ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকলে মেজর জিয়া গ্রেফতার হচ্ছে না কেন?

আওয়ামী লীগের জমকালো ২০তম জাতীয় সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

আওয়ামী লীগের জমকালো ২০তম জাতীয় সম্মেলন

শংকর কুমার দে ॥ গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার পরিকল্পনাকারী মেজর জিয়া কোথায়? প্রায় দুই মাস ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- মেজর জিয়া গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে। দুই মাস আগেই যদি এই শীর্ষ জঙ্গীনেতা গোয়েন্দা নজরদারিত থেকে থাকে তবে গ্রেফতার হচ্ছে না কেন? নাকি গ্রেফতারের বিষয়টিতে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে? মেজর জিয়ার অবস্থানের বিষয়টিতে পরিষ্কার না করায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হচ্ছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) নেতা হলেও জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া। প্রায় পাঁচ বছর পলাতক থেকে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিস্তারে অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করে আসছে এই শীর্ষ জঙ্গীনেতা। রাজধানী ও এর আশপাশে টার্গেট কিলিংয়ে জড়িত কয়েক জঙ্গীকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে নেপথ্যে মেজর জিয়ার জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পায় গোয়েন্দারা। বিগত পাঁচ বছরে তার (মেজর জিয়া) তত্ত্বাবধানে এবিটির সিøপার সেল তৈরি হয়েছে। সিøপার সেলের এসব সদস্যরাই গত কয়েক বছরে ব্লগার, প্রকাশক, মুক্তমনা লেখক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা করেছে। তার সঙ্গে বিদেশের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও তার যোগাযোগ থাকার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। দেশকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জঙ্গী হামলা ছাড়াও টার্গেট কিলিংয়ের নানা পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছে মেজর জিয়া। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তবে গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে এর আগেই মেজর জিয়া তাদের নজরদারিতে রয়েছে বলে দাবি করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশসহ পাঁচজন ব্লগার, একজন প্রকাশক ও সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন এমন দু’জনকে হত্যা করে এবিটি। দেশে বড় ধরনের জঙ্গী হামলা ও গুপ্তহত্যার নেপথ্যে এখন পর্যন্ত মাস্টারমাইন্ড হিসেবে প্রথম উচ্চারিত হওয়া নামটি হচ্ছে সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। গুলশানে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়াসহ বড় হামলাগুলোর নেপথ্যে কারিগর হিসেবে কলকাঠি নেড়েছে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা। তাই বর্তমানে গোয়েন্দাদের প্রধান টার্গেট এই জঙ্গীনেতা। বারবারই গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছেÑ মেজর জিয়া তাদের নজরদারির মধ্যেই আছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, মেজর জিয়া গোয়েন্দাদের হাতের নাগালে থাকলেও গ্রেফতার হচ্ছে না কেন? তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) আধ্যাত্মিক নেতা জসীমুদ্দিন রাহমানী গ্রেফতার হওয়ার পরই সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হকের নাম উঠে আসে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন এই মেজর জিয়া। তার বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিল্লুল হক। গ্রামেরবাড়ি মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে। সর্বশেষ সে মিরপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিল। ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনা সদর দফতরের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়Ñ ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীর সাবেক ও তৎকালীন কিছু সদস্য দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে মেজর জিয়া অন্যতম বলে জানা যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুই মাস আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মাস্টারমাইন্ড জিয়া ও তামিমসহ কয়েকজন নজরদারিতে রয়েছে। সময়মতো তাদের আটক করা হবে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশী অভিযানে মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, তামিম চৌধুরীর চ্যাপ্টার শেষ। মেজর জিয়ার চ্যাপ্টারও শেষ হবে। এরপর সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের (হিন্দু ধর্মাবলম্বী) এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে মেজর জিয়া। গত ৬ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেছিলেন, তারা (নিহত তামিম চৌধুরী ও মেজর জিয়া) নজরদারিতে আছে। পুলিশী অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হলেও মেজর জিয়ার এখনও হদিস নেই।
×