ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১০০ অর্থনৈতিক জোনে এক কোটি কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

১০০ অর্থনৈতিক জোনে এক কোটি কর্মসংস্থান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ১৫ বছরে দেশে এক শ’ অর্থনৈতিক জোনে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। আর এসব জোন থেকে বছরে অতিরিক্ত আরও ৪ হাজার কোটি ডলার রফতানি আয়ের ব্যবস্থা হবে। বুধবার রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথরিটি আয়োজিত (বেজা) ‘বিনিয়োগ আকর্ষণ বিষয়ক রোডশো’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানানো হয়েছে। ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়ন’ শীর্ষক এ রোডশো অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়- ১০০ অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৫৯টি জোনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারী খাতের ৪টি এবং বিদেশী ৫টি অর্থনৈতিক জোন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, আগামী ১৫ বছরে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেশে এক শ’টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে ১০টি অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়ন কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি একযোগে এ ১০ অর্থনৈতিক জোনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তিনি আরও জানান, অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৪টি লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে আরও ২টি অর্থনৈতিক জোনকে লাইসেন্স প্রদান করা হবে। এছাড়া আরও সাতটি অর্থনৈতিক জোনকে লাইসেন্স প্রদানের কার্যক্রম চলছে। দুর্বল অবকাঠামো এবং জমি অধিগ্রহণকেই অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করা হয় রোডশো অনুষ্ঠানে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠায় প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে জ্বালানি সঙ্কট। তবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। তবে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠায় সফল হতে হলে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবন চৌধুরী বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণই অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার প্রধান চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। ফেনী ও মীরসরাই চরাঞ্চলে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি পাওয়া গেছে। সেখানেই অন্তত ৪০-৫০টির মতো অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।’ গ্যাস সঙ্কট প্রসঙ্গে পবন চৌধুরী বলেন, ‘সরকার তিনটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থনৈতিক জোনগুলোর সঙ্গে এই টার্মিনালগুলোর সংযোগ থাকবে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে তিনি উল্লেখ করে বলেন, এদিকে সরকারের আরও মনোযোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, অর্থনৈতিক জোনগুলোতে বহুমুখী বিনিয়োগের ব্যবস্থা থাকবে। এগুলো হবে বিনিয়োগভিত্তিক অর্থনৈতিক জোন। প্রতিটি জোনে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্লট সংরক্ষিত থাকবে। একটি জোন হবে তৈরি পোশাকের জন্য। অর্থসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো বিনিয়োগের জন্য অনুকূল অবস্থায় আছে। এত ভাল সূচকের মধ্যেও আশানুরূপ বিনিয়োগ দেশে হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার চাচ্ছে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতে। এজন্য মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে। আর মাথাপিছু আয় বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ইউটিলিটি সুবিধা বাড়াতে হবে। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বাজারও ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশের রয়েছে সম্ভাবনাময় আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক বাজার। এসব বাজারে বাংলাদেশী পণ্য শূন্য শুল্কে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার কারণে উন্নত দেশগুলোতেও বাংলাদেশী পণ্যের শূন্য শুল্ক সুবিধায় প্রবেশাধিকার রয়েছে। এসকল সুবিধা বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিরাট সুযোগ তৈরি করেছে। জাপানের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. সুচি কোবিয়াশি বলেন, ১০০টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা সহজ কাজ নয়। এটি একটি কঠিন কাজ। কারণ প্রতিটি অর্থনৈতিক জোনে শিল্প স্থাপনের জন্য সব সুবিধা থাকতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার পথে দুর্বল অবকাঠামোসহ বেশকিছু অন্তরায় রয়েছে। এগুলো দূর করার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। তবে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সফল হবে। পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে মানুষ আশাবাদী। এ আশাবাদের কারণ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এক শ’ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা এই চেষ্টারই একটি উদাহরণ। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ও কৃষিসহায়ক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া পুঁজিঘন এবং শ্রমঘন শিল্পেও বাংলাদেশ সফল হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা বিনিয়োগ বাস্তবায়নে গতির সঞ্চার করবে। অনুষ্ঠানে বেসরকারী খাতে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন অবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মইনুদ্দিন মোমেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যে আগ্রহ তাতে ১০ বছরেই দেশে ১০০ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিজিএমইএ চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।
×