ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আনন্দ

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৩০ জুন ২০১৭

ঈদের আনন্দ

সংযম আর আত্মশুদ্ধির মাস পার হবার পর ঈদের আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিল সারাদেশ। রোজার সময়ই ছিল ঈদের কেনাকাটার আনন্দমুখর পরিবেশ। বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে দেশীয় ব্র্যান্ড সাধারণের উপযোগী ছোটখাটো বাজার, সর্বোপরি ফুটপাথে ক্রেতা-বিক্রেতার উপচেপড়া ভিড়ে রমরমা হয়ে উঠেছিল এই উৎসবের প্রাসঙ্গিক সব কার্যক্রম। উদ্যোক্তারা যেমন সারা বছর ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন তাদের নতুন বাহারি পণ্য ক্রেতাদের উপহার দিতে, একইভাবে ক্রেতারাও দিন গুনতে থাকে ব্যতিক্রমী কিছু দ্রব্য পাবার প্রত্যাশায়। সব মিলিয়ে এই আনন্দঘন পরিবেশ ক্রেতা-বিক্রেতাকে যে মুগ্ধতার জায়গায় নিয়ে যায় তা যেমন বর্ণিল সমারোহে আপ্লুত করার বিষয়, তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এক পরিসংখ্যানে বেরিয়ে আসে সারা বছরের সিংহভাগ ক্রয়-বিক্রয় চলে এই নির্দিষ্ট উৎসবটিকে কেন্দ্র করে। এরপর শুরু হয় ঈদের লম্বা ছুটিতে দেশের বাড়ি যাওয়ার আরও একটি ভিন্ন স্বাদের উচ্ছ্বাস। টিকেট ক্রয়ের ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর পর বাড়িমুখো মানুষ যাত্রার ক্ষণটুকুর অপেক্ষা শেষে রওনা হয়ে যায়। যাত্রার সময়কালে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ঘরমুখো মানুষের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক ব্যাপার হয়ে যায়। বাস, ট্রেন এবং লঞ্চের মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ে যাত্রীসাধারণ যেভাবে কোন এক অজানা আশঙ্কায় সব সময় তাড়িত হয় তাও এই আনন্দের একটি ভিন্নমাত্রা। যানজট থেকে শুরু করে চালকের বেপরোয়া গতি নির্ধারণ, পরিণামে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া থেকে নিস্তার পাওয়া সব মিলিয়ে যাত্রীদের আশঙ্কাও অমূলক নয়। তবে এবারের ঈদযাত্রায় সেরকম অস্বাভাবিক কোন দুর্ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। যানজট ছিল সহনীয়, যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি থেকে সব ধরনের সুব্যবস্থা করতে সরকারের পরিবহন দফতর সফল উদ্যোগ গ্রহণ করে এবারের ঘরমুখো মানুষকে নিরাপত্তা এবং স্বস্তি দিতে পেরেছে বলা যায়। দুই-একটা দুর্ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ যাত্রাপথে তেমন কোন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়নি যাত্রীদের। সড়ক, রেল এবং নৌপথে কোন ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই সাধারণ মানুষ তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে খুব কম। নদীপথে বৃহদাকার লঞ্চ থেকে শুরু করে মাঝারি এবং ক্ষুদ্র লঞ্চও নিরাপদে নির্বিঘেœ যাত্রী পারাপারে নিজেদের সফলতা প্রমাণ করেছে। সুতরাং যাত্রাদুর্ভোগ বলতে যা বোঝায় তা এবারের ঈদের আনন্দকে খুব বেশি ম্লান হতে দেয়নি। সুতরাং বাড়ি যাওয়া মানুষ উৎসব মুখরিত ঈদকে যথার্থভাবে উপভোগ করতে পেরেছে। প্রতি বছর এই উৎসব মানুষের জীবনে যে খুশির জোয়ার বয়ে আনে তা যেমন আনন্দঘন, একইভাবে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশের পর এক ভিন্নমাত্রার আয়োজনও। যে নতুন আয়োজনে সারাদেশে আনন্দের মিছিলে কোটি মানুষের সমারোহ তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনটিকে যে মর্যাদায় নিয়ে যায় তা শুধু ধর্মীয় ভাবানুভূতির বহির্প্রকাশই নয়, অন্তরের সবটুকু উচ্ছ্বাস নিবেদন করারও এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ঈদের আনন্দে সব শ্রেণীর লোকই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সম্পৃক্ত হওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালায়। এই দিনে মানুষ সমস্ত ভেদাভেদ আর শত্রুতা ভুলে গিয়ে এক কাতারে মিলেমিশে নিজেদের জড়িয়ে নেয়। যে আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আবীর ছড়িয়ে দেয় তা যে কোন ব্যক্তির জন্য একটি মূল্যবান উপহার হিসেবেও বিবেচনায় আনা যায়। প্রতি বছর এই ঈদ মানুষের জীবনে নতুন আনন্দ আর সম্ভাবনা নিয়ে বার বার ফিরে আসুক এ প্রত্যাশায় আমরা সবাই।
×