ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৮ মে ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ দেখতে ভদ্রলোক। পরিপাটি করে আচড়ানো চুল। শিক্ষাদীক্ষাও কম হওয়ার কথা নয়। ফুটপাথ ধরে হাঁটছেন। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে গেলেন। সামান্য ঘুরে বংশদ- হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন ফুটপাথের উপর! মুহূর্তেই ভেসে গেল ফুটপাথ। হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে রাস্তা পার হলেন এক নারী। সঙ্গে থাকা শিশুটিও লজ্জায় যেন কুকড়ে গেল। কিন্তু অসভ্যতার পুরোটা দেখিয়েও পুরুষটি নির্বিকার। তার মূত্র বিসর্জন শেষ হতে না হতেই আরেকজন পাশের শুকনো জায়গাটিতে এসে দাঁড়ালেন। গত মঙ্গলবার রূপসী বাংলা হোটেলের বিপরীতে একটি ফুটপাথে দেখা গেল এ দৃশ্য। দিন শেষে জায়গাটি পরিণত হলো গণশৌচাগারে। না, শুধু একটি জায়গায় নয়। মোটামুটি সারা ঢাকাতেই এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যায়। প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে লজ্জার মাথা চিবিয়ে খাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ। কা-জ্ঞানহীন এমন পুরুষের সংখ্যা, ছেলে ছোকড়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেড়েই চলেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মূত্র ত্যাগের এই অশ্লীল আচরণের কাছে হার মানছে রাজধানীর অনেক সৌন্দর্য। যেন রুচির মড়ক লেগেছে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহরে। কেউ অপকর্মটি করছেন। কেউ সহ্য করছেন। এভাবে বিচ্ছিরি এই অভ্যাস মহামারির রূপ নিচ্ছিল। বিভিন্ন সময় এই অপকর্ম বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। তবে অতি সম্প্রতি গ্রহণ করা একটি সরকারী উদ্যোগ আশ্চর্য ফল এনে দিয়েছে। যত্রতত্র মূত্রত্যাগের বদভ্যাস ফেরাতে অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে বাংলার স্থলে সাহায্য নেয়া হয়েছে আরবী ভাষার। যেসব জায়গায় জল বিয়োগ না করার অনুরোধ আগে বাংলায় লিখে করা হতো, একই কথা লেখা হচ্ছে আরবীতে। ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’ কথাটি বাংলায় না লিখে আরবী ভাষায় লেখা হচ্ছে ‘হুনা মামনুউত্তাবুল’। ধর্মের প্রতি সহজাত আনুগত্যের কারণেই আরবী বিশেষ প্রাধান্য পেয়ে আসছে বাংলাদেশে। সে চিন্তা থেকেই আরবীতে লেখা। এবং সেটি দ্রুত কাজে আসছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তৈরি একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখে অনেকেরই চোখ ছানাবড়া এখন। তাতে দেখা যায়, আরবী অক্ষর চোখে পড়তেই অনেকে মূত্রত্যাগের প্রস্তুতি নিয়েও গুটিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে। সেখানে আর মূত্র ত্যাগ করছেন না। খেয়াল না করে কেউ বসে পড়লেও, আরবী লেখা দেখামাত্র লাফ দিয়ে সরে যাচ্ছেন। অনুতপ্ত হয়ে দেয়ালে হাত দিয়ে সালাম করতেও দেখা যায় কোন কোন ব্যক্তিকে। রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে প্রামাণ্যচিত্রের বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে। পান্থপথ ও কাওরান বাজারের দুটি স্পটে গিয়ে দেখা যায়, স্থান দুটি আর সব দিনের চেহারায় নেই। কিছুদিন আগেও দেয়াল সামনে রেখে শত শত পথচারীকে মূত্রত্যাগ করতে দেখা যেত। অথচ বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টা সেসব জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে তেমন দৃশ্য দেখা যায়নি। দু’একজন প্রস্তুতি নিতে নিতেই দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন ভরকে গিয়েছেন। তার পর আবারও ভদ্রলোকের মতোই হেঁটে চলে গেছেন। এমন দৃশ্য দেখে আশাবাদী হওয়া যায় বৈকি! উদ্যোগ সম্পর্কে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, আরবিতে লেখায় মানুষের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপারটা কাজ করবে। আমরা আশা করছি, এর ফলে বাজে প্রবণতাটা কমে আসবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় শৌচাগারও থাকা চাই। তার কী হবে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা মসজিদের নগরী। এ শহরে মসজিদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। আরবি লেখার সঙ্গে ওই স্থান থেকে মসজিদ এবং পাবলিক টয়লেটের দূরত্ব কত, সেটিও আরবিতে লিখে দেয়া হচ্ছে। নির্দেশনা অনুসরণ খুব সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এবার রবীন্দ্রজয়ন্তীর উৎসব আনুষ্ঠানিকতার কথা। আজ ২৫ বৈশাখ শুক্রবার। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় এখন চলছে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান। কবি সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে চলছে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব। মঙ্গলবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ‘হও মৃত্যুতোরণ উত্তীর্ণ/ যাক, যাক ভেঙে যাক যাহা জীর্ণ’ সেøাগানে বৃহস্পতিবারও মুখরিত ছিল মিলনায়তন। গানে গানে কবিগুরুকে জন্মদিনের শ্রদ্ধা ভালবাসা জানিয়েছেন শিল্পীরা। আজ রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনও থাকবে বিশেষ পরিবেশনা। আগামীকাল শনিবার শেষ হবে শিল্পী সংস্থার কবিগুরু স্মরণ। আজ রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজনে থাকবে ছায়ানটও। এখানে আয়োজন করা হবে দুইদিনের রবীন্দ্র উৎসব। সন্ধ্যা ৬টায় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে উৎসবের উদ্বোধন করবেন অধ্যাপক সোমেন বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে দৃষ্টান্তসহ বক্তৃতা করবেন তিনি। থাকবে অতিথি এবং ছায়ানটের শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি। পাঠের পাশাপাশি থাকবে সুরের ধারার রবীন্দ্র-নাটকের গান। দ্বিতীয় দিন শনিবারও অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। এদিন পরিবেশিত হবে রবীন্দ্রাথের গান থেকে কবিতা, কবিতা থেকে গান নিয়ে সন্জীদা খাতুনের গ্রন্থনা ‘রূপে রূপে অপরূপ’। থাকবে সুরতীর্থ-এর মূল গান ও তা থেকে ভাঙা রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপস্থাপন, নৃত্যদল জাগো আর্ট সেন্টার ও ভাবনার পরিবেশনা। পাশাপাশি থাকবে অতিথি এবং ছায়ানট-এর শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি ও পাঠ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে এবারও অনুষ্ঠিত হবে রবীন্দ্রমেলা। কার্যালয়ের সামনে খোলা মঞ্চে থাকবে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ১০টায়। থাকবে রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য, শিশুনৃত্য, রবীন্দ্র কবিতা থেকে আবৃত্তি, রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে পাঠ, রবীন্দ্র বিষয়ক ছবি আঁকাসহ নানা আয়োজন। আয়োজকরা জানান, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ও ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে মেলায়। মেলায় আরও থাকবে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫টি স্টল। মেলায় রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, বরেণ্য শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিকরা উপস্থিত থাকবেন। রবীন্দ্রমেলায় এবার সম্মাননা জানানো হবে নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। এভাবে গোটা ঢাকাতেই থাকবে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা।
×