
ছবি: সংগৃহীত
সালটা ১৯১৫। তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড থমাস ডেভিড গিবসন কারমাইকেল ব্যক্তিগত সফরে এসেছিলেন বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার শেখরনগর গ্রামে। সফরের উদ্দেশ্য ছিল এক ব্যতিক্রমী জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন—“পূর্ণ চন্দ্র দাতব্য চিকিৎসালয়”। জমিদার রায়বাহাদুর শ্রীনাথ রায়ের নিজস্ব ৩৬ শতাংশ জমিতে পিতার নামানুসারে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজও স্থানীয়দের কাছে এক প্রাচীন গৌরবের প্রতীক।
লর্ড কারমাইকেলের শাসনামলে বাংলায় বেশ কিছু দাতব্য হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়। শেখরনগরের পূর্ণ চন্দ্র দাতব্য চিকিৎসালয় তারই একটি অনন্য নিদর্শন, যা সরকারি নয় বরং সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় জমিদারদের অর্থায়নে গড়ে ওঠে। এক শতাব্দী পার করেও চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে এখানে কর্মরত রয়েছেন একজন মেডিকেল কর্মকর্তা, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা এবং একজন ফার্মাসিস্ট। প্রতিদিন গড়ে ১০০-১২০ জন রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসাসেবার মানে সন্তুষ্ট স্থানীয়রা।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা জানান, “আমরা নিয়মিত রোগী দেখি, সেবা দিচ্ছি। মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে এখানে আসে।”
স্থানীয় নারী কল্পনা আক্তার বলেন, “এই চিকিৎসাকেন্দ্র আমাদের ভরসা। নারীরা তো সবসময় দূরে যেতে পারি না। এখানে সেবা পাচ্ছি, এটা বড় স্বস্তির।”
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার টুটুল জানান, কিছু দিন আগেও ভবনের প্রতিটি জানালা-দরজা ভাঙা, দেয়ালে ফাটল, টয়লেট নোংরা, পরিবেশ দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর ছিলো। একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা এবং একজন ফার্মাসিস্ট—তাঁরা সীমিত সম্পদ ও ভাঙাচোরা ভবনের ভেতরে দাঁড়িয়ে চিকিৎসাসেবা চালাতেন । আমরা ইউপি পরিষদ থেকে কয়েকবার মেরামত করানো হয়েছে ভবনটি। এখন আগের চেয়ে ভালো আছে, কিন্তু আরও উন্নয়ন হলে আমরা গর্ব করে বলতে পারি—এই ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের।”
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসাসেবার মান ধরে রাখতে ভবনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে।
পূর্ণ চন্দ্র দাতব্য চিকিৎসালয় এখন শুধু একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়—এটি এক শতবর্ষী ইতিহাস, সমাজসেবার জীবন্ত উদাহরণ এবং বাংলার জমিদারদের জনকল্যাণমূলক ভূমিকার নিদর্শন। অতীতের স্মৃতিকে ধারণ করে আজও এটি সেবা দিয়ে যাচ্ছে—স্থায়িত্বের পথে নতুন ভবিষ্যতের অপেক্ষায়।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনর্নির্মাণ নয়, বরং সংরক্ষণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে তার প্রাচীন মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখাই হবে সময়ের দাবি।
আলীম