ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

নিষিদ্ধ যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়ক

তৌহিদ হোসেন সরকার, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২৯ জুলাই ২০২৫

নিষিদ্ধ যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়ক

ছবি: জনকণ্ঠ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে দিনে-রাতে ছুটে চলে লাখো যানবাহন। কাগজে-কলমে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত মিশুক ও সিএনজি অটোরিকশা এসব মহাসড়কে নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে সড়কের প্রতিটি মোড়ে দেখা মেলে এসব যানবাহনের। দাপটের সঙ্গে চলে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়েই—কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই।

কুমিল্লার ময়নামতি, চান্দিনা, দাউদকান্দি, চৌদ্দগ্রামসহ একাধিক স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন হাজারো ব্যাটারিচালিত ও সিএনজি থ্রি-হুইলার মহাসড়কে চলাচল করছে। স্থানীয় এক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“আমরা তো বন্দি হয়ে গেছি। বড় গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে চলি, জানি না কখন আর ফিরবো। কেউ আমাদের কথা শোনে না।”

তার দাবি, মহাসড়কের পাশে আলাদা সার্ভিস লেন থাকলে হয়তো তারা নিরাপদে চলতে পারতেন। “সরকার সার্ভিস লেন করুক, তবেই হয়তো এই মৃত্যুকূপ থেকে বের হতে পারবো”—বলেন তিনি,
২০১৫ সালের একটি গেজেটে জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার মিলিয়ে একাধিকবার অভিযান হলেও, তা ছিল স্থায়ী পরিবর্তনের বদলে ‘দৃশ্যমান শোডাউন’ মাত্র।

চান্দিনা হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,

“চাপ আসে বিভিন্ন দিক থেকে। মাঝেমধ্যে ধরপাকড় করি, কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। স্থানীয়ভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।”

দুর্ঘটনা, ক্ষয়ক্ষতি আর মৃত্যুর মিছিল

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার এক-তৃতীয়াংশই ঘটেছে ধীরগতির তিন চাকার যানবাহনের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুতগতির ট্রাক, বাসের সঙ্গে এসব ছোট যানবাহনের গতি সামঞ্জস্যহীনতা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সড়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রতিটি জাতীয় মহাসড়কের পাশে বাধ্যতামূলক সার্ভিস লেন থাকতে হবে। এতে ধীরগতির যানবাহন নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এবং প্রধান লেন থাকবে দুর্ঘটনামুক্ত।

একইসাথে স্থানীয় চালকদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা জীবিকার জন্য প্রাণ হারানোর ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে নামতে বাধ্য না হয়।
একজন যাত্রী বলেন,

 “আমরা প্রতিদিনই দেখি মিশুক উল্টে যাচ্ছে, কখনো বাসের নিচে পিষ্ট হচ্ছে। অথচ কেউ কিছু করে না। এটা কি দেখার কেউ নেই?

সাব্বির

×