ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

ফেটে চৌচির ফসলের মাঠ, আষাঢ়েও বৃষ্টির প্রতীক্ষায় ফুলবাড়ীর কৃষকরা

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ৭ জুলাই ২০২৫

ফেটে চৌচির ফসলের মাঠ, আষাঢ়েও বৃষ্টির প্রতীক্ষায় ফুলবাড়ীর কৃষকরা

ছবি: সংগৃহীত

ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে এখন বর্ষাকাল। বর্ষা মানে আকাশে মেঘের ঘনঘটা, আর রাত দিন ঝমঝম বৃষ্টি। আকাশে বিজলির চমক, বজ্রপাতের গগনবিদারী শব্দ। চারপাশে থৈথৈ জল। খালবিলে বৃষ্টির জলে হাঁসের জলকেলি, ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাক। কিন্তু কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এবারে নেই বর্ষার সেই চিরচেনা রূপ। দেখতে দেখতে শেষ হতে চলেছে আষাঢ় মাস, অথচ দেখা নেই বৃষ্টির। অনাবৃষ্টির বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এ অঞ্চলের কৃষিতে। আষাঢ়ে বৃষ্টির প্রতিক্ষায় আছেন কৃষকরা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুকিয়ে যাচ্ছে নদী-নালা, খালবিলের পানি। অনাবৃষ্টিতে ফেটে চৌচির ফসলের মাঠ। এদিকে আমন আবাদের মৌসুম চলছে। অথচ এখনও চাষই দেওয়া হয়নি জমি। বৃষ্টির অভাবে আমনের বীজতলায় বিবর্ণ হচ্ছে ধানের কচি চারা। বীজতলা বাঁচাতে দিতে হচ্ছে সেচ। আষাঢ় মাসে আমন চাষের জমিতে গিয়ে কৃষকরা বারবার তাকাচ্ছেন আকাশ পানে। চাতকের মতো প্রতীক্ষা করছেন একটা ভারি বৃষ্টির। যে বৃষ্টিতে মিটবে প্রকৃতির তৃষ্ণা, সতেজ হবে চাষের জমি।

উপজেলার শাহ বাজার এলাকার কৃষক ছাদেকুর রহমান জানান, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে আমন আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সেজন্য বীজতলাতে চারাও তৈরি করছেন। কিন্তু অনাবৃষ্টি কারণে তার বীজতলার চারা হলুদ হয়ে গেছে। বীজতলা বাঁচাতে দু-তিন দিন পরপর সেচ দিতে হচ্ছে। আষাঢ় মাসে এমন প্রকৃতি তিনি আগে দেখেননি বলেও জানান।

ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করবেন। প্রতিবছর বৃষ্টির পানিতে তিনি আমনের আবাদ করেন। এবারও সেই আশাতেই আছেন। কিন্তু এবারে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ভিন্ন। আষাঢ় মাসের প্রায় শেষ। জমিতে একফোটা পানিও নেই। এদিকে বীজতলার চারার রোপনের বয়স হচ্ছে। অথচ তিনি এখনও জমি চাষই করতে পারেননি। বৃষ্টি না হলে আমনের আবাদ কীভাবে করবেন এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তার কপালে।

শাহ বাজার এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী জানান, তিনি প্রায় সাত একর জমিতে আমন আবাদ করেন। এবারে জ্যৈষ্ঠ মাসের বৃষ্টিতে তার জমিতে পানি জমেছিল। সেই সুবাদে আগেভাগে তিনি কিছু জমিতে চাষ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও তার খুব একটা লাভ হয়নি। আষাঢ়ের খরায় চাষ করা জমি শুকিয়ে গেছে। জমিতে নতুন করে ঘাস গজিয়েছে। এসব জমিতে আবার চাষ দিতে হবে। এছাড়া পানির অভাবে তার আরও কিছু জমিতে এখনও চাষ দিতে পারেননি।

তিনি আরও জানান, বোরো মৌসুমে চেয়ে আমন মৌসুমে ধানের ফলন কিছুটা কম হয়। যদি বৃষ্টির পানিতে আবাদ হয় তাহলে কিছুটা পোষায়। কিন্তু সেচ দিয়ে আবাদ করলে আমনে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই তিনি বৃষ্টির প্রতীক্ষা করছেন।

উপজেলার কাশিপুর, ভাঙ্গামোড়, বড়ভিটা ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক জানান, অনাবৃষ্টিতে আমন আবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টি হলে এতোদিনে তারা জমিতে চাষ দিতেন। জমি চাষ দিতে পারলে জমির ঘাস-আবর্জনা মাটিতে মিশে যেত। মাটি আরও উর্বর হতো। কিন্তু বৃষ্টি তো হচ্ছে না। পানির অভাবে আমন আবাদের জমি চাষের কাজ থমকে আছে। এছাড়া নদনদী ও খালবিল শুকিয়ে যাওয়ায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে চিন্তায় আছেন এমন কথাও জানান তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় এবারে ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমন আবাদে কৃষি প্রণোদনা সহায়তার আওতায় উপজেলার ১ হাজার ৬৫০জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ধান বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। আমন আবাদে চারার চাহিদা পূরণের জন্য ৬৫০ হেক্টর জমির বীজতলায় কৃষকরা চারা উৎপাদন করেছেন। বীজতলার পরিচর্যা ও আমন আবাদের বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাকিব

×