ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে সিলেট-১ আসন

খালেদা জিয়া প্রার্থী হলে দাঁড়াবেন মুহিত!

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১ জুন ২০১৭

খালেদা জিয়া প্রার্থী হলে দাঁড়াবেন মুহিত!

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ নির্বাচনের অনেক সময় হাতে থাকলেও এখনই মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রস্তুতি পর্বে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভেতরে প্রার্থী নির্বাচনের বিষয় নিয়ে এখন মাথা ঘামাচ্ছেন নীতি নির্ধারণী মহল। আর এই পর্যায়ে কোন আসন থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন, সেটা বেরিয়ে আসছে নানান সূত্র ধরে। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। বিএনপি আগামী নির্বাচনের জন্য সারাদেশে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। এই লক্ষ্যে একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের এই তালিকায় সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার ১৯টি আসনের প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট ১ আসনের প্রার্থী তালিকায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নাম থাকায় হঠাৎ করেই মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার মতো প্রকাশকারী আওয়ামী লীগ নেতা অর্থমন্ত্রী নিজেও আবার ঘুরে দাঁড়াবার কথা বলছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মর্যাদার আসন বলে খ্যাত সিলেট-১ আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রার্থী হলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আবারও অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশের রাজনীতিতে প্রচলিত কথা রয়েছে- শাহজালাল (র) এর স্মৃতি বিজড়িত সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন সে দলই সরকার গঠন করে। অতীতের সকল নির্বাচনী ফলাফল থেকে এটা প্রমাণিত। তাই দলীয় প্রধানরা সাধারণত সিলেট হযরত শাহজালাল (র)-এর মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচার অভিযান শুরু করে থাকেন। তাই মর্যাদার এই আসনে দল যেমনি প্রার্থী নির্বাচনে ভাবনা চিন্তা করে থাকে। তেমনি স্থানীয়রাও চান একজন যোগ্য প্রার্থী। এই নির্বাচনী এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য, বর্তমান সরকারের ‘সিনিয়র মোস্ট’ মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বয়স ও শারীরিক বিবেচনায় আগামীতে আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ নিয়ে রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বাজেট বিষয়ক এক সাক্ষাতকারে নির্বাচন নিয়ে ইঙ্গিত পুনর্ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে এর সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন সিলেট-১ আসনে খালেদা জিয়া প্রার্থী হলে তিনিও নির্বাচনে অংশ নেবেন। ২০১৮ সালে ৮৫ বছর বয়স হবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। তখন অবসরে যাবেন বলে আগেই বিভিন্ন সময়ে মত ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার বাজেট নিয়ে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ভালোয় ভালোয় আরেকটি বছর, তারপর অবসর। তবে সিলেট-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। যদি সত্যি সত্যিই বেগম জিয়া এ আসনে প্রার্থী হন তাহলে আরও একবার নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন মুহিত। না হলে আর না। গত এপ্রিল মাসে সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আই উইল রিটায়ার ইন টু থাউজ্যান্ড এইটটিন। আই থিংক ইট উইল বি গুড টাইম। দ্যাট টাইম আই উইল বি এইটি ফাইভ (আমি ২০১৮ সালে অবসরে যাব। আমি মনে করি, এটা একটা ভাল সময়। তখন আমার বয়স হবে ৮৫)। এভাবেই মন্ত্রিত্ব ছেড়ে নিজের অবসরে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত মঙ্গলবারও সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, তার অবসরে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তে তিনি অটল আছেন। সিলেট-১ আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রার্থী না হলে তিনি আর নির্বাচন করবেন না। বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্বাচন না করার পক্ষে মত প্রকাশ পর সিলেট-১ আসন নিয়ে অনেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সিলেটের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন কামরান, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ মনোনয়ন লাভের আশায় তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া প প্রার্থী তালিকায় যার নাম বেশ জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তিনি হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সহোদর ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেন। মোমেন সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবসরে চলে গেলে এই আসনের সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ মোমেনকে নিয়ে চিন্তা করবে বলেই সচেতন মহলের ধারণা। সিলেট-১ আসনের প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ভাবতে হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা ইতোমধ্যে দেশের ৩০০ নির্বাচনী আসনে ৯০০ প্রার্থীর প্রাথমিক একটি তালিকা করেছেন। এ অবস্থায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার ১৯টি আসনে প্রার্থী তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৫৭ নেতা। খসড়া তালিকায় সিলেট-১ (সদর) আসনের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, তার পুত্রবধূ ডাঃ জুবাইদা রহমান এবং বিএনপি নেতা আবদুল মুক্তাদির। সিলেট-২ (বিশ্বনাথ) নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদি লুনা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ হক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির। সিলেট-৩ (সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ) সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মালেক খান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সালাম। সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর) : সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম ও কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান। সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) : খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর ভাই, জেলা বিএনপির নেতা ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন। সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) : জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মওলানা রশিদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি সায়েস্তা খান কুদ্দুস, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, জাসাস সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, কেন্দ্রীয় নেতা ড. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য জাসাসের সভাপতি আবদুস সালাম। সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) : সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ অধ্যাপক ডাঃ রফিক চৌধুরী, ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালিব খাঁন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনিসুল হক, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন এবং হামিদুল হক লিটন আফিন্দি। সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) : জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল। সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) : সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও কর্নেল আলী আহমদ। সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশম্ভরপুর) : চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ফজলুল হক আছপিয়া, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরিন, সাবেক সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদল আবুল মনসুর মোহাম্মদ শওকত। সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) : বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, ছাতক উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী ও ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) : সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ সুজাত মিয়া। হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং) : কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ সাখাওয়াত হাসান জীবন, সৌদি বিএনপির সভাপতি ও নির্বাহী সদস্য আহমেদ মুকিব আব্দুল্লাহ। হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিকে গৌছ, ড্যাব নেতা, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ আহমদুর রহমান আবদাল। হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) : জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোহম্মদ ফয়সল, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শামিম আক্তার শিফা। মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) : কেন্দ্রীয় নেতা এবাদুর রহমান চৌধুরী, বিশিষ্ট শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিটু ও জাসাস নেতা দারাদ আহমেদ। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ) : কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট আবেদ রাজা ও সাবেক এমপি এমএম শাহিন। মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) : সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পুত্র ও জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী খালেদা রাব্বানি। মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল) : নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজি মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে স্বর্ণ মুজিব।
×