ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন

গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার পাশাপাশি বরাদ্দও চলছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার পাশাপাশি বরাদ্দও চলছে

তপন বিশ্বাস ॥ প্রশাসনের প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার পাশাপাশি চলছে আগের নিয়মে গাড়ি বরাদ্দ। গত মাসে প্রাধিকারভুক্ত ৮২ কর্মকর্তাকে গাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে পরিবহনপুল। এদিকে থেমে নেই গাড়ি ক্রয়ের লক্ষ্যে সুদমুক্ত লোন নেয়া। সরকারের অপচয় রোধে বরাদ্দের পরিবর্তে গাড়ি ক্রয়ে এই লোন প্রথা চালু করে সরকার। কিন্তু বরাদ্দ অব্যাহত রাখায় সরকার উভয়দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা প্রদান করলে পরবর্তীতে সরকারের গাড়ি কেনার প্রয়োজন পড়বে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের যেমন মোটা অঙ্কের টাকা সাশ্রয় হবে। তেমনি গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, অতিরিক্ত জ্বালানি তেল সরবরাহসহ বেশকিছু খাতে অপচয় বন্ধ হবে। গাড়িটি ভবিষ্যতে কর্মকর্তাদের নিজস্ব হয়ে যাবে বিধায় এ বিষয়ে যে কোন রকমের যতœ তিনি নিজেই নেবেন। পর্যায়ক্রমে সরকারের গাড়ি চালকের সংখ্যাও কমে আসবে। সবকিছু মিলে সরকারের অনেক আর্থিক সাশ্রয় হবে। সরকারী কর্মকর্তাদের গাড়ি বরাদ্দ দেয়া এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পরিবহনপুলের। এদের অধীনে রয়েছে সরকারী গাড়ি চালকরা। এই চালকরাই গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করে। অভিযোগ রয়েছে, এরা পুলের গাড়ি কোন প্রকার যতœ নেয় না। সময়মতো মবিল পরিবর্তনও করে না। এমনকি সাভির্সিংয়ের নামে বিল নিলেও কোন কোন ক্ষেত্রে গাড়ি গ্যারেজেও নেয়া হয় না। এতে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নতুন গাড়ি কিনলেও অল্পদিনে তা লক্কড়-ঝক্কড় হয়ে পড়ে এবং পুলের ডাম্পিংয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে অবশ্য নামমাত্র মূল্যে তা বিক্রি করা হয়। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত লোন প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১১ সালে ১৫ মার্চ জনপ্রশাসন (সংস্থাপন) মন্ত্রণালয় প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা জারি করে। এতে বলা হয়, সরকার একজন প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গাড়ি ক্রয় এবং এর আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচাদি (যেমন-রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্রাক্সটোকেন ইত্যাদি) নির্বাহের জন্য এককালীন সুদমুক্ত অগ্রিম হিসেবে ১৬ লাখ টাকা প্রদান করতে পারবে। একই সঙ্গে গাড়ি ক্রয়ের তারিখ থেকে তা রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, ড্রাইভারের বেতন বাবদ মাসে ৩০ হাজার টাকা বিশেষ ভাতা পাবেন। গাড়ি ক্রয়ের সমুদয় অর্থ মাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গাড়ির মালিক হয়ে যাবেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে (যদিও আগে নির্ধারিত) প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অর্থ হলো সরকারের যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব, বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডারের যুগ্ম-প্রধান বা তদুর্ধ কর্মকর্তা। যুগ্ম-সচিবে পদোন্নতি পেতে চাকরি জীবনের সিংহভাগ সময় পার হয়ে যায়। শেষ দিকে এসে সুদমুক্ত হলেও সরকারের এই টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খান কর্মকর্তারা। মাসে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে সুদমুক্ত ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে প্রায় সাড়ে ১৩ বছর সময় লাগে। চাকরির শেষ দিকে ঋণ গ্রহণ করলে মাসে মাসে কিস্তি পরিশোধ করার পরও কয়েক লাখ টাকা বকেয়া রয়ে যায়। অবসরে যাওয়ার সময় বাকি টাকা কেটে নেয়া হয় পেনশন বা গ্রাচ্যুইটি থেকে। প্রজ্ঞাপনে বিশেষ অগ্রিম গ্রহণের অযোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছেÑ কোন প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই নীতিমালার আলোকে গাড়ি ক্রয়ের বিশেষ অগ্রিম সুবিধা গ্রহণের অযোগ্য বিবেচিত হবেন যদি তার চাকরির মেয়াদ কম পক্ষে এক বছর না থাকে এবং বিভিন্ন প্রকার অগ্রিম বা গৃহনির্মাণে অগ্রিম ঋণ গ্রহণের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পেনশন বা গ্রাচ্যুইটি থেকে প্রস্তাবিত বিশেষ অগ্রিমের টাকা আদায় করা সম্ভব না হয়। নীতিমালার আলোকে প্রাধিকারপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদনের মাধ্যমে এককালীন ১৬ লাখ টাকা সুদমুক্ত এবং অগ্রিম হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। আবেদনপ্রাপ্তি ৬০ দিনের মধ্যে এই টাকা প্রাপ্য হবেন। অগ্রিম টাকা উত্তোলনের অনধিক ৩ মাসের মধ্যে গাড়ি ক্রয়, রেজিস্ট্রেশন, বীমা ও এতদসংক্রান্ত অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করতে হবে। এর পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে গাড়ি ক্রয়, রেজিস্ট্রেশন ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যাদি বাবদ ব্যয়িত অর্থের অতিরিক্ত উত্তোলিত অর্থ সরকার বরাবর ফেরত প্রদান করতে হবে।
×