ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিকড়সুদ্ধ উৎপাটন জরুরী

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৬ জুন ২০১৬

শিকড়সুদ্ধ উৎপাটন জরুরী

টার্গেট কিলিং। এর অর্থই হলো মোটিভেটেড অর্থাৎ উদ্দেশ্যমূলক হত্যাকা-। সব কাজের পেছনেই এক বা একাধিক উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজ হয় না। কোনটা ভাল কাজ আর কোনটা মন্দ কাজ তা অবশ্য আপেক্ষিক বিবেচনার বিষয়। যে কোন কাজের পেছনে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটিজ’ ক্রিয়াশীল থাকে। যিনি ধার্মিক তিনি ধর্মকর্ম পালন করেন আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং বেহেস্ত লাভের আশায়। যিনি ডাকাত তিনি ডাকাতি করেন জীবিকার প্রয়োজনে। যার কাজ তার কাছে যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সম্মত বিবেচিত হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশে যে সিরিজ টার্গেট কিলিং অব্যাহতভাবে চলছে তার পেছনেও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। এর নেপথ্য কুশীলবরা তাদের কাপুরুষতা ও হীনম্মন্যতার কারণে সামনে আসছে না। লক্ষ্য অর্জনে তাই গুপ্তহত্যার আশ্রয় নিচ্ছে। আঘাত কর- পালিয়ে যাও যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তারা আপাতত খুবই সফট টার্গেট বেছে নিচ্ছে। হয়ত বড় ধরনের কোন অপারেশনের রিহার্সাল চলছে এখনও পর্যন্ত। এর লক্ষ্য কি? কি চায় তারা? প্রকাশ্য ঘোষণা না থাকলেও তাদের উদ্দেশ্য এবং পরিচয় কিন্তু অস্পষ্ট নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক লড়াই তীব্র আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। যে লড়াই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ কবলিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। এ লড়াইয়ের প্রতিপক্ষ দুটি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী পক্ষ এবং পাকিস্তানের অখ-তা সমর্থনকারী বাংলাদেশবিরোধী পক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিপরীতে বিরোধী পক্ষের শক্তি বাংলাদেশের খোলসে এই ভূখ-ে পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে চায়। গোলাম আজম তথা জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প ও কর্মসূচী কিন্তু এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা বা প্রত্যাহার করা হয়নি। আইএসআই-এর মদদ এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট। হালে মোসাদও জড়িত হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়। বিএনপি জেনে বুঝে অথবা না জেনে না বুঝে এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিচ্ছে। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার এ ক্ষেত্রে আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে। যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক শক্তি (বিএনপি ও অন্যান্য) তাই প্রকাশ্যে গৃহযুদ্ধ বাধানোর হুমকি দিচ্ছে। জামায়াত নেতাদের কোন ক্ষতি হলে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল এলাকা জ্বালিয়ে দেয়ার সংকল্পও ব্যক্ত করেছে। এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও জামায়াত নেতাদের বিচার ও দ- একে একে কার্যকর হচ্ছে। পাকিস্তানও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা অব্যাহত রেখেছে। তাদের এদেশীয় দোসররা নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশবিরোধী পক্ষ বসে নেই। তারাও দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী জ্বালাও পোড়াও ও ৯৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচী (যা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়নি) ও হালের গুপ্তহত্যার হোলি খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। লক্ষ্য অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। আর এজন্য অজুহাত হিসেবে কখনও মুক্তচিন্তার ব্লগার লেখক, প্রকাশক, শিক্ষক, গণজাগরণ মঞ্চকর্মী, কখনও অবিশ্বাসী ও হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষ (দোকানি-দর্জি-পুরোহিত-পাদ্রী-ভিক্ষু), আবার কখনও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন, কখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য (র‌্যাব-পুলিশ) ইত্যাদিকে টার্গেট করা হচ্ছে। এর আড়ালে দাবি হচ্ছে হাসিনা সরকারের পদত্যাগ বা উৎখাত, হাসিনাবিহীন নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণ, মৌলবাদের অনুকূলে নারীনীতি ও শিক্ষানীতির সংস্কার সাধন ইত্যাদি। আমার ধারণা সরকারকে পদত্যাগ এবং সংলাপে বসতে বাধ্য করার অভিপ্রায়ে একটি যুদ্ধাবস্থা জারি রাখার জন্য এই ধরনের টার্গেট কিলিংয়ের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। দেশে চলমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট এবং অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির ধারা স্তব্ধ করাই এর লক্ষ্য। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে উদ্ভূত ভীতিকর পরিস্থিতিতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করাই আশু টার্গেট। নেপথ্যে থেকে এদের প্ররোচিত, উৎসাহিত এবং অর্থ ও অস্ত্র যুগিয়ে সহযোগিতা করছে একদল ক্ষমতা দখলের স্বপ্নচারী রাজনীতির কুশীলব যারা গডফাদার ও গডমাদার বলে পরিচিত। শিকড়সুদ্ধ এদের উৎপাটন করতে হলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আদর্শিকভাবে রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এখনই। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য জরুরী। শান্তিবাগ, পটুয়াখালী থেকে
×