ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জয়নুল গ্যালারিতে ছয় তরুণের ‘জলকেলি’

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৮ জুলাই ২০১৬

জয়নুল গ্যালারিতে ছয় তরুণের ‘জলকেলি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ছয় দিনব্যাপী ‘জলকেলি’ শীর্ষক ছয় তরুণের দলগত প্রদর্শনী। মঙ্গলবার দুপুরে ছয় শিক্ষার্থীর আঁকা ছবি নিয়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। উপস্থিত ছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের প্রভাষক সুমন ওয়াহিদ প্রমুখ। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া তরুণরা হলো- আরিফুল ইসলাম, ইসকান্দার মির্জা, মোঃ সৈকত হোসেইন, মোঃ রফিকুল ইসলাম, শেখ ফাইজুর রহমান ও জান্নাতুল ফেরদৌস কেয়া। উদ্বোধনের পর প্রদর্শনীটি উন্মুক্ত করা হয় সবার জন্য। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে। প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রদর্শনীতে যে চিত্রকর্মগুলো স্থান পেয়েছে, তা প্রাণোচ্ছল তারুণ্যের নিরলস প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের ফল। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে জলরংয়ে ছবি আঁকার যে সীমিত ধারাটি আর্ট স্কুলগুলোর মাধ্যমে এ উপমহাদেশে বিকশিত হয়েছিল, তা কিংবদন্তি সব শিল্পীদের উদ্ভাবিত কৌশল-প্রকরণে বিচিত্রতর হয়ে সমকালীন শিল্পকলার অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের তরুণ শিল্পীদের মধ্যে জলরং চর্চার বিশেষ আগ্রহ দেখতে পাওয়া যায়। জলরং চিত্রে তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলো সহজেই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। প্রভাষক সুমন ওয়াহিদ বলেন, শিল্পী আরিফের আঁকবার ধরনে কিছুটা ‘রেট্রো’ গুণাবলী দৃশ্যমান। তার কাজে খয়েরি ও নীল সদৃশ ধূসর বর্ণের আধিক্য দর্শকদের অতীত স্মৃতি রোমন্থনে সহায়ক হবে। ওরিয়েন্টাল আর্ট বিভাগের সাবেক ছাত্র ইসকান্দার মির্জার ‘ফ্লাওয়ার কম্পোজিশন’ প্রাচ্যকলার ঢংয়ে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করছে অপরাজিতা ফুলকে। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে তার আঁকা ‘এ্যাংরি হর্স’ শিরোনামের ছবি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও ভৌগোলিক পরিবেশের সঙ্গে জলরংয়ের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আধুনিক শিল্পচর্চার ইতিহাসেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরান ঢাকার নানা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা, গ্রামবাংলার আবহমান চিরসবুজ প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবনের চালচিত্র আর প্রকৃতির নানা উপকরণ- জলরংয়ে ফুটে উঠেছে চারুকলা অনুষদের ছয় তরুণের ক্যানভাসে। তরুণ শিল্পীদের মধ্যে আরিফুল ইসলাম ও ইসকান্দার মির্জা ইতোমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প শিক্ষার পর্ব শেষ করেছেন। ‘স্বাধীন শিল্পী’ হিসেবে তারা জলরংকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আরিফুলের সিরিজ ছবি ‘সার্চিং স্টোরিজ ইন ওল্ড প্রেমিসেস’ এ পুরান ঢাকার আবহই প্রাধান্য পেয়েছে। বিশেষ করে প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঘোড়ারগাড়ি তার চিত্রপটে সরবভাবে উপস্থিত। গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সাবেক ছাত্রের ক্যানভাসে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে পুরান ঢাকার প্রাত্যহিক জীবনের চালচিত্র। ক্রমেই বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোও উঠে এসেছে তার ক্যানভাসে। সুমন ওয়াহিদ বলেন, ঘোড়া যদি হয়ে থাকে দৃঢ়তার প্রতীক, সেক্ষেত্রে ফুলকে বলা যেতে পারে কোমলতার উপস্থাপন। এই দুই বিপরীতমুখী ভাবকে শিল্পী তার মাধ্যমগত দক্ষতায় উপস্থাপন করেছেন। মোঃ সৈকত হোসেইন, মোঃ রফিকুল ইসলাম ও শেখ ফাইজুর রহমানের যোগাযোগ বেশ ঘনিষ্ঠ। জলরং চর্চার নিমিত্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রদর্শনীতে তাদের অনুশীলননির্ভর কাজগুলো মাধ্যমগত দক্ষতার স্মারক। ‘মেঘনাঘাট’ শিরোনামের সিরিজ ছবিতে নৌ-বন্দরের কোলাহলের পাশাপাশি সিরিজ ছবি ‘আপন আঙ্গিনা’য় তুলে এনেছেন গ্রামীণ জীবন। ‘বাহন’ ও ‘স্টোরি অব জাঙ্ক’ সিরিজে প্রিন্ট মেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল অনুপুঙ্খ জটিলতায় উপস্থাপন করেছেন যান্ত্রিক জীবনের প্রতিনিধিত্ব। এ যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি দিতে তিনি স্বল্পতম বর্ণের উপস্থাপনে নিসর্গকে হাজির করেছেন দর্শকের সামনে। ফাইজুর বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন জাহাজ ও অন্যান্য নৌযানকে। আঙ্গিকগত দিক থেকে নিজস্বতা সৃষ্টি করেছেন ড্রয়িং এ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের এই শিক্ষার্থী। আলো-ছায়ার বৈপরীত্য ও রেখার প্রাধান্য তার স্বকীয়তার বৈশিষ্ট্য। ওরিয়েন্টাল আর্ট বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস কেয়া তার ক্যানভাসে প্রাচ্যকলার নানা করণ-কৌশলকে অবলম্বন করে সাজিয়েছেন তার সৃষ্টি সম্ভারকে। সিরিজ ছবি ‘রমণী’ এবং ‘নিসর্গ মাঝে’ শিরোনামের তার কাজগুলোতে নিরীামূলক প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো।
×