ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আউটসোর্সিংয়ে প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১১ জুন ২০১৭

আউটসোর্সিংয়ে প্রণোদনা

বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব। এবারের জাতীয় বাজেটেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। আউটসোর্র্সিংয়ে বিশেষ প্রণোদনার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। জনশক্তির তুলনায় দেশে শ্রমবাজার অপর্যাপ্ত থাকায় বেকারত্ব দূর করতে এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার এ খাতে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। ২০০৯ সালে এ সেক্টরে ১৫% ভ্যাট ছিল। সরকার সেটা প্রথম দফায় কমিয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করে। এবারের বাজেটে ডেটা এন্ট্রি, ডেটা প্রসেসিং, কল সেন্টারসহ পুরো বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) খাতকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি স্থাপনায় ভ্যাট মওকুফ করাসহ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারী উদ্যোগে প্রশিক্ষণের মান বৃদ্ধিতে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে ফ্রিল্যান্সিং করেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ ভাল রোজগার করছেন। অনলাইনে এই ফ্রিল্যান্সিংয়েরই পোশাকি নাম আউটসোর্সিং। এখন স্বাধীনচেতা, কর্মঠ এবং উচ্চাভিলাষী তরুণদের মধ্যে এটি প্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে ঘরে বসে অর্থোপার্জনের এ কাজটি বর্তমান বিশ্বে সম্মানজনক অবস্থানে চলে এসেছে। আর এ কাজের জন্য কেবল ইন্টারনেট সংযোগবিশিষ্ট একটি ল্যাপটপ থাকলেই হলো। কয়েক বছর হলো বাংলাদেশের তরুণরা সফলভাবে এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন। দেশের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার তরুণ মুক্ত পেশাজীবী (ফ্রিল্যান্সার) হিসেবে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আউটসোর্সিংয়ে। অনিয়মিতভাবে যুক্ত আছেন আরও অনেকে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আইসিটিতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভারত, ফিলিপিন্স, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা ব্যাপক আগ্রহের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করছেন। ইন্টারনেটের কল্যাণে তারা এখন উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই পথ হাঁটছেন। আগামী দিনে এই তরুণরাই দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করায় বড় ভূমিকা রাখবেন। ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে সব বন্ধ দরজা। এখন বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই দেশে উন্নয়ন ঘটবে। বাংলাদেশের আউটসোর্সিং কর্মীদের দক্ষতা অন্য যে কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আউটসোর্র্সিং থেকে এখন আয় হয় ৮০০ হতে ১০০০ কোটি টাকা। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং সে অনুসারে সরকার এ খাতে প্রণোদনাও দিচ্ছে। এবারের বাজেটেও তথ্যপ্রযুক্তি স্থাপনা বা সংশ্লিষ্ট বাড়ি ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া আরেকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সাধুবাদ পেয়েছে সরকারের এই নীতি। এই ভ্যাট অব্যাহতি বহাল রাখায় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পথ চলা আরও সহজ হবে। আশা করা যায় এটা ক্রমবিকশমান তথ্যপ্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত বছর বলেছিলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের তরুণদের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। নিজেদের উদ্যোগে তারা আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, আইটি কোম্পানি গড়ে তুলতে পারে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আইনজীবীর বাইরেও যে সম্মানজনক পেশা রয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হয় না।’ বলাবাহুল্য, নতুন জনশক্তির কাজের বিশাল ক্ষেত্র হচ্ছে আউটসোর্সিং। এছাড়া এই সেক্টরের সফটওয়্যার রফতানিও আমাদের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কে না অন্য যে, কোন পণ্য রফতানির জন্য যে পরিমাণ উৎপাদন ব্যয় রয়েছে সফটওয়্যার রফতানিতে তা নেই। সফটওয়্যার রফতানির দিকে দৃষ্টি দিলে তা দেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।
×