
এক সময় খট খট শব্দে মুখরিত থাকত রুহিতপুরের তাঁতশিল্প এলাকা
এক সময় খট খট শব্দে মুখরিত থাকতো রুহিতপুরের তাতশিল্প এলাকা। এখন অনেকটা অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরের ঐতিহ্যবাহী তাতশিল্প। রুহিতপুরের লুঙ্গির নাম দেশ পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হতো। এখন সেই তাঁত ব্যবসা অনেকটাই বিলিনের পথে। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে তাঁত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুতাসহ সব উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় তাঁতশিল্প এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে ধাবিত হচ্ছে।
এক সময় এ শিল্পের উৎপাদিত লুঙ্গি গামছাসহ নানা পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হতো। তবে এখন সুতাসহ সকল উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য লোকশান দিয়ে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই রুহিতপুরের অধিকাংশ তাঁত মালিক এ ব্যবসা বন্ধ করে বিকল্প ব্যবসা বেছে নিয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, যদি সরকার তাঁত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের এই তাঁতশিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমরা আশা করছি। পনেরো বিশ বছর আগেও রোহিতপুর, উত্তর ও দক্ষিণ রামেরকান্দা, কামার্তা, গোয়ালখালী, নারায়ণপট্টি ও তার আশপাশের এলাকায় প্রায় হাজার খানেকের মতো তাঁত অবশিষ্ট ছিল। যা এক সময় ছিল তিন থেকে চার হাজারের মতো।
প্রতিটি বাড়িতেই ছিল একাধিক তাঁত, রোহিতপুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় বাচ্চাদের ঘুম ভাঙতো তাঁতের খটখট শব্দে। সুতা আর মারের গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতেও। তবে এই গন্ধ তাঁতশিল্পীদের কাছে গন্ধ নয় সুবাস মনে হতো। যা আজ শুধুই কল্পনা।
তাঁত মালিকরা জানান, সুতাসহ উপকরণের মূল্য নির্ধারণ করে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দিলে এ শিল্প সচল করা সম্ভব হবে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি- সুতাসহ উৎপাদানের উপকরণের দাম নির্ধারণ করে আমাদের এ ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহযোগিতা করুন, নতুবা একদিন আমাদের এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাঁত ব্যবসায়ি সুব্রত বলেন, কাপড়ের দামের চেয়ে সুতার দাম বেশি হওয়ায় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। এক থানে ৪ পিছ লুঙ্গি হয়, এতে ব্যয় হয় ৫শ’ টাকা আর বিক্রি হয় ৬শ’ ৩০ টাকা। তাও কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে সুতা আমদানী করে তৈরি করার পর আবারও কাপড় কুমারখালীতে নিয়ে বিক্রি করতে হয়।
এতে শ্রমিকের বেতন, যাতায়াতসহ আনুষাঙ্গিক খরচ পোষাতে পারি না। শুধু বাপ-দাদার ঐতিহ্য রক্ষার্থে শ্রমিক বাদ রেখে আমরা পরিবারের ৫ জন সদস্য শ্রম দেই। ব্যবসা ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে তাঁত ব্যবসায়ি ওকিল বলেন, গত বছর যে কাপড় বুনেছি তা এখনো বিক্রি হয় নি। তাঁতের কাপড় বোনার প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকলেও কাপড় বুনছেন না অনেকেই। যে দুই একটি বাড়িতে কাপড় বুনা হয় তারা বলেছেন, সুতার তীব্র সঙ্কট এবং সুতার দাম বাড়ায় তারাও পড়েছেন সমস্যায়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অন্যদের মতো তাদেরও বন্ধ করে দিতে হবে তাঁতের কাপড় বোনা। তাঁত ব্যবসায়ি মালেক মিয়া বলেন, ছোট বেলা থেকে বাব-দাদাদের কাছ থেকে তাঁতের কাজ শিখেছি?
অন্য কোনো কাজ জানি না তাই এখনও তাতের কাজই করি? তবে সুতার দাম যেভাবে বাড়ছে তাঁত ব্যবসা টিকে থাকা সম্ভব না? গত বছর যে কাপড় বুনেছি তা এখনো বিক্রি হয়নি। তাঁতের কাপড় বোনার প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকলেও কাপড় বুনছেন না অনেকেই। যে দুই একটি বাড়িতে কাপড় বুনা হয় তারা বলেছেন, সুতার তীব্র সঙ্কট এবং সুতার দাম বাড়ায় তারাও পড়েছেন সমস্যায়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অন্যদের মতো তাদেরও বন্ধ করে দিতে হবে তাঁতের কাপড় বোনা।
তাঁত ব্যবসায়ী রুকন বলেন, এক সময় রুহিতপুরের অধিকাংশ ঘরেই তাতের কাপড়, লুঙ্গি, গামছা তৈরি করা হতো। সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেকে তাঁত ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের বাপ-দাদার আমলের ব্যবসা তাঁতের তাই আমরা এখনও তাঁত ব্যবসার সঙ্গেই আছি। এখন গুটি কয়েক ঘরে তাঁত আছে এবং কিছু সংখ্যক লুঙ্গি ও গামছা তৈরি করা হয়। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া বলেন, রুহিতপুরের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের নাম অনেক শুনেছি। তাঁত শিল্প রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।