ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী নির্বাচনে বিজয়ের মহাচ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২১ অক্টোবর ২০১৬

আগামী নির্বাচনে বিজয়ের মহাচ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এখন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বয়স ৬৭ বছর। এর মাঝে দলটার ১৯টি সম্মেলন হয়েছে। আগামীকাল শনিবার দলটির ২০তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। এমন সাজগোজের মাঝে আওয়ামী লীগ কখনও সম্মেলন করেনি। চারদিকে সাজ সাজ রব। সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি। শুধু দেশেরই নয়, প্রবাসী বাঙালীদেরও দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে। আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার মহাচ্যালেঞ্জ নিয়ে দলটি কেমন নেতৃত্ব আনছে, ঘোষণাপত্রে কী ঘোষণা থাকছে; সেটি দেখার অপেক্ষায় দেশের ১৬ কোটি মানুষ। সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে একদিকে যেমন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে, ঠিক তেমনি পদপ্রত্যাশী এবং পদে থাকা নেতাদের টেনশনের পারদ ততই যেন চড়ছে। কে পদ হারাবেন, কে পদোন্নতি পাবেন আবার নতুন কে কে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসছে- এ নিয়ে সারাদেশেই আলোচনা, গুঞ্জনের কমতি নেই। কার কপালে শেষ পর্যন্ত কী জুটবে কেউই নিশ্চিত নন। সবাই এখন তাকিয়ে আছে দলটির সভানেত্রীর দিকে। বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে গণভবনে সম্মেলনের সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়া অন্য কাউকে সভাপতি পদে কাউন্সিলররা মেনে নেবেন না, এটা সর্বজনবিদিত। কিন্তু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন- এ নিয়ে দলটিতে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কী ওই পদে হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন, নাকি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বা অন্য নতুন কাউকে সাধারণ সম্পাদক পদে এনে প্রধানমন্ত্রী চমক দেখাবেন- এ নিয়েও আলোচনার কমতি নেই। তবে আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রবীণের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নবীনের তারুণ্যের সংমিশ্রণে আগামী তিন বছরের জন্য একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ প্রধানমন্ত্রী উপহার দেবেন, এমনটাই মনে করছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তিন বছরের জন্য নির্বাচিত এই নতুন কমিটিকেই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সারাদেশে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এবং নৌকার পক্ষে জোয়ার তুলতে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করাই শুধু নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সকল কৌশল মোকাবেলা, দেশে-বিদেশের সমর্থন আদায়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং দলকে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আনার নিত্যনতুন অনেক চ্যালেঞ্জই নতুন নেতৃত্বকে মোকাবেলা করতে হবে। দলটির নীতিনির্ধারক কয়েক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আভাস দিয়েছেন, যেহেতু আগামী জাতীয় নির্বাচনের বেশি সময় নেই। আগামী দুই বছরের মধ্যে নির্বাচনী জোয়ার বইতে শুরু করবে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক এবারও বেশ এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই পদে পরিবর্তন এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নতুন সাধারণ সম্পাদককে শুধু কেন্দ্রেই নয়, তৃণমূলে ঘুরে ঘুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, মাঠে থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ডানহাত হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফের পরিবর্তে ওবায়দুল কাদের কিংবা অন্য কাউকে বেছে নেয়ার সম্ভাবনা নেই, তা এখন আর বলা যাবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবতার দাবিও এখন সামনে উঠে এসেছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী কোন রাজনৈতিক দল কিংবা উগ্র সাম্প্রদায়িক কোন সংগঠনকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সম্মেলন ঘিরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ॥ ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে দলটির বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ হয়েছে। কালই অনুষ্ঠিত হবে দলটির নেতাকর্মীদের সেই আকাক্সিক্ষত ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। দলটির নেতারা বলছেন, মঞ্চের অবয়ব, সাজসজ্জা, আপ্যায়ন ও অংশগ্রহণের দিক থেকে এবারের আয়োজন আগের সব সম্মেলনকে ছাড়িয়ে যাবে। সম্মেলনকে ঘিরে পুরো ঢাকা মহানরগরীকে সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত এখন সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সারাদেশ এবং প্রবাস থেকে আসা দলটির কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের পদচারণায় এখন মুখরিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আওয়ামী লীগের ধানম-ির কার্যালয়। দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতা, কাউন্সিলর, প্রতিনিধি, দেশী-বিদেশী অতিথি ও শুভানুধ্যায়ী মিলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের আগমন আশা করা হচ্ছে। তাই ৫০ হাজার মানুষের জন্য দু’দিন তিনবেলা খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছয়টি প্রবেশপথ করা হয়েছে। প্রতিটি প্রবেশপথেই থাকছে দলটির আগেই ১৯টি সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের চুম্বক অংশ। এছাড়া থাকছে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্যরা জানান, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এবারের সম্মেলন আরও জাঁকজমক হবে। এর অংশ হিসেবে তুলে ধরা হবে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া এই দলটি কতটা সংগ্রাম করে আজকের অবস্থানে এসেছে। এ প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, আগের সম্মেলনগুলোর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের অনেক নেতাকর্মী জানেন না। বিষয়টি বিবেচনা করে দলীয় সভাপতির অনুমোদনক্রমে এটা করা হচ্ছে। ১৫০/৮৪ ফুট সুবিশাল মঞ্চ তৈরি ॥ সম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে। লম্বায় ১৫০ ফুট, চওড়ায় ৮৪ ফুট। মঞ্চের ছাদের উচ্চতা ৪২ ফুট। নির্মাণকাজে যুক্ত কর্মীরা জানান, মূল মঞ্চ হয়েছে পাঁচ স্তরের। একেবারে সামনের অংশটির উচ্চতা হবে আড়াই ফুট। যেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে। সাত ফুট উচ্চতার স্থানটিতে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বসবেন। আর পেছনের বিভিন্ন উচ্চতার তিন সারিতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৫৮ জনের বসার স্থান করা হয়েছে। মঞ্চের সামনে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। এর ভেতরে ২০ হাজার চেয়ার পাতা হয়েছে। রয়েছে ১৬টি এলইডি টেলিভিশন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক কারিগর মঞ্চ তৈরির কাজ করেছেন। চারুকলার প্রায় দেড় ডজন ছাত্র সুদৃশ্য এই মঞ্চ নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বৃহস্পতিবার রাতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মঞ্চটি বুঝিয়ে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আপ্যায়নেরও বিশাল কর্মযজ্ঞ ॥ শুধু বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করাই নয়, দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের যথাযথ আপ্যায়ন করতেও চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। নেতারা জানান, প্রথম দিন দুপুরে মোরগ-পোলাও দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। ওই দিন রাতে থাকছে ভাতের সঙ্গে খাসির রেজালা। আর পরদিন দুপুরের খাবারের তালিকায় রাখা হয়েছে পোলাও ও মুরগির মাংস। প্রতিবেলা আহারের সঙ্গে থাকবে বোতলজাত পানি, কোমল পানীয়, ফিরনি, পান, টিস্যু পেপার ইত্যাদি। এর বাইরে চা ও কফির কর্নার থাকছে। কেউ ঝামেলা করলেই গ্রেফতারÑমায়া ॥ সম্মেলনে নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খল থাকার আহ্বান জানিয়ে তা না হলে গ্রেফতারের হুমকি দিয়েছেন খাদ্য উপকমিটির আহ্বায়ক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। তিনি বলেন, সম্মেলনে নির্দিষ্ট কার্ড গলায় নিয়ে ভেতর প্রবেশ করতে হবে। কার্ড ব্যতীত কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। কেউ যদি কোন প্রকার ঝামেলা করে সে আওয়ামী লীগের কর্মী হলেও তাকে গ্রেফতার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে খাদ্য উপকমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে সবার উদ্দেশে একথা বলেন তিনি। তিনি জানান, সম্মেলনে খাবার সরবরাহে প্রতিটি বিভাগ থেকে ছাত্রলীগের ২০, যুবলীগের ১০, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০০ জন করে থাকবেন। এছাড়া শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ কর্মী মিলিয়ে মোট এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবেন। এছাড়া সম্মেলনস্থলে খাবার সরবরাহ হবে ১০টি স্থান থেকে এবং প্রতিটি বুথে ১০০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। যারা খাদ্য সরবরাহের প্রতিনিধি তাদের রমনা কালীমন্দিরের গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং অবশ্যই গলায় কার্ড ঝুলিয়ে আসতে হবে বলেও জানান চৌধুরী মায়া । খাদ্য উপকমিটির বৈঠকে সদস্য সচিব খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
×