবে না। ইন্টারনেটও উন্মুক্ত রাখতে হবে।’ চীনের ইন্টারনেট জায়ান্ট টেনসেন্টের মালিকানাধীন উইচ্যাট। এখানে যে কেউ নিজের এ্যাকাউন্ট থেকে প্রবন্ধ-নিবন্ধ কিংবা অন্য কোন লেখা পোস্ট করতে পারবেন। ওই লেখার বিনিময়ে তিনি অর্থও নিতে পারবেন। কিউয়া তার ছোট একটি লেখা থেকে এক হাজার ইউয়ান নেন। এতে তার মাসিক আয় দাঁড়ায় ছয় হাচার ৭০ ইউয়ান। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি উইচ্যাটে ১৫টি এ্যাকাউন্ট খুলেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক পোস্ট দেয়ায় তার বেশিরভাগ এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একটি বন্ধ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি খোলেন। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গতিধারা ও প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে ‘হোয়াটস অন ওয়েবো’ নামের একটি বেসরকারী অনলাইন নিউজ সাইট। সেটির সম্পাদক ম্যানইয়া কোয়েটস বলেন, একদিক থেকে এটা সাহিত্য জগতের এক ধরনের গণতন্ত্রায়ন।
×