ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

২০২১ সালের বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৬ মার্চ ২০১৬

২০২১ সালের বাংলাদেশ

(১৫ মার্চের পর) কূটনীতির মূল কথাই হলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান খোঁজা। সে পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি সমর্থনযোগ্য নয়। সম্পর্কের ছেদ করে দিলে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের আঠারো হাজার কোটি টাকার পাওনা দাবি দুর্বল হবে। তাছাড়া ত্রিপক্ষীয় সমঝোতায় ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার পাকিস্তানে করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি; সে বিষয়টি চিরতরে চাপা পড়ে যাবে। পাকিস্তানে বসবাসরত বাঙালীদের নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী দেড় লাখ মনে-প্রাণে পাকিস্তানীকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পালনে পাকিস্তানকে বাধ্য করার জন্যও দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখা জরুরী। বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন খুবই চড়া ছিল তখন বিপুল পরিমাণ সরকারী ভর্তুকি দিয়ে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল, লুব্রিকেন্ট অয়েল ও কেরোসিন জনগণের নাগালে রাখা হয়। এখন সাময়িকভাবে দাম কমেছে তেলের। তাই উচ্চমূল্য সাধারণভাবে বজায় রেখে বিপিসির বিপুল অতীত ঘাটতি পরিশোধ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটির ইকুইটি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে এটিকে লাভজনকভাবে চালানো যায়। তবে কেরোসিনের মূল্য যতটুকু সম্ভব তার চেয়েও বেশি কমানো যায়। ইচ্ছে থাকলেও মাল পরিবহনে এবং সেচে ডিজেলের মূল্য কমানো কঠিন হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবেশী দেশের তুলনায় তেল ডিজেলের দাম বাংলাদেশে কমানো সমীচীন হবে না। এটাও ভাবা দরকার যে, ভবিষ্যতে আবারও তেল ডিজেলের দাম বাড়তে পারে। তবে বর্তমান সুযোগে সিএনজির মূল্য বাড়িয়ে পেট্রোলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা যেতে পারে। ট্যানারি শিল্প যেন অবশ্যই সাভারে স্থানান্তরিত হয় অবিলম্বে। আশু করণীয় গোল্ডম্যান স্যাকস যখন বাংলাদেশকে নেক্সট ইলেভেন হিসেবে ঘোষণা করেন তখন তারা বলেছিলেন যে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ এগারোটি দেশের অর্থনীতি ইউরোপের ২৭টি দেশের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে তেমন কোন সুসংবাদ দিতে না পারলেও বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের ২০১৫ সালের অর্জন এবং পরবর্তী তিন বছরের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রদান করেছে এইভাবে: দক্ষিণ এশিয়ার কার কত প্রবৃদ্ধি (সামষ্টিক আয়ের শতাংশ হিসাবে) বিশ্বব্যাংকের অনুমিত হিসাব সকল সময়ই রক্ষণশীল হয়ে থাকে- বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি সত্য। যেমন ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সামষ্টিক আয়ের প্রবৃদ্ধির প্রথম পূর্বাভাস ছিল ছয় শতাংশের মতো; এখন হিসাব করে বলছে প্রকৃত অর্জন ৬.৬ এমনকি ৬.৭ শতাংশ হতে পারে। বিশ্ব স্থবিরতাকে তোয়াক্কা না করে সঠিক নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপে বাংলাদেশ যে গতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, তাতে ২০১৬ সালে প্রবৃদ্ধি ৭.০ শতাংশ হতে পারে ২০১৭ সালে ৭.৫, ২০১৮ সালে ৮.০ প্রবৃদ্ধি মোমেন্টাম সৃষ্টি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালে শতকরা ১০ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করার দিকে দেশ ধাবমান। তবে সঞ্চয় বৃদ্ধি, সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রূপান্তর করা ছাড়াও সুশাসন আরও উন্নত করে ইনক্রিমেন্টাল ক্যাপিটাল : আউটপুট অনুপাত চারের উপরে উঠতে না দিয়ে মূলধনের উৎপাদনশীলতা বাড়াতেই হবে। