ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের প্রস্তুতি

আবাহনীর অনুশীলন শুরু জুলাইয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩০ জুন ২০১৭

আবাহনীর অনুশীলন শুরু জুলাইয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কথায় আছে, ‘মুকুট পরার চেয়ে তা ধরে রাখা কঠিন।’ এই প্রবাদটিই এখন ভুল প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে দুটি জনপ্রিয় ক্লাবের একটি তারা। সর্বশেষ প্রিমিয়ার লীগের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন তারাই। আসন্ন লীগের হট ফেভারিট তারাই। সেজন্য চাপটাও একটু বেশি। তবে চাপকে অগ্রাহ্য করে তারা চায় ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই আসরটির শিরোপাটা ধরে রাখতে। সে লক্ষ্যে তোড়জোড় শুরুও করে দিয়েছে তারা। আগামী ১ জুলাই থেকেই অনুশীলন ক্যাম্প শুরু করতে যাচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের ধারক-বাহক ঐহিত্যবাহী এই দলটি। দফায় দফায় পিছিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ অবশেষে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আগামী ২৮ জুলাই থেকে। গতবারের চেয়ে এবার ভেন্যুর সংখ্যা কমেছে। খেলা হবে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। পেশাদার লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’রা। ফলে শিরোপা অক্ষুণœ রাখার চাপও অন্যদের চেয়ে স্বভাবতই অনেক বেশি। আসন্ন লীগে ধানম-ি পাড়ার ক্লাবটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি এবং একবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। দুটো ক্লাবই বড় বাজেটের বিনিময়ে এবার দলগঠন করেছে। দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় দুটি নাম ঢাকা আবাহনী এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। বিগত বছরগুলোতে মোহামেডানের অবস্থা যেখানে করুণ থেকে করুণতর হচ্ছে সেখানে আবাহনীর ঈর্ষণীয় সাফল্য চোখে পড়ার মতো। ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’রা সর্বশেষ লীগ শিরোপার স্বাদ পেয়েছে সেই ২০০২ সালে। তাছাড়া পেশাদার লীগের জামানা শুরুর পর যেখানে আবাহনী পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেখানে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মোহামেডান। শুধু কি তাই, গত লীগে যেখানে আবাহনী অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়, সেখানে মোহামেডান কোনমতে রেলিগেশন এড়ায়, ১২ দলের মধ্যে হয় দশম, যা তাদের লীগ ইতিহাসে নিকৃষ্টতম ফল। আবাহনী সর্বশেষ লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা সংখ্যায় ছুড়ে ফেলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে (১২ বার, অবশ্য পাকিস্তান আমলে মোহামেডান আরও ৭ বার লীগ শিরোপা জেতায় তাদের সার্বিক লীগ শিরোপা সংখ্যা ১৯)। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত আবাহনীই প্রথম ক্লাব যারা তৎকালীন ঢাকা লীগ (১৯৭২-৯২) এবং বর্তমানে পেশাদার লীগ (২০০৭ থেকে চলমান)Ñ উভয়ক্ষেত্রেই প্রথম হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতে। ঢাকা লীগে জেতে ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে। আর পেশাদার লীগে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে। গত মৌসুমে আবারও লীগ জিতে দীর্ঘ আট মৌসুমের লীগ-বন্ধ্যাত্বের অবসান ঘটায় তারা। শুধু তাই নয় জিতে নেয় চলতি মৌসুম-সূচক আসর ফেডারেশন কাপেরও শিরোপা। এ আসরটি জিতেও তারা শিরোপা সংখ্যায় ছুঁয়ে ফেলে মোহামেডানকে (১০ বার)। এছাড়া স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হেরে না গেলে ১৯৮২ সালের মোহামেডান এবং ২০১২-১৩ সালের শেখ রাসেলের পর তৃতীয় ক্লাব হিসেবে এক মৌসুমে ‘ট্রেবল’ জিততে পারত। গত মৌসুমের মতো চলতি মৌসুমেও নিজেদের সমর্থকদের সাফল্য উপহার দিয়ে তাদের খুশি রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আবাহনী। তবে জামাল-রাসেল ছাড়া যেসব ক্লাব যথেষ্ট বেগ দিতে পারে আবাহনীকে তারা হলো : নবাগত সাইফ পাওয়ারটেক, চট্টগ্রাম আবাহনী এবং মোহামেডান। এছাড়া চমকে দিতে পারে ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত রহমতগঞ্জও। গত মৌসুমে লীগে যারা শুরুটা বেশ চমক দিয়েই করেছিল। এবার তাই জমজমাট লড়াইয়ের আভাস প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে। আর সেটা উপলব্ধি করেই ১ জুলাই থেকে ক্যাম্প শুরু করে দিতে চাইছে ঢাকা আবাহনী। আবাহনীকে দুটি শিরোপা এনে দেয়া ৬২ বছর বয়সী ক্রোয়েশিয়ান (জন্ম অধুনালুপ্ত যুগোসøাভিয়ার সার্বিয়ায়) কোচ দ্রাগো মামিচের ওপর অগাধ আস্থা ক্লাবটির ম্যানেজমেন্টের। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’দের দ্রোণাচার্য হিসেবে কাজ করে গিয়েছিলেন। তবে মাত্র ১২ দিন! না, তিনি ছাঁটাই হননি। স্বেচ্ছায় ছেড়েছিলেন কোচের চাকরিটা। তার অবশ্য বড় কারণ ছিল একটাইÑ স্ত্রীর অসুস্থতা। গত মৌসুমে লীগ ও ফেডারেশন কাপ জেতানো আবাহনীর অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটান দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেলে এ পুরনো কোচ মামিচকেই আবারও ফিরিয়ে আনে আবাহনী। মামিচ সর্বশেষ কাজ করেছেন মালয়েশিয়ার সাইম ডার্বি এফসিতে। তিনি ২০১৫ সালে মালদ্বীপ জাতীয় দলেরও কোচ ছিলেন। মিয়ানমারের কোচ ছিলেন ২০১০ সালে। ক্রোয়েশিয়া যুব দলেরও কোচ ছিলেন ১৯৯০-৯৬ পর্যন্ত।
×