ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি সপ্তাহেই আরও মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা

মসলার বাজারে ঈদের প্রভাব

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৮ আগস্ট ২০১৬

মসলার বাজারে ঈদের প্রভাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদ-উল-আযহার এখনও বাকি দুই সপ্তাহের বেশি সময়। অথচ এখনই মসলার বাজারে এর প্রভাব পড়ে গেছে। কেজিপ্রতি এলাচ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়। বেড়েছে হলুদের দামও। রাজধানীর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এলাচ ও হলুদের পাশাপাশি বেড়েছে পেস্তা বাদাম, লবঙ্গ, বাদাম, গোলমরিচের দামও। তবে এসব মসলার দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। সরিষা, পাঁচফোঁড়ন, জায়ফল, তেজপাতা ও দারুচিনির দামে এখনও ঈদের ছোঁয়া লাগেনি। তবে বিক্রেতারা বলছেন চলতি সপ্তাহেই এসবের দামও বাড়তে পারে। আর আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ঈদের আগে তিনটি মসলার দাম কিছুটা কমেছে। এগুলো হচ্ছে, ধনিয়া, কিশমিশ ও কালিজিরা। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে এলএমজি ব্র্যান্ডের এলাচের পাইকারি দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ৯৪০ টাকায়। একই পরিমাণ দাম বেড়ে জেবিসি ব্র্যান্ডের এলাচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় হলুদের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১২৮ টাকায়। খাতুনগঞ্জের মেসার্স নাজিম এ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক অমল সাহা বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মসলার বাজারে বাড়তি চাহিদা শুরু হয়েছে। এজন্য বাজারদরে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন, রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে একযোগে চাহিদা বাড়লে পাইকারিতে প্রভাব পড়বে। কিছুদিনের মধ্যে বাজার উর্ধমুখী হতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে খুচরা বাজারে এলাচের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। ঈদ উপলক্ষে দাম বাড়তি মসলার মধ্যে আমেরিকান গুয়েতমালা এলাচ (ছোট) প্রতি কেজির বর্তমান দাম ১ হাজার ৪০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৮৮০ টাকা। বড় এলাচ কেজি প্রতি ২৬০ টাকা বেড়ে দাম ১ হাজার ৪৮০ টাকা, পূর্বের মূল্য ১ হাজার ২২০ টাকা। এছাড়া ভারতীয় এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এসব এলাচের খুচরা দাম ছিল ৯৮০ থেকে ১ হাজার টাকা। বিক্রেতারা জানান, কোন কারণ ছাড়াই গত কয়েক সপ্তাহে হলুদের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে আমদানি করা ভারতীয় হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে বেড়েছে জিরার দামও। ভারতীয় জিরা কেজিপ্রতি ৬০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৪০ টাকা। সিরিয়ান জিরার দাম ৪৫ টাকা বেড়ে ৩৭০ টাকা হয়েছে। গত সপ্তাহে এ ধরনের জিরার দাম ছিল ৩২৫ টাকা। আর প্রতি কেজি টার্কিশ জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায়। এ ধরনের জিরার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া পেস্তা বাদাম ১ হাজার ৬৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫০ টাকা, লবঙ্গ ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, বাদাম কেজি প্রতি ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা, কালো গোলমরিচ ৮৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৯২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে খুচরা বাজারে। তবে কিছু মসলার দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে সরিষা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পাঁচফোঁড়ন ১২০ টাকা, জায়ফল ৬৮০ টাকা, দারুচিনি ২৬০ টাকা ও তেজপাতা ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী এসব মসলার পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দামে কোন পরিবর্তন আসেনি। তবে কোরবানির ঈদের আগে এসব মসলার দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা। এদিকে খুচরা বাজারে দুয়েকটি মসলার দাম কমতে দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৭৫ থেকে ২৯০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ধনিয়ার দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৭০ টাকায়। এছাড়া কিশমিশ ৩২০ থেকে ২৫০ টাকা, কালিজিরা ২৮০ টাকা থেকে কমে ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বিশ্ববাজারে প্রয়োজনীয় মসলার বুকিং দর কম থাকায় দেশেও পণ্যগুলোর দাম দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল ছিল। যে দুয়েকটি মসলার দাম বেড়েছে, সেগুলো ব্যবসায়ীদের কারণেই বেড়েছে। তারা জানান, এদিকে কোরবানির ঈদের বাড়তি চাহিদা সামনে রেখে কিছু কিছু পণ্যের চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে সারাদেশের মানুষ মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্য চাহিদার তুলনায় বেশি কেনায় এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দাম বেশি থাকে। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দাম বাড়ানো না হলেও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বাড়তি চাহিদার সুযোগে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা গেলে গরম মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। দেশীয় চাহিদার মূল মসলা পেঁয়াজ, আদা ও রসুন। গরম মসলা হিসেবে ধনিয়া, জিরা, দারুচিনি, মরিচ ও হলুদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে ঈদ উপলক্ষে প্রায় সব ধরনের মসলার চাহিদাই বেড়ে যায়। ফলে ওই সময় আমদানি করা অধিকাংশ মসলার দাম বাড়তে থাকে। দেশে প্রায় সব ধরনের গরম মসলা বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করতে হয়।
×