ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তাসকিনকে হারানোর প্রতিবাদ জানালেন টাইগার অধিনায়ক, আইসিসির কাছে ন্যায্য ;###;বিচার চান তিনি

মাশরাফির চোখে জল, তবু হাল ছাড়ছে না দল

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২১ মার্চ ২০১৬

মাশরাফির চোখে জল, তবু হাল ছাড়ছে না দল

মিথুন আশরাফ, ব্যাঙ্গালুরু থেকে ॥ তাসকিনের কথা উঠতেই কেঁদে উঠলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। নিজের ‘হিরো’ তাসকিনকে হারিয়ে যেন এলোমেলো হয়ে পড়েছেন! পছন্দের ক্রিকেটারের বোলিং আইসিসি এ্যাকশন অবৈধ ঘোষণা করায় হতভম্ব হয়ে গেছেন। চোখের জল কোনভাবেই থামছে না। অঝর ধারায় শুধু ঝরছে। কথা বলতে গেলে ঠোঁট কাঁপছে। কান্নাতেই যেন তাসকিনকে অবৈধ করার প্রতিবাদ জানালেন মাশরাফি। এরআগে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও মাশরাফির কান্না দেখেছে সবাই। সেবার দেশে কেঁদেছিলেন মাশরাফি। দেশের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপের দলে না থেকে কেঁদেছিলেন। এবার ভারতের মাটিতে কাঁদলেন। এবার দলে না থাকা নিয়ে নয়, নিজের জন্য নয়; কাঁদলেন ছোট্ট ভাইয়ের মতো করে গড়ে তোলা তাসকিনকে নিয়ে। যে তাসকিনকে নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন। সবার কাছে ‘হিরো’ নামে পরিচিত করিয়েছেন। সেই তাসকিনকে শনিবার যখন বোলিং করা থেকে আইসিসি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করল তখনই ভেঙ্গে পড়েছিলেন মাশরাফি। আকাশ যেন তার মাথায় পড়ে গেছে। এমন অবস্থা হয়ে গেছে। বিশ্বকাপই এখন আর খেলতে পারবে না তাসকিন। তাতে করে দলেরও সমস্যা হয়ে গেল। পরিকল্পনা পুরোপুরিই বদলে গেল। যে পরিকল্পনায় ছিল শুরুতেই তাসকিনকে দিয়ে, তার গতি দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের ছন্নছাড়া করে দেয়া, এখন সে আর দলেই নেই। তাই মাশরাফি কেঁদেছেন এবং বলেছেনও, ‘আমার বিশ্বাস তাসকিনের বোলিং এ্যাকশন সম্পূর্ণ বৈধ। আমি যাকে নিয়ে কথা বলছি সে আগামী ১০ বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সার্ভিস দিবে। যে ছেলেটা শেষ আটটি ম্যাচ আমাদের হয়ে দারুণ শুরু করেছে, আমাদের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে তাকে ছাড়া আমাদের নামতে হচ্ছে কালকের (সোমবার) ম্যাচে। এটা আমাদের জন্যে বড় আঘাত। এটা এমন একটা সময় আমাদের কাছে এসেছে, যখন ওদের ম্যানেজ করা আমাদের জন্যে কঠিন।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজ বাংলাদেশের ম্যাচ। ম্যাচটির আগে সংবাদ সম্মেলনে হাজির মাশরাফি। আগেরদিনই যেহেতু তাসকিন ও আরাফাত সানিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে সংবাদ সম্মেলনে এ দুইজনকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ২৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে সানি যতটানা আসলেন, তাসকিন যেন পুরো সংবাদ সম্মেলন জুড়েই জায়গা করে নিলেন। এর কারণও আছে। তাসকিনকে যে নিজ হাতে যেন গড়ে তুলছিলেন মাশরাফি। তাই বারবার তাসকিনকে নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে গেছে। কোন প্রশ্নেরই উত্তর পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি মাশরাফি। করবেন কিভাবে? চোখের জল যে জার্সি দিয়ে বারবার মুছতেছিলেন। মাশরাফি বললেন, ‘আমার বিশ্বাস তাসকিনের বোলিং এ্যাকশন ঠিক আছে। আমরা আমাদের বলাটা বিসিবিকে বলতে পারি, বিসিবি যেভাবেই হোক আইসিসির সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করবে। আইসিসি সবসময় তরুণ ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করে। এই মুহূর্তে আশা করছি তাসকিন ন্যায্য বিচার পাবে।’ তাসকিন ও সানি না থাকায় যে কঠিন সময়ের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ দল তারা সবারই জানেন। তবে মাশরাফি বলছেন, ‘কঠিন সময় ওরা থাকলেও যে আসতো না এটা বলা যাবে না। বিষয়টা হচ্ছে, এমন একটা সময় আমরা ধাক্কা খেলাম। আমাদের জন্য এটা ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুইজন খেলোয়াড়কে আমরা দুইদিন আগে পেলেও ম্যানেজ করে ফেলতে পারতাম। এমন একটা সময়ে নিউজটা এসেছে। তারা সকালে ফ্লাইটে নেমে এখন অনুশীলন করতে এসেছে। সবকিছু মিলিয়ে এটা ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে গেছে। এর থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ আমাদের পাশে আসে এবং থাকবে জানি। আমরাও চেষ্টা করবো ফিডব্যাকটা যেন আমাদের থেকেও সেইরকম হয়। তবে কাজটা অবশ্যই কঠিন।’ এখন আইসিসি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দিকেই তাকিয়ে আছেন মাশরাফি, ‘বোর্ড থেকেতো অবশ্যই আমরা আমাদের জায়গাটা পরিষ্কার করেছি। এই জিনিসটা এখন নির্ভর করছে বোর্ড এবং আইসিসির ওপর। আমরা যেটা চাচ্ছি যে আমাদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ন্যায্য বিচার হোক। আমরা বলতে চাচ্ছি তাসকিনের বোলিং এ্যাকশনে কোন সমস্যা নেই। বোর্ড এটা ক্লিয়ার করুক। কারণ, বোর্ডকে বাদ দিয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এখানে অনেক বিষয় আছে, সবাই জানেন। আমরা চাচ্ছি বিসিবি থেকে যেন এটা আসে।’ তাসকিনের বলে যে কোন সমস্যা নেই তা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতেও চাইলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘তাসকিনের সব বল নয়, কিছু বলে তার অবৈধ ডেলিভারি হয়েছে। ট্যাকনিক্যাল বিষয় হচ্ছে, যে ম্যাচটায় বলা হয়েছে অবৈধ হতে পারে, ওই ম্যাচটার সঙ্গে মিলিয়ে সেসব পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। ওই ম্যাচের বল একটাও অবৈধ ছিল না। এখন কথা হচ্ছে ম্যাচে অবৈধ নেই, কিভাবে তাকে আমরা সাসপেন্ড করবো! কথা হচ্ছে টেস্ট দেয়ার সময় কিছু সমস্যা হয়েছে। তার ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে কোন সমস্যা দেখা যায়নি। অনেকইতো বাউন্সার ছাড়া খেলছে। যে ম্যাচটার ওপর ভিত্তি করে তাকে পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে, ওখানে তার কোন সমস্যা না পাওয়ার পরও কি তাকে আটকিয়ে রাখবেন। নাকি রাখবেন না?’ আবারও বিসিবিকে যেন জোর গলায় এ নিয়ে কথা বলার অনুরোধই করলেন মাশরাফি, ‘বিসিবিকে আমরা বলতে চাচ্ছি আইসিসি সবসময় তরুণ খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করে। এখন কথা হচ্ছে তাসকিনের মতো খেলোয়াড়কে আমরা কিভাবে প্রোমোট করবো। আমাদের যা স্টেপ আছে আমরা বিসিবিকে জানিয়েছি, আইসিসির সঙ্গে আলোচনা করে বিসিবি কিছু একটা সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটাই আশা করছি।’ সংবাদ সম্মেলন শেষে যখন টিম হোটেলে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠবেন, তখনও মাশরাফির চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। কি কষ্টটাই না পেয়েছেন! তাসকিনকে যে ছোট্ট ভাইয়ের মতো করে নিজ হাতে গড়ছেন। সঙ্গে তার বোলিং এ্যাকশন নিয়েও যে সমস্যা নেই, তা সবাই বিশ্বাসও করেন। তাই তাসকিনকে নিয়ে কান্না থামাতে পারেননি মাশরাফি।
×