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তথা পঞ্চাশ বছর পূর্তির অর্থাৎ ডিসেম্বর ২০২১ আসতে আর মাত্র ছ’টি বছর। এর শুরুটা ০১.০১.২০১৬ হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে গত ছয় বছরে প্রায় ১৯০ কোটি নতুন বই পেয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীরা। পেয়েছে উদার হাতে উপবৃত্তি। একুশ সালের বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তার একটা খসড়া স্বপ্ন নির্মাণ করা যায় নিকট অতীতের অসাধারণ সাফল্য ও কিছু অপূর্ণতা পূরণ করে এবং নতুন উদ্ভাবনী কর্মকা- শুরু করে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক দ্রুততর অগ্রগতির জন্য যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১৬-২১) রচিত হয়েছে তারই আলোকে উন্নয়নের অগ্রাধিকার এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতায়নের কাজে হাত দেয়া সমীচীন হয়ে পড়েছে। প্রথমেই প্রয়োজন বাহাত্তরের আদলে একটি শক্তিশালী পরিকল্পনা কমিশন সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে শুধু দেশীয় নয় বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত (রহঃবমৎধঃবফ) কর্মকা-ের প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে দক্ষ বস্তুগত এবং সর্বোত্তম সম্পদ নিয়োজনে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা যাবে। বাংলাদেশে প্রকল্প পরিবীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে দুর্বলতা অতি স্পষ্ট। টাকার অঙ্কে নয় কোন্ প্রকল্পে কোন্ সময় কত অংশ ব্যয় হয়ে কত পরিমাণ প্রকৃত (ঢ়যুংরপধষ) অগ্রগতি হয়েছে তার পরিমাপ করার পদ্ধতি চালু করা বা জোরদার করা যায়। শুরুতে সর্ববৃহৎ বিশটি প্রকল্প চিহ্নিত করে মালয়েশিয়া ও মিসরের মতো প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সপ্তাহভিত্তিক পরিমাপ করে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও দূরীকরণের দিক নির্দেশনা নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে পিপিপি ব্যবহার সরকার প্রধানের সদিচ্ছা ইতিবাচক। সকল মেগাপ্রকল্প শুরু করার আগে একটি প্রি-ফিজিবিলিটি নিরীক্ষা করা যেতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাকস, জে পি মর্গান, সিএনএন মানিগ্রাম, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন, দ্য ইকোনমিস্ট, দ্য ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল, দ্য সিটি গ্রুপ, বিসিজি, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, যোসেফ স্টিগলিজ, অমর্ত্য সেন ও অন্যরা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সম্পর্কে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তার রূপায়ণে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। বিনিয়োগ করা প্রয়োজন অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে। বাংলাদেশে এখন জাতীয় সঞ্চয় সামষ্টিক আয়ের শতকরা ৩১ ভাগ হলেও বিনিয়োগ হচ্ছে সামষ্টিক আয়ের শতকরা ২৯ ভাগ। সঞ্চয় বেশি বিনিয়োগ কম এই রহস্য ধাঁধার অন্যতম বড় কারণ সম্পদ ও মূলধন পাচার। ওয়াশিংটনের গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি জিএফআই হিসাব করেছে যে, ২০০৪ থেকে ২০১৩ এই নয় বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫৫৮৮ কোটি ডলারের মূলধন বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। তন্মধ্যে শুধু ২০১৩ সালে এই পাচারের পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ডলার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এনবিআরের তীক্ষè পরিবীক্ষণ মাধ্যমে এ মূলধন পাচারের পরিমাণ হয়ত বা হ্রাস করা যাবে। কিন্তু সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হবে বিনিয়োগ, মুদ্রা ও বিনিময় হার নীতির বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা করে সম্প্রসারণশীল বিনিয়োগ বান্ধবতা নিশ্চিত করা। নীতি কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন করে ব্যক্তি খাতে স্বদেশে বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব এবং উচিত। পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কাক্সিক্ষত মাত্রায় পেতে হলে অজনপ্রিয় বৃহৎ পরিসরের সংস্কার প্রয়োজন। ২০০৯-১০ সালে অযোগ্য বা অবহেলাজনিত কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জনসাধারণের আমানতকে ঝুঁকিপূর্ণ তাও আবার সেকেন্ডারি শেয়ারে সিডিআর সীমা অতিক্রম করে তফসিলী ব্যাংকের শিল্প নারী উদ্যোগ ও শিশু উন্নয়ন ঋণের ডাইভারশন রোধ করতে পারেনি। সে ধকল ও বিপর্যয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্তদের আস্থাহীনতায় রাখছে এর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। শতকরা দুই ভাগ ইকুইটি না থাকলে কেউ কর্পোরেট কোম্পানিতে পরিচালক হতে পারবেন নাÑ এ বিধান অযৌক্তিক এবং বিনিয়োগ প্রতিবন্ধক; পুনর্বিবেচনা ও রদ করা সুপারিশ করা হচ্ছে। বুক বিল্ডিং মেথডের হেরফের, সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের ফাঁকফোকর এবং ‘প্লেসমেন্ট’ এর গুরুতর ক্ষতি থেকে মূলধন বাজারকে উদ্ধার করা প্রয়োজন। ‘ইন্ডেপেন্ডেন্ট’ পরিচালক চয়নে ব্যর্থতা এবং মুখ্য নির্বাহীকে পরিচালনা পর্ষদের অধীনস্থ করে রাখলে মূলধন বাজার হয়ত বা কখনোই সুস্থ ধারায় ফিরবে না। আধুনিক যুগের মোক্ষম একটি সম্পদ কমডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপনের যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব পাঁচ বছর যাবত হিমাগারে কেন? সম্প্রতি ক্ষমতায়িত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে (ইওউঅ) বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে (ইওচউঅ) রূপান্তর করা যেতে পারে। শতকরা অন্তত ১ ভাগ নতুন বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ (শিল্প স্থাপনে) প্রদানের ক্ষমতা ইওচউঅ-এর হাতে প্রদান করা যেতে পারে। আমলাতান্ত্রিক বাধা দূর করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীগণকে তৎমাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য বার্তা দিতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানের জনবল হতে হবে চৌকস, দক্ষ, সৎ, স্বচ্ছ ও দেশপ্রেমের মহামন্ত্রে উজ্জীবিত। একটি ফাইভ ওয়ার্কিং ডে ওয়ান স্টপ সেন্টার স্থাপন করে শিল্প বিপ্লবের পথ উন্মুক্ত করতে হবে। স্মরণ করা যেতে পারে যে পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের ১৮০০ কোটি ডলার; তার মাত্র ১.৫ কোটি ডলার আমরা আহরণ করি। এটি মেনে নেয়া যায় না। বিনিয়োগ ক্ষেত্রে দেশী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার দায়িত্ব অর্থনৈতিক নীতি কৌশলের অগ্নিপরীক্ষা হতে পারে। দেশের কিষান কিষানি ও শ্রমজীবী মানুষ যেমন উদয়াস্ত পরিশ্রমে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখছেন তেমনিভাবে কিন্তু সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বিশেষ করে দক্ষ ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী শিল্প উদ্যোক্তাগণ সোনার বাংলা গড়ে তোলায় বিশাল অবদান রাখছেন। বাংলাদেশে আরও দ্রুতগতি সামষ্টিক আয় বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় রফতানি আয় এবং রেমিটেন্স উত্তরোত্তর বৃহত্তর ভূমিকা রাখবে। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন ও রফতানিতে সজ্ঞান বহুমাত্রিকতা আনা ছাড়াও তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যারে নতুন নতুন রফতানি গন্তব্যের সন্ধান আরও জোরদার করা সমীচীন হবে। এ সকল পণ্যের উপরিভাগের চাহিদা মেটাতে সক্ষম উন্নততর ডিজাইন ও তৈরি পোশাকে যেতে হবে। স্মরণ রাখা ভাল যে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট বিএসটিআইকে যত শীঘ্র সম্ভব একটি বিশ্বমানের প্রত্যয়নকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা জরুরী। এর প্রত্যয়নপত্র যেন পণ্য ও সেবা রফতানিতে বিনাদ্বিধায় সকল রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করে সে ব্যবস্থা করা যেতেই পারে। বাংলাদেশ যদি ২০২১ সালে একটি উচ্চ মধ্যম মানবসম্পদ সূচকে তথা মধ্যম আয়ের দেশে টেকসইভাবে তার ঈপ্সিত গন্তব্যে যেতে চায় তাহলে যে সকল জটিল সমস্যার সমাধান করতে হবে তার একটি অতি দুষ্প্রাপ্য ভূমি ব্যবস্থাপনা। প্রস্তাবিত অটোমেশন এবং কেনাবেচার বদলে লিজ প্রথা ভেবে-চিন্তে প্রবর্তন করাই হয়তোবা সবচেয়ে ভাল সমাধান হতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, দেশে এখনও যে পরিমাণ দরিদ্র এবং বেকার মানুষ রয়েছেন তাতে যে কোন উন্নয়ন পথ পরিক্রমায় শিল্প স্থাপনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে আনতে হবে। বড় বড় শিল্প-কলকারখানা বার্ষিক সামষ্টিক আয়ের প্রবৃদ্ধিকে দ্রুততর করবে এবং উপযুক্ত কৌশল গ্রহণ করা হলে পশ্চাদমুখী সংযোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তবে গ্রামবাংলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে অতিক্ষুদ্র (গরপৎড়), ক্ষুদ্র (ঝসধষষ), মাঝারি (গবফরঁস) উদ্যোগ (ঊহঃবৎঢ়ৎরংব) গঝগঊ। স্থানীয় কাঁচামাল, স্বল্প মূলধন, অত্যন্ত সরল প্রযুক্তি, আমদানি খরচ তেমন নেই, স্বল্পকালীন প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ এমএসএমই উদ্যোগে কৃষিজাত পণ্যের শিল্প প্রক্রিয়াজাত করা হলে বিপুল কর্মসংস্থান হবে। স্থানীয় যুবক ও যুব মহিলারা বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করে এ সকল উদ্যোগ চালাবে। আয়-রোজগার মাধ্যমে পরিবারের দারিদ্র্য দূর হবে। বৃহত্তর ও মজবুত হবে টেকসই মানব উন্নয়নের ভিত্তি। এ সকল উদ্যোগে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার হবে। দেয়া যেতে পারে প্রণোদনামূলক অত্যন্ত সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদের ঋণ। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনকিউবেটর স্থাপন করা যেতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে কর্মসংস্থানের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসে ক্ষুদ্র ও মধ্যম সাইজের শিল্প থেকে। ২০২১ সালের আগেই কয়েকটি বিষয়ে অগ্রগতি সাধন করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুসারে বাংলাকে জাতিসংঘের একটি অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কূটনৈতিকভাবে জোরদার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নগরায়নের সমস্যা এবং ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক জট খুলতে হলে সকল কাজের তদারক করার কর্তৃত্বকারী দ্য সিটি গবর্নমেন্ট স্থাপন করার কোন বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে মহানগরে আঞ্চলিক স্কুলে ভর্তি, স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় বাসে যাতায়াত বাধ্যতামূলক করা, নমনীয়ভাবে ফ্লেক্সিবল অফিস সময় নির্ধারণ করা, কয়েকটি এলাকাকে (যেমন মতিঝিল) যানমুক্ত করা, কয়েকটি রাস্তাকে একমুখী করা, বাঁয়ের লেনের গাড়িকে বাঁয়ে মোড় দিতে বাধ্য করা, মেয়র প্রস্তাবিত পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় বাস-মিনিবাসের বদলে ৩০০০ বৃহৎ পরিসর নতুন বাস রাস্তায় আনতে ফিসক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করা, রাজধানীর প্রবেশপথে টোল মেশিন বসিয়ে টোল আদায় করা এবং গাজীপুরে ঢাকার উপশহর নির্মাণ ও দ্রুত সার্কুলার রেল যোগাযোগ স্থাপন করা জরুরী। তবেই বর্তমান সরকারের ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলসহ বিপুল কর্মকা- শতভাগ সাফল্য এনে দেবে। চলবে... লেখক : সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
×