ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আয়তি নাহার

ঢাকা উইমেন ইন লিডারশিপ সামিট ২০১৭

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১০ মার্চ ২০১৭

ঢাকা উইমেন ইন লিডারশিপ সামিট ২০১৭

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সম্ভাবনাময় নারীদের অর্জন এবং নেতৃত্বের বিবেচনায় বিভিন্ন পর্যায়ে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজনটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের (বিবিএফ) একটি প্রকল্প উইমেন ইন লিডারশিপ। অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব চলে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। হোটেল লা মেরিডিয়ানে উৎসবমুখর এক পরিবেশে অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য রাখেন ঢাকার মহাব্যবস্থাপনা অশ্বিনী নায়ার। এর পর ঢাকা উইমেন লিডারশিপ সামিট ২০১৭ উদ্বোধন করেন বিবিএফের চেয়ারপার্সন নাজিয়া আন্দালিম প্রিমা। নারীরা যেভাবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে সম্ভাবনাময় জীবন তৈরিতে যে অভাবনীয় এবং যুগান্তকারী অবদান রাখছে তার একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা উঠে আসে সভাপতির বক্তব্যে। নাজিয়া আন্দালিম বাঙালী নারী জাতির সংগ্রামী পথিকৃৎ প্রীতিলতা ওয়াদেদার, ইলামিত্র থেকে শুরু করে বেগম রোকেয়া, নূরজাহান বেগম, সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমাম এবং ডক্টর নীলিমা ইব্রাহীমের মতো সফল ও মহিমান্বিত নারীদের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়ার আবেদন জানান। সকালের কি নোট সেশনের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি। চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে নারীর বিচিত্রমুখী কর্মযোগকে অপার সম্ভাবনার নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচনায় এনে উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে সফল পদচারণায় নারীদের অভিনন্দন জানানো হয়। আর এরই আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্পোরেট পেশায় নারীর সাফল্যকে মূল্যায়ন করে তাদের সম্মানিত এবং পুরস্কৃত করা হয়। নারীর নানামুখী কর্মপ্রবাহকে বিভিন্ন মাত্রিকে তুলে ধরতে রন্ধনশিল্প, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, প্রতিরক্ষায় ক্ষমতায়নসহ কারুশিল্প, নন্দনতত্ত্ব এবং শৈল্পিক দ্যোতনাকেও বিবেচনায় রেখে বিচারিক প্রক্রিয়ায় সম্মাননা এবং পুরস্কার প্রদান করা হয়। আর এই পুরস্কার বিতরণের মনোজ্ঞ আয়োজনটি শুরু হয় রাত ৮টায় সান্ধ্যাকালীন পর্বে। বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় এই আন্দন্দঘন মিলনযজ্ঞটি দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত নারীদের নাম দর্শক- শ্রোতাদের সামনে চলে আসে। ১২টি পর্যায়ে মনোনয়নের জন্য পার্থীদের আবেদন জানাতে হয়। এতে ৫৮টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫০টি মনোনয়ন জমা পড়ে। অন্যদিকে ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জমা হয় প্রায় ৫০ এরও বেশি মনোনয়ন। ২০ জন জুরির সমন্বয়ে গঠিত বিজ্ঞ বিচারকম-লী বাছাইকৃত মনোনয়ন থকে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করেন। কর্পোরেট পেশায় নিয়োজিত ১৪ জন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যোগ্যতম হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়। এ ছাড়া দুটি কোম্পানি এবং কিছু নারীকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নারীর উল্লেখযোগ্য অবদান দেশের প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে আসে। শুধু তাই নয় কর্মক্ষেত্রে যোগ্য এবং সম্ভাবনাময় নারীরা অন্য নারীদের দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। আর এই কর্মোদ্দীপনার প্রেরণাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্যকে সবার কাছে পৌঁছে দেবে। তাতে প্রতিটি নারীর মৌলিক অধিকার যেমন অক্ষুণœœ থাকবে একইভাবে আপন মর্যাদায় সমাজে ও তাদের স্থান মজবুত হবে। আর এই সফল নারীরাই বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আগামী নারী নেতৃত্বে যিনি বিজয়ী হন তিনি অবন্তী শ্রেয়া সাহা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষার্থী। প্রথম রানার আপ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিফ লায়লা নাবিলা। বিশেষ সম্মাননা পান কানিজ ফাতিমা নীলা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। মার্জিনা মাসুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। অনুপ্রেরণা প্রদানকারী নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিজয়ী হন কোহিনূর ইয়াসমিন, প্রধান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তরঙ্গ। নারী পথিকৃৎ হিসেবে অনুপ্রাণিত করবে এমন একজনের নাম উঠে আসে আছিয়া খালেদা নিলা ফাউন্ডার উইমেন ইন ডিজিটাল। বছরের সেরা নারী হিসেবে পুরস্কৃত হন ইফরীত জাহিন কুঞ্জ, ফাউন্ডার ও চেয়ারম্যান হেলপ এইড ফাউন্ডেশন, জাস্টিস ফর উইমেন। রন্ধন শিল্পে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন আল্পনা হাবিব। তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ নারী হিসেবে অভিষিক্ত হন সামিয়া জুবেরী হিমিকা প্রতিরক্ষায় অগ্রণী নারীর ভূমিকায় শীর্ষে আছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাজিয়া আফরিন। শিল্পকলার বিজয়ী তায়েবা বেগম লিপি। পুরস্কৃত নারীরা নিজের অবস্থানে দক্ষতার সঙ্গে তাদের কর্মক্ষমতাকে সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছেন বলেই শীর্ষ স্থানে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করেছেন, যা অন্যদের সাহস আর উদ্দীপনা যোগাবে। আর এটাই বিশ্ব নারী দিবসে নারীর সার্বিক অগ্রযাত্রার একটি মাইলফলক। নারীর ক্ষমতা, মর্যাদা আর অধিকার নিয়ে আপন বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার একটি সংগ্রামী অভিযাত্রা। যা কোনভাবেই অসম্ভব কিংবা বিস্ময়ের নয়। সফল এবং পুরস্কৃত নারীরা উদ্দীপকের ভূমিকায় পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত নারী সমাজকে চলার পথ নির্দেশিত করবে। নারী দিবস নির্দিষ্ট কোন দিনের নয়, চিরকালের, প্রতিদিনের। তাই প্রতিনিয়তই নিজেকে গড়ে তুলে জীবন গঠনের লড়াইয়ে জোর কদমে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। সময়ের প্রয়োজনে, যুগের তাগিদে, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রার কাতারে নিজেকে সম্পৃক্ত করতেই হবে। বাধাবিপত্তিকে জয় করে কর্মপ্রবাহের গতিকে নিরন্তর করতে হবে। স্বাধীনতা, মর্যাদা আর সম্মান রক্ষায় সর্বশক্তি প্রয়োগে উদ্দীপ্ত হতে হবে। আর এভাবেই অর্জিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের যথার্থ আবেদন।
×