ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বুদাপেস্টে সন্তুষ্ট শরণার্থী সাঁতারু মারদিনি

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৫ জুলাই ২০১৭

বুদাপেস্টে সন্তুষ্ট শরণার্থী সাঁতারু মারদিনি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাত্র দুই বছর আগে প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় গ্রীসের উপকূলে পৌঁছেছিলেন ইয়ুসরা মারদিনি। যুদ্ধ কবলিত সিরিয়া থেকে ১৬ শরণার্থীর সঙ্গে এক ডিঙ্গি যোগে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথে ডিঙ্গি নৌকার ইঞ্জিন বিধ্বস্ত হয়ে ডুবতে থাকলে পানিতেই লাফিয়ে পড়তে হয়েছিল। সাঁতারের দক্ষতায় শেষ পর্যন্ত গ্রীসের উপকূলে পৌঁছে পরে জার্মানিতে চলে যান মারদিনি। অথচ হাঙ্গেরির উপকূল ছিল সবচেয়ে কাছে। কিন্তু শরণার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি করেছিল হাঙ্গেরি, তাই প্রবেশ করতে পারেননি মারদিনি। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যেকোন উপায়ে একদিন হাঙ্গেরিতে আসবেন। সেই প্রতিজ্ঞা এবার পূর্ণ হয়েছে ১৯ বছর বয়সী এ তরুণীর। এবার হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ফিনা বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপসে অংশ নিয়েছেন তিনি। ২৫ দিনের দীর্ঘ যাত্রা, ১৬ নারী-পুরুষ বহনকারী ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা। বিক্ষুব্ধ জলকেই আপন মনে করেছিলেন তারা। কারণ, সিরিয়ায় তখন যুদ্ধের লেলিহান শিখা দাউ দাউ জ্বলছে। পালিয়ে বাঁচার জন্য জলটাকেই কিছুটা নিরাপদ মনে করেছিলেন তারা। সেই দলে ছিলেন ১৭ বছর বয়সী কিশোরী মারদিনি। সাঁতারে দারুণ দক্ষতা। সেটাই কাজে লেগেছিল। নৌকা ডুবতে থাকার সময় জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন, সাঁতরেই পৌঁছেন গ্রীসের উপকূলে। হাঙ্গেরিতে ঢুকতে পারেননি, কারণ শরণার্থীদের দেখলেই তখন গুলি করা কিংবা গ্রেফতারের নির্দেশনা ছিল। ২৫ দিনের ভয়াল সেই দীর্ঘ অভিযান শেষ হয় এর মাধ্যমে। সেই মারদিনি এখন বার্লিনেই থাকেন। গত রিও অলিম্পিকে প্রথমবার শরণার্থী একটি দল করা হয়েছিল। সেখানে অংশ নিয়ে তিনি হিটে জিতেছিলেন। এবার বুদাপেস্টে বিশ্ব সাঁতারেও ১৯ বছর বয়সী এ তরুণী অংশ নিয়েছেন ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে। একটি হিট জিতলেও শেষ পর্যন্ত ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারেননি। ফিরে যেতে হয়েছে বার্লিনে। কিন্তু ছাড়ার আগেই নিজের আত্মতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন। তিনি ২ বছর আগের সেই দুঃসাহসিক দুঃসহ অভিযানের কথা ভেবে বলেন, ‘আমার বোন সারা প্রথম পানিতে লাফ দিয়েছিল। পরে আমিও পানিতে লাফ দেই, সঙ্গে আরও দুই পুরুষ। আমরা এক হাতে নৌকাটি ধরে সৈকতের দিকে এগিয়ে নিতে থাকি সেটাকে। প্রায় তিন ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর লেসবোস দ্বীপে পৌঁছুতে পেরেছিলাম। বুদাপেস্টে প্রায় সপ্তাহখানেক উপকূলের ধারেই আটকা থাকার পর আমরা উত্তর দিকে যাত্রা করি।’ ২০১৫ সালের মাঝামাঝি বুদাপেস্ট ছিল সবচেয়ে গরম। শরণার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি হাঙ্গেরি থেকে অস্ট্রিয়া কিংবা জার্মানিতে প্রবেশ ছিল বন্ধ। বুদাপেস্টের রেল স্টেশনে একটি শরণার্থী শিবিরে ছিল অবর্ণনীয় কষ্টের করুন চিত্র। এ বিষয়ে মারদিনি বলেন, ‘ট্রেন স্টেশনে আমি মেঝেতে ঘুমাতাম। এটা খুবই ভয়াবহ ছিল।’ তখন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছিলেন দক্ষিণ সীমান্তে। শেষ পর্যন্ত জার্মানি যেতে পেরেছিলেন মারদিনি। এবার নির্বিঘেœই বুদাপেস্টে এসে আবার ফিরে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে মারদিনি বলেন, ‘ওই সময় আমি ভেবেছিলাম মানুষগুলো খুবই নিষ্ঠুর। আমার কোচ ভয় পাচ্ছিলেন যখন আমি বললাম আবার বুদাপেস্টে যেতে চাই। কিন্তু এখন সবকিছুই ভিন্নরকম মনে হচ্ছে। হাঙ্গেরি এখন অনেক শান্ত। আমি অনেক সন্তুষ্ট। এ দেশের মানুষ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাতেও এসেছে পরিবর্তন। আমি বলব না যে শরণার্থীরা শতভাগ ভাল এবং ফেরেশতার মতো। পুরো বিশ্বেই খারাপ ও ভাল মানুষ আছে। আমরা সবাই এ রকম।’
×