ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার গল্প

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানেই অনাবিল আনন্দ। এ সময় কাছে দূরে যে যেখানেই থাকুক না কেন ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে তারা ফিরে চলে আপন ঠিকানায়। অনেকের কাছে তাই ঈদ মানেই ইট-পাথরের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে চলার আনন্দ। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থীরা সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করে তাদের কাছে ঈদের আনন্দটা একটু ভিন্ন মাত্রার। প্রায় সব সময়ই কোন না কোন ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের চাপে থাকতে হয় তাদের। হৃদয়ে লালন করা হাজারো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সর্বদাই তাদের বিরামহীন ছুটে চলা। ছুটতে ছুটতে এক সময় পেয়ে বসে ক্লান্তি। ক্লান্ত-শ্রান্ত মন চায় একটু বিশ্রাম। ছুটে যেতে চায় চেনা মুখগুলোর কাছে। পেতে চায় স্নেহময়ী মায়ের হাতের পরশ, যে পরশে রয়েছে পৃথিবীর সকল ক্লান্তি দূর করার জাদু। ইচ্ছে করে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসে কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে। কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে এ রকম সময় পাওয়াটা হয়ে উঠে সোনার হরিণের মতো। তাছাড়া সব সময় সব আত্মীয় স্বজনকে এক সঙ্গে পাওয়াও যায় না। তাই তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে কবে ক্যাম্পাস ছুটি হবে। বাজবে কাক্সিক্ষত সেই ছুটির ঘণ্টা। বিশেষ করে ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এই অপেক্ষাটা একটু বেশি থাকে। ঈদের ছুটির দিনক্ষণ কবে ঘোষণা হবে সেই জন্য উতলা মন নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী। আর যখন সেই বহু আকাক্সিক্ষত ছুটির সন্ধান মেলে তখন শুরু হয়ে যায় বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। মূলত তখন থেকেই তাদের মনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ঈদের আনন্দ। টিকেট কাটা থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় গুছানো সবকিছুতেই তখন বিরাজ করে উৎসব উৎসব আমেজ। ঈদের আগে রাস্তার সীমাহীন যানজট, টিকেটের ভোগান্তি, অতিরিক্ত ভাড়া, যানবাহনগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় এ রকম হাজারো প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে সবুজ শ্যামল গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটে চলে তারা। মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে ভাবনার চাকা। ইস! কতদিন পর সবার সঙ্গে দেখা হবে। সেই শৈশব কৈশোরের ফেলে আসা দিনগুলোতে যারা সব সময় পাশে ছিল সেই বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা হবে। কত কথাই না বলার আছে তাদের সঙ্গে। ক্যাম্পাসের কথা, নতুন নতুন বন্ধুদের কথা। আরও কত মজার মজার অভিজ্ঞতাই না জমে আছে গল্পের ঝুলিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদের কথায় উঠে এল সেই অনুভূতির কথা। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর বাড়ি যাব। ভাবতেই আনন্দ লাগছে। এই ব্যস্ত শহর থেকে আবারও গ্রামের সেই প্রিয় মানুষ, বিকেলবেলার সেই খেলার মাঠ আর খেলার সাথীদের সংস্পর্শে ফিরে যাব সে ভাবনাতেই মন ব্যাকুল হয়ে আছে। রাস্তায় তীব্র যানজট, যেতে যেতে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হবে কিন্তু এসব কথা মনে পড়লেই কষ্টগুলোকে আর কষ্ট মনে হয় না।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী স্বর্ণালি মাহমুদাও জানালেন একই কথা, ‘ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অবশেষে কাক্সিক্ষত দিনটি যখন আসে আনন্দটা যেন সীমা হারিয়ে ফেলে। যানজটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও যখন মনের ক্যানভাসে প্রিয়জনদের হাসিমাখা মুখগুলো ফুটো উঠে তখন সব কষ্টই হাওয়ায় উড়ে যায়।’ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার আনন্দ যে সবাইকেই ছুঁয়ে যায় তেমনটিই বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দ্বীপ কুমার দেবদাস। তার ভাষায়, ‘বাড়িতে যাওয়ার আনন্দটাই অন্যরকম। আর সেটা যদি হয় ঈদের মতো কোন উৎসব তাহলে তো ভাল লাগার অনুভূতিও লাভ করে নতুন মাত্রা। ঈদের দিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠার কথা ভাবতেই শরীরে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। গ্রামের বাড়ির প্রতি যে এত টান সেটা গ্রামে থাকতে কখনো বুঝতে পারিনি। এখন প্রতিবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার সময় সেটা উপলব্ধি করি। ঈদ নাকি মুসলিমদের জন্য কিন্তু আমি বলব এটা সমগ্র বাঙালির জন্য। এই ঈদ উৎসবই প্রমাণ করে দেয় ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।’ যেসব শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে তাদের কাছে গ্রামে যাওয়ার আনন্দটাই অন্যরকম হয়ে দেখা দেয়। ইট-কাঠের ঢাকা শহরে সবুজের দেখা পাওয়াটা দুরূহ ব্যাপার হলেও তাদের মনে তখন দোলা দিয়ে যায় গাঁয়ের অবারিত সবুজের মাঝে মেঠো পথের ধারে গজিয়ে উঠা কোমল সবুজ দূর্বাঘাসের ডগায় ভোরের শিশিরকণা। সেই সবুজ দূর্বাঘাসের নরম কার্পেটে খালি পায়ে হেঁটে যাওয়ার অনুভূতি। শহরে বিদ্যুতের ঝলমলে আলোয় জোৎ¯œা রাতের প্রকৃত যে সৌন্দর্য তা ছাপিয়ে মনের কোণে দোলা দিয়ে যায় গাঁয়ের খোলা আকাশের নিচে ঝিরিঝিরি বাতাসে চুল উড়িয়ে জোৎস্নার অপার্থিব সৌন্দর্য দেখার দৃশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন, ডাইনিং আর মেসের রান্না করা খাবার খেতে খেতে বিরক্ত মনগুলো তখন উতলা হয়ে উঠে মমতাময়ী মায়ের হাতে রান্না করা অসাধারণ সব খাবারের জন্য। ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের সব চিন্তা তখন যেন কোথায় হারিয়ে যায়। ঈদে বাড়ি ফেরার এই আনন্দ যেন ঈদের আগে হয়ে উঠে আরেক ঈদ!
×