ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিপ্লবী চেতনার প্রতি কবির অভিনন্দন

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৮ মে ২০১৬

বিপ্লবী চেতনার প্রতি কবির অভিনন্দন

কাজী নজরুল ইসলাম প্রথমবারের মতো মাদারীপুরে আসেন ১৯২৬ সালের ১০ মার্চ। মাদারীপুরে নিখিল বঙ্গীয় ও অসম প্রদেশীয় মৎস্যজীবী সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে যোগদান করতে। অধিবেশনে ধীবর বা জেলেদের জন্য উদ্বোধনী গান রচনা ও পরিবেশন করেন। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় জেলেরা ছিল অবহেলিত জনগোষ্ঠী। কিন্তু নজরুল ছিলেন মানবতার ও সাম্যের কবি, তাই তাঁর কাছে উঁচু-নিচুর কোন ভেদাভেদ ছিল না, তাঁর চোখে সবাই মানুষ। এ কারণে সারা জীবন তিনি মানুষের জয়গান গেয়ে গেছেন। ওই সম্মেলনে কুমিল্লা থেকে এসেছিলেন রাজনৈতিক নেতা বসন্ত কুমার মজুমদার এবং তাঁর স্ত্রী নারীনেত্রী হেমপ্রভা মজুমদার। এখানেই তাঁদের সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয়। নজরুল তাৎক্ষণিক হেমপ্রভাকে নিয়ে একটি গান ‘কোন অতীতের আঁধার ভেদিয়া’ রচনা করেন এবং গেয়ে শোনান। মাদারীপুর শহর তখন ছিল বর্তমান রাস্তি ইউনিয়নের লক্ষ্মীগঞ্জে। ওখানেই ছিল হাট-বাজার, কোট-কাচারি, হাসপাতাল, জেলখানা অফিস-আদালত সবকিছু। মৎস্যজীবীদের টোলঘর ওখানেই ছিল, যেখানে নিখিল বঙ্গীয় ও অসম প্রদেশীয় মৎস্যজীবী সম্মেলেনের তৃতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙ্গনে সেসব বিলীন হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার নজরুল ইসলাম মাদারীপুরে আসেন ১৯৩৭ সালে। তখন তিনি উঠেছিলেন মাদারীপুর শহরের অদূরে মহিষেরচর এ্যাডভোকেট আবুল ফজল মিয়ার বাড়িতে। সেখানে তিনি তিন দিন অবস্থান করেন এবং রাজৈর উপজেলার সমাজ ইশিবপুর গ্রামের বিপ্লবী নেতা পূর্ণচন্দ্র দাসের বাড়িতে যান। মাদারীপুরে নজরুলের বন্ধু ছিলেন দত্তকেন্দুয়ার কালিপদ গুহ রায় ও এ্যাডভোকেট আবুল ফজল মিয়া। কালিপদ গুহ রায়ের বড় ভাই প্রতাপচন্দ্র গুহ রায় ছিলেন কলকাতা প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার। সামান্য সময়ের জন্য কাজী নজরুল ইসলাম মাদারীপুরে এসে এখানকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। আরও বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মাদারীপুরের অগ্নিযুগে সশস্ত্র বিপ্লবীদের আদর্শে। এই মাদারীপুরের মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন অগ্নিপুরুষ পূর্ণচন্দ্র দাস, পুলিনবিহারী দাস, প্রণবানন্দজী মহারাজ (বিনোদ দাস), প্রমোদ দাশগুপ্ত, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন রায়, সন্তোষ দত্ত, হরিপদ চক্রবর্তী, হরিপদ দাসের মতো বিপ্লবী নেতা। পূর্ণচন্দ্র দাসের বিপ্লবী চেতনায় আকৃষ্ট নজরুল তাঁর কারামুক্তি দিবসে তাঁরই উদ্দেশ্যে ‘পূর্ণ অভিনন্দন’ নামে কবিতা রচনা করেন। এই কবিতায় নজরুল পূর্ণচন্দ্র দাসের দেশপ্রেমের গুণকীর্তন করে তাঁকে বিপ্লবের শীর্ষে স্থান দিয়েছেন। এটি অসাধারণ কবিতা, যার ভেতরে ফুটে উঠেছে বিপ্লবী মননশীলতা আর দেশপ্রেমের নিখাদ প্রেরণা এবং মাদারীপুরের এই কৃতি সন্তানের প্রতি নজরুলের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। নজরুল এই কবিতার প্রায় প্রতিটি লাইনে পূর্ণচন্দ্র দাসকে কখনও পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে, কখনও ফরিদপুরের শাহ্ ফরিদের সঙ্গে, কখনও মহাভারতের ঐতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গে, কখনও যুদ্ধক্ষেত্রের মহাসেনাপতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। নজরুল পূর্ণচন্দ্র দাসকে ‘মাদারীপুরের মর্দ্দবীর’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×