ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিখোঁজ ১০ যুবকের অন্যতম লক্ষ্মীপুরের তাজউদ্দিন, বাড়ি ফেরার পথ চেয়ে আছে মা তাহেরা

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১১ জুলাই ২০১৬

নিখোঁজ ১০ যুবকের অন্যতম লক্ষ্মীপুরের তাজউদ্দিন, বাড়ি ফেরার পথ চেয়ে আছে মা তাহেরা

সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর ॥ গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা আসে তাদের অন্যতম লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন কাউসার। গত ১ জুলাই গুলশানে হামলাকারী যুবকদের কয়েকজন বেশ আগে থেকে পরিবারের কাছে নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রকাশ্য হওয়ার পর আরও ১০ যুবকের নিখোঁজ থাকার খবর দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাতে লক্ষ্মীপুরের তাজউদ্দিনের (পাসপোর্ট নম্বর- এফ ০৫৮৫৫৬৮) নাম ছিল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিখোঁজ ১০ তরুনের মধ্যে তাজের ছবি দেখে উদ্বিগ্ন হয় তার মা। উপায় না পেয়ে শনিবার রাতে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন তিনি। এটিএম তাজউদ্দিন (কাউছার) অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেন। সে স্ব-পরিবার নিয়ে ওই দেশে থাকতো। সর্বশেষ তাজ ২০১৩ সালে অসুস্থ বাবাকে দেখতে দেশে আসে। এরপর মাঝে মধ্যে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে মায়ের খবর নিতো। তাজের পরিবারের সদস্যরা জানান, তার জন্ম ১৯৮১ সালের ১ মার্চ সদর উপজেলা আটিয়াতলী গ্রামে। পড়তেন বাড়ির পাশে আটিয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউ) থেকে ২০০৬ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ থেকে (বিএসসি) স্কলারশিপ নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যান। ওই দেশের দ্য নিউ সাউথওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করে ২০০৮ সালে সে দেশেরই একটি কোম্পানিতে সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে চাকরি নেন। ওই সময়ে তিনি নোভা হাসান নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। জানা গেছে, ২০১০ সালে সাদ ইবনে তাজউদ্দিন নামে তাদের এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর দুইবছর পর মেয়ে মারিয়াম বিনতে তাজউদ্দিনের জন্ম হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে তাজ অসুস্থ বাবাকে দেখতে বাড়িতে আসেন এবং এক সপ্তাহ পর ফের অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান। ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর বাবা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া মারা যান। তবে প্রায় একবছর পর তাজ অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন করলে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি তাকে জানানো হয়। তাজের মা তাহেরা বেগম বলেন, ২০১৩ সালে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর তাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খুব কমই যোগাযোগ করতে থাকে। এমন কী দেশে টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দেয় সে। গত রমজান মাসের কয়েকদিন আগে তাজ শেষবারের মতো বাড়িতে ফোন দিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং তার শারীরিক খোঁজখবর নেন। তাজের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শাহজাহান খোকন জানান, প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় তাজ খুব লাজুক ছিল। তার মধ্যে কোনও অহংকার কিংবা প্রতিহিংসা ছিল না। কী কারণে তাকে নিয়ে কথা উঠছে, তা ভেবে পাচ্ছি না। তার মধ্যে কখনও কোনও উগ্রবাদী চিন্তা আমি দেখিনি। হঠাৎ সংবাদমাধ্যমে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিতে আমি হতাশ। প্রতিবেশী মো. কবির আহম্মেদ জানান, ছোট থেকেই তাজ নিয়মিত নামাজ পড়তো। কখনও কারো সাথে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। মুরব্বিদের খুবই সম্মান করতো সে। এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাজের মা হতাশ হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি জিডি করেন। আমরা এটিএম তাজউদ্দিনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তিনি ২০০৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান। সেখান থেকেই নিখোঁজ হন তিনি। তাজ বর্তমানে কোথায় আছেন, তা আমাদের জানা নেই। আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি। উল্লেখ্য, রাজধানীর গুলশান এলাকায় হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে ১ জুলাই জঙ্গি হামলার পর নিখোঁজ ১০ জন তরুণের পাসপোর্ট নম্বরসহ ছবি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার। এই নিখোঁজ ১০ তরুণের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়া লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিনও (পাসপোর্ট নম্বর ০৫৮৫৫৬৮) একজন।
×