
ছবি: জনকন্ঠ
পৃথিবীর আলোয় নয়, কোরআনের আলোয় আলোকিত হচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা। বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের ( লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর,ফেনী) একমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল মাদ্রাসা 'আবদুল গণি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্রেইল হাফিজিয়া ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা'।
২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে ‘আবদুল গণি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্রেইল হাফিজিয়া ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসায়' ব্রেইল পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। তখন থেকেই জেলা এবং জেলার বাহিরে থেকে শিক্ষার্থীরা কুরআন শেখার জন্য ছুটে আসেন এখানে।
বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্বারী আবদুল মোহাইমেন-এর তত্ত্বাবধানে নাজরানা, হাফিজিয়া ও কিতাব শাখায় মোট ২৪ জন ছাত্র জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্র অধ্যয়নরত রয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন হেফজ, ২ জন কিতাব এবং বাকি ১৩ জন নাজেরা শাখায় ব্রেইল পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ ফ্রিতে পড়াশোনা করছে। তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না কোনো খরচ। দৈনিক ১০ কেজি চালসহ প্রায় ৫/৬ হাজার টাকার খাবার লাগে এই মাদ্রাসায়।
প্রথমে ব্রেইল পদ্ধতিতে আরবি, বাংলা ইংরেজি এবং গণিত বর্ণমালা শেখানো হয়। । এতে ডট এর মাধ্যমে হাতের স্পর্শে শেখানো হয়। কয়েকটি ডটের সমন্বয়ে তৈরি হয় একটি বর্ণ। এভাবে আলাদা আলাদা বর্ণে একাধিক ডট থাকে। এভাবেই হাতের স্পর্শে পড়েন পবিত্র কুরআন। পরে শিখানো হয় সুমধুর কোরআন তেলাওয়াত।দৈনিক মুখস্থ করেন কুরআনের আয়াতসমূহ। সে সাথে শিখছে বাংলা ইংরেজি ও গণিত। লিখার জন্য তারা ব্যবহার করে ব্রেইল প্লেট। এই প্লেটের মধ্যে মোটা কাগজ দিয়ে ব্রেইল কলম বা সুইয়ের মাধ্যমে ডট দিয়ে লিখা হয়। সেটি হাতের সাহায্যে স্পর্শ করে উচ্চারণ করে বলেন তারা।
জানা যায়, হাফেজ হওয়ার পর গত দুই বছর ধরে কোরআনের তাফসীর ও হাদিস গ্রন্থসমূহ নিয়ে পড়াশুনা করে এবছর মেশকাত অর্থাৎ ডিগ্রি সমমানের পরীক্ষা সম্পন্ন করছেন এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমাম হাসান ও ইয়াছিন আরাফাত।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা, সুশিক্ষিত হয়ে এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে চান এই ২ কুরআনের হাফেজ। তারা পড়া শেষ করে অন্য আলেমদের মতো কোরআন ও হাদিসের তাফসির পেশ করবেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করবেন। সমাজের বোঝা হয়ে নয়, তারা নিজ যোগ্যতায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চান।
গতবছর চট্টগ্রামে সারা দেশের অন্ধ হাফেজদের নিয়ে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় ১ম হয় এই মাদ্রাসার ছাত্র জাহিদুল ইসলাম। তাছাড়া এ মাদ্রাসা থেকে সাবেক হওয়া অনেক ছাত্র শিক্ষকতা সহ চাকরি করছে বহু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাদ্রাসায়।
শিক্ষক ব্রেইল ক্বারী আবদুল মোহাইমেন বলেন, "২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুরের এই মাদ্রাসায় ব্রেইল পদ্ধতি চালু হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়েও লেখাপড়া করছে। আমাদের মাদ্রাসায় ব্রেইল পদ্ধতিতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কুরআন এবং জেনারেল পড়াশোনা করানো হচ্ছে। জেলার প্রখ্যাত আলেম হারুন আল মাদানীর সভাপতিত্বে ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে মানুষের অনুদানে চলছে এটি।"
Mily