ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

দুর্গন্ধে দম বন্ধ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাজারো শিক্ষার্থী

আপেল মাহমুদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২২ জুন ২০২৫

দুর্গন্ধে দম বন্ধ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাজারো শিক্ষার্থী

পড়াশোনা করতে আসছে তারা, কিন্তু শিক্ষার পরিবেশটাই বিষিয়ে উঠছে দুর্গন্ধ আর ময়লায়।

এমনই এক বাস্তবতা এখন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের খালটি এখন যেন এক বিপজ্জনক ময়লার ভাগাড়। আশপাশের বাজারের ময়লা ও বসতবাড়ির বর্জ্যে প্রতিদিনই খালটি ভরে উঠছে। দুর্গন্ধে টিকে থাকা দায়। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বদলে যেন লড়ছে বেঁচে থাকার পরিবেশের সঙ্গে।

এই খালটির আশপাশেই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রুহিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রুহিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রুহিয়া ডিগ্রি কলেজ।

প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক চলাচল করেন এই পথ দিয়ে। অথচ খালটির বিষয়ে প্রশাসনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই।

রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রক্তিম মাহমুদের মা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রাবেয়া সুলতানা বলেন, “বিগত বছরগুলিতে দেখেছি বর্ষার সময় খালটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সেই পানিতে ভেসে বেড়ায় ময়লা-আবর্জনা। দেখতেও খুব বিশ্রী লাগে। আমাদের বাচ্চারা প্রতিদিন এই দৃশ্য দেখেই বড় হচ্ছে, বিষয়টি খুব কষ্টের।” সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে, বর্ষার আগেই ময়লার স্তুপ সরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানায়, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে নাক চেপে রাখতে হয়। কেউ কেউ মাস্ক পরে এলেও তাতে কোনো সুরাহা হয় না। একজন ছাত্র বলে, “জানালা দিয়ে বাতাস ঢোকে না, গন্ধ ঢোকে।”

শিক্ষকদের অভিযোগ, গ্রীষ্মে দুর্গন্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্ষার সময় খালের পানি সড়কের সমান হয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ছাত্রনেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানে পরিচ্ছন্ন একটা জায়গা, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার স্থান। অথচ এর সামনেই ময়লার স্তুপ! এটা শুধু অবহেলা নয়, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের লজ্জা হওয়া উচিত।”

রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান জানান, ‘শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।” 

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও রুহিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রিপন বলেন, “একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এভাবে ময়লার স্তূপ জমে থাকা খুবই দুঃখজনক। এটি শুধু শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে না, আমাদের সামাজিক চিত্রকেও কলঙ্কিত করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার না করলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”

রুহিয়া থানা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আমিনুল হক বলেন, বিদ্যালয়ের সামনের খালটি একসময় ছিল পরিস্কার, পানি ছিলো স্বচ্ছ। এখন খালজুড়ে পড়ে আছে পলিথিন, পঁচা সবজি, নোংরা বর্জ্য, হোটেলের আবর্জনা। খালটি রূপ নিয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।

স্থানীয় চিকিৎসক আলাল হোসেন, সতর্ক করে বলছেন, খোলা খালে জমে থাকা আবর্জনা থেকে ছড়ায় ডায়রিয়া, টাইফয়েড, চর্মরোগসহ নানা জীবাণুবাহী সংক্রামক রোগ। সেইসঙ্গে, খালের পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা, যা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সমাজসেবক আবদুল মালেক মানিক বলেন, সরকার যখন শিক্ষার মান উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে, তখন এমন পরিবেশে ছাত্রছাত্রীদের পড়তে বাধ্য করা দুর্ভাগ্যজনক। শহরের মতো গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও পরিবেশগত স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে অবহেলা চলতে থাকলে, শুধু শিক্ষার্থী নয়, পুরো রুহিয়া অঞ্চলের মানুষই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

Jahan

×