ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

উলিপুরে স্বল্পমেয়াদি আউশ চাষে স্বপ্ন বুনছে কৃষকেরা

‎জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, উলিপুর, কুড়িগ্রাম 

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৭ আগস্ট ২০২৫

উলিপুরে স্বল্পমেয়াদি আউশ চাষে স্বপ্ন বুনছে কৃষকেরা

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

কুড়িগ্রামের উলিপুরে স্বল্পমেয়াদি সেচসাশ্রয়ী আউশ ধান চাষ করে ভালো ফলন হওয়ায় খুশি মাস্টার জাফর সাদিক নামের এক কৃষক। বোরো ধান কাটার পর এবং আমন ধান লাগানোর আগে অল্প সময়ের মধ্যে আউশ ধান চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও আউশ ধান কাটার পর জমিতে আমনের ফসলও করা যাবে যা কৃষকদের বাড়তি আয় এনে দেয়।

‎উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আউশ ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নের ৫'শ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে আউশ ধানের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। তারা জানান, আগে জমিতে বছরে দুইবার বোরো ও আমন ধানের চাষ হতো। এর মধ্যে ওই ধানি জমিতে অন্য ফসল চাষ করার সুযোগ ছিল না। ফলে বেকার হয়ে পড়তেন কৃষি শ্রমিকরা। এতে চাষি ও কৃষি শ্রমিকরা অর্থ সংকটে দিন কাটাতেন। আজ সেই অভাব দূর করে দিয়েছে হাইব্রিড জাতের আউশ ধান।

‎সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার বাকরের হাট পূর্ব নাওডাঙ্গা এলাকার কৃষক মাস্টার আবু জাফর সাদিক মাস্টার সীডের আওতায় আউশ ব্রি-৯৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। গাছে ধান শিষ সোনালি রং ধারণ করেছে। আর মাত্র ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে নেওয়ার উপযোগী হবে। তাই ক্ষেত দেখে কৃষক আবু জাফর সাদিকের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটছে। যে জমিতে বছরে দুইবার ধান চাষ করতেন। এক ফসল বিক্রি করে আরেক ফসলের খরচ জোগান দিতে হতো। বন্যা, পোকামাকড় ও অনাবৃষ্টির কারণে প্রতিবছর আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে উৎপাদন কম হতো। আবার কোনো কোনো বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় ফসল তো দূরের কথা আমন ক্ষেতের খড়-বিচালিও তিনি আনতে পারতেন না। তাতে আবাদের খরচই উঠত না। কিন্তু এ বছর তিনি এক একর জমিতে ব্রি-ধান ৯৮ জাতের আউশ ধান লাগিয়েছেন। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এভাবেই তিনি প্রতি বছর আউশ ধানের চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।

‎কৃষক জাফর সাদিক বলেন, এবছর বোরোধান কাটা শেষ হলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়ে এত একর জমিতে চাষ করেছেন সেচ সাশ্রয়ী আউশ ধান। এতে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ঘরে ধান উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে প্রায় ১২ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে প্রায় ২৬ হাজার টাকা। জমিতে ধানের আশা করছেন প্রায় ৬০ মণের। বর্তমান ধানের বাজার মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২'শ টাকা। তিনি ধান থেকে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা ও খড়-বিচালি বিক্রি করে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রির আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, আগামী বছর ৩ থেকে ৪ একর জমিতে আউশ ধানের চাষ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



‎এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আউশ চাষি জাহাঙ্গীর আলম, আহমেদ আলী ও সিদ্দিক মিয়া সহ আরও অনেকে বলেন, স্বল্পমেয়াদি সেচ সাশ্রয়ী আউশ ধানের চাষ একটি লাভজনক ফসল। যা চাষাবাদ করতে খরচ কম লাগে, দ্রুত পেকে যায়, কোন সেচ লাগে না স্বল্প সময়ে ঘরে উঠিয়ে নেয়া যায়। ফলে কৃষকেরা আউশ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। 

‎উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, সেচ সাশ্রয়ী আউশ ধান চাষ করলে ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। আমনের জাতগুলোর তুলনায় ৬০ থেকে ৭০ দিন আগে এ ধান পেকে যায়। ফলে বাকি সময় চাষিরা অন্য ফসল চাষ করে লাভবান হতে পারেন। তিনি আরো বলেন, আউশ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৫'শ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। অল্প সময়ে কম খরচে ফলনে ও দামে ভালো থাকায় এ জাতের ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান তিনি।

মিরাজ খান

